কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার শিক্ষাঙ্গনে এক অনন্য আলো ছড়িয়ে দিল হরিশপুরা কামাল হোসেন কলেজ। প্রথমবারের মতো কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েই কলেজটি অর্জন করেছে উপজেলার দ্বিতীয় স্থান। নতুন প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সাফল্য নিঃসন্দেহে গৌরবের, অনুপ্রেরণার এবং আবেগঘন এক ইতিহাস। হরিশপুরা কামাল হোসেন কলেজ প্রমাণ করেছে—যদি স্বপ্ন থাকে, সেই স্বপ্নকে লালন করার সৎ মানুষ থাকে, আর থাকে শিক্ষার আলো ছড়ানোর অদম্য ইচ্ছা—তবে নতুন পথও হয়ে ওঠে সম্ভাবনার প্রতীক।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজটি থেকে অংশ নেয় ৩৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩২ জন। পাশের হার ৮৮.৮৯ শতাংশ। পুরো উপজেলায় ১২টি এ+ এর মধ্যে এই কলেজ থেকে পেয়েছে ১ জন। প্রথমবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েই এ সাফল্য যেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক থেকে শুরু করে পুরো এলাকার মানুষের বুকে আনন্দের ঢেউ বইয়ে দিয়েছে।
মাত্র ১০১ শতাংশ জমির ওপর বিস্তৃত মনোরম ক্যাম্পাস, চারপাশজুড়ে সবুজ ঘেরা মাঠ, তার মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে পাঁচতলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন। ২০২৩ সালের ১০ মার্চ কলেজটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য সকল আধুনিক শিক্ষা-সুবিধা।
বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের হরিশপুরা গ্রামের কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও আমেরিকা প্রবাসী কামাল হোসেন পাটোয়ারী স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার আলো ছড়ানোর। সেই স্বপ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় হরিশপুরা কামাল হোসেন কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির দেখবাল দায়িত্বে আছেন তাঁর বড় ভাই, শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব মমিন পাটোয়ারী।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহসিন ফাতিমন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন— "আমাদের কলেজে কেবল বই পড়াই নয়, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, কবিতা আবৃত্তি, স্পোর্টস সপ্তাহসহ নানা সৃজনশীল কার্যক্রমের সুযোগ আছে। আমরা নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে পারি। শিক্ষকরা শুধু ক্লাসেই নয়, জীবনের দিকনির্দেশনা দিতেও পাশে থাকেন। এই কলেজে পড়তে পারা আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়।"
দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "এখানে আধুনিক বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, ভাষা ক্লাব, পাঠাগার, অতিরিক্ত ক্লাস, আর সবচেয়ে বড় কথা—মনোযোগী শিক্ষক। যেভাবে আমাদের যত্ন নিয়ে পড়ানো হয়, তাতে আমি নিশ্চিত যে আমাদের কলেজ একদিন পুরো জেলার শিক্ষার মান বদলে দেবে।"
এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষকদের প্রচেষ্টা যে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে, হরিশপুরা কামাল হোসেন কলেজ সেটি প্রমাণ করে দেখিয়েছে। শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি যে শিক্ষার্থী যে বিষয়ে দুর্বল, তাঁদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিয়েছেন।
এই গ্রামেরই সচেতন নাগরিক জহির হোসেন উৎফুল্ল কণ্ঠে বলেন— "আমরা কোনোদিন ভাবিনি আমাদের গ্রামে এমন মানসম্পন্ন কলেজ হবে। আজ প্রথমবারেই এমন ফল আমাদের গর্বিত করেছে। এটা শুধু শিক্ষার সাফল্য নয়, পুরো গ্রামের উন্নয়ন আর সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। আজ আমাদের সন্তানরা শহরে না গিয়েই মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে।" এইজন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাই আমাদের গর্ব আলহাজ্ব কামাল হোসেন পাটোয়ারী ও আলহাজ্ব মমিন পাটোয়ারীকে।
কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহীম হোসেন বলেন—"আমাদের এই সাফল্য প্রতিষ্ঠাতা কামাল হোসেন পাটোয়ারী, সভাপতি মমিন পাটোয়ারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলিত প্রয়াসের ফল। আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কলেজের নিজস্ব পাঠাগার, নামাজ ঘর, নৈতিকতা শিক্ষা এবং বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ আমাদের আলাদা করে তুলে ধরে।" এই কলেজে রয়েছে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে পড়াশোনার সুবিধা, মাসিক বৃত্তি, বিনামূল্যে ড্রেস, দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস ও বিশেষ সহায়তা। শিক্ষার আলোয় বদলে যাবে বরুড়ার ভবিষ্যৎ—এই বিশ্বাসে উজ্জ্বল আশা জাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হরিশপুরা কামাল হোসেন কলেজ।
মন্তব্য (০)