ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তাঁর এই ব্যক্তিগত আগ্রহ ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এখন আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসে অধ্যয়ন করছে।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় স্কুলমুখী করতে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ও সামগ্রী বিতরণসহ নানা আয়োজন করছেন। ইউএনও’র এই সক্রিয় ভূমিকা শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সন্তোষের সৃষ্টি করেছে।
গুণগত মান নিশ্চিতকরণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা :
ইউএনও রাসেল ইকবাল আলফাডাঙ্গায় যোগদানের পর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণের চেষ্টা শুরু করেন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও ঝরে পড়ার হার রোধে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন, মা সমাবেশ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। এলাকার সুধীজন, অভিভাবক, শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা ও মনিটরিং :
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউএনও শিক্ষকদের মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে তুলেছেন। এছাড়া তিনি শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। শিক্ষকদের পারদর্শিতা ও সক্ষমতা বাড়াতে উপজেলায় বিভিন্ন সাব-ক্লাস্টারে আয়োজিত পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে তিনি নিয়মিত মনিটরিং শুরু করেছেন। আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে যুগোপযোগী পাঠদানের পরামর্শ দিতে তিনি আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিতির হারও পর্যবেক্ষণ করছেন।
ব্যাপক হারে উপকরণ বিতরণ :
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও রাসেল ইকবাল গত চার মাসে (২১ এপ্রিল থেকে) উপজেলার কমপক্ষে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০০ থেকে ৮০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা ও ক্রীড়া উপকরণ বিতরণ করেছেন। উল্লেখযোগ্য বিতরণের মধ্যে রয়েছে:
মাল্টিমিডিয়া টেলিভিশন (২টি), ল্যাপটপ (৩টি) ও দেয়াল ঘড়ি (৫টি) চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে বিতরণ।
দিগনগনর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে স্কুল ব্যাগ, খাতা-কলম ও পরীক্ষার ফোল্ডার বিতরণ। নদী ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র ও মেধাবী শতাধিক শিক্ষার্থীকে জুতাসহ স্কুল ড্রেস প্রদান। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমপক্ষে ৩০০ শিক্ষার্থীকে খাতা-কলম ও ছাতা বিতরণ। ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও আইসিটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অন্তত ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিন্টার বিতরণ।
প্রশংসা ও ইতিবাচক প্রভাব :
ইউএনও’র এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগগুলো সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। চরখোলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর এই সহযোগিতা ও আন্তরিকতার কারণে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি শিক্ষকদেরও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শমসের উদ্দীন টিটো বলেন, "ইতোপূর্বে কোনো ইউএনওকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখিনি।"
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এই আয়োজন অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং অসহায় ও হতদরিদ্র শিশুরা এখন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসায় উপস্থিতির হারও বাড়ছে।
ইউএনও'র অভিমত :
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল জানান, "একটি জাতিকে উন্নত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, তাই শিক্ষার উপর বিশেষ নজর দিয়েছি আমি। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি সফলভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি এবং শিক্ষার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় তবেই টেকসই উন্নয়ন সাধিত হবে।"
মন্তব্য (০)