ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকায় গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনিতে হত্যা এবং মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পোড়ানোর নৃশংস ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নীটওয়্যার বিডি লিমিটেডে কর্মরত শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হীন উদ্দেশ্যে কারখানার ভেতরে দিপুর বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয়, যা একপর্যায়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। উত্তেজিত জনতার চাপের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ দিপু চন্দ্র দাসকে নিরাপত্তা না দিয়ে জনতার হাতে তুলে দেয়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এরপর দিপুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং হত্যার পর তাঁর নিথর মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যা মানবসভ্যতার জন্য চরম লজ্জাজনক ও নৃশংস উদাহরণ।
সমাবেশে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দিপু চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ছড়ানো গুজবের পক্ষে কোনো ধরনের দালিলিক প্রমাণ বা যৌক্তিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা। কারখানার সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়িয়ে বাইরে থেকে লোকজন জড়ো করে একটি ভয়াবহ অপরাধ সংঘটনে উসকানি দিয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, এ ঘটনায় পাইওনিয়ার নীটওয়্যার বিডি লিমিটেডের স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠানের মৌলিক দায়িত্ব হলো তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই দায়িত্ব পালন না করে একজন শ্রমিককে নিশ্চিত মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই অবহেলার দায় কারখানা কর্তৃপক্ষকেও নিতে হবে এবং তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, একটি সভ্য দেশ ও সমাজে এ ধরনের বর্বরতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। হত্যাকাণ্ড ও মরদেহ পোড়ানোর মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।
সমাবেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ময়মনসিংহের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ক্যামেরার দৃশ্যসহ অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাকি অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানান বক্তারা।
সমাবেশে সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ আশিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান, প্রকৌশলী এম এ জিন্নাহ, অঞ্জন সরকার, আবু বকর সিদ্দিক রুমেল, নুর আলী চিশতি, তানজিল হোসেন মুণিম, সৈয়দ আরমান হোসেন ইমন, সজিব আকন্দ, আবু সাইফ মুহম্মদ সাইফুল্লাহ, সাদ্দাম হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও আকাশ সরকার প্রমুখ।
মন্তব্য (০)