
নওগাঁ প্রতিনিধি: উত্তরের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত জেলা নওগাঁ। নওগাঁয় উৎপাদিত খাদ্য পণ্য স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর চালান হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলার মাটিতেও যেন উৎপাদন ও ফসলের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারি খাস জমি, পুকুর, বিল ও জলাশয়ের উপর বহু বছর ধরে অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নানারকম জটিলতা চলে আসছে। জেলার ভূমিহীন ও দরিদ্র মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেছেন বছরে পর বছর।
নওগাঁয় জেলা প্রশাসক হিসেবে মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল দায়িত্ব নেয়ার পর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন এই খাতে। তিনি ভূমি খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ভূমি সংক্রান্ত প্রতিটি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক তদারকি করেন এবং ভূমি সেবাকে জনবান্ধব করার জন্য নবধারা সৃষ্টি করেছেন।
জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়মিত ভূমি সংক্রান্ত গণশুনানী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব গণশুনানীতে সাধারণ মানুষ সরাসরি অভিযোগ ও সমস্যা উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন। জমি বিরোধ ও খাস জমি দখল সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান হয়েছে, ফলে জনগণ হয়রানি ও দীর্ঘ সূত্রিতা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক নিজে উপস্থিত থেকে জনগণের কথা শুনে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ডিসি আব্দুল আউয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হবে। এই নীতির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে নওগাঁ জেলায় শত শত বিঘা খাস জমি দখল মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এই খাতে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের একটি হলো, খাস পুকুরের সামনে সাইনবোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ। সরকারি জলাশয় ও পুকুর দখলমুক্ত করে জনকল্যাণে ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে আব্দুল আউয়াল তাঁর অতীত অভিজ্ঞতা ও নতুন পরিকল্পনায় অভূতপূর্ব সমন্বয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জেলার মান্দা উপজেলাকে তিনি ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি মডেল উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রতিটি ভূমি অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বারবার উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সরকারি কৌসুলিদের সাথে নিয়মিত রাজস্ব সভায় মতবিনিময় ও তদারকির মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের গতি অনেকাংশে ত্বরান্বিত করেছেন। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য তিনি গণশুনানীকে দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর এই বিশাল কর্মযজ্ঞে প্রাণান্ত সারথি হয়েছেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা। তাঁদের রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জেলার সেবা প্রত্যাশী ও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। মানুষ তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার শালুকা গ্রামের দরিদ্র নাজির উদ্দিন। পেশায় মৎস্যজীবী হলেও এখন চলেন দিন মজুর হিসেবে শ্রম বিক্রি করে। তিনি বলেন, বাড়ির পাশেই সরকারি খাস জলাশয় ছিলো। অথচ কোন দিন জেলেরা জাল ফেলতে পারেনি। এমনকি জলাশয়ের পানি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। প্রভাবশালীরা দখলভোগ করেছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেই জলাশয়টি এখন অবৈধ দখলমুক্ত। স্থানীয় বসবাসকারী দরিদ্র পরিবারগুলোকে লীজ প্রদানের মাধ্যমে ২০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলার ১১টি উপজেলার চিত্র একইরকম। সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র সমাজে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির শত-শত মানুষ ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছেন। খাস জমি, পুকুর, দীঘি, বিল ও জলাশয় কাজে লাগিয়ে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। শুধু কর্মসংস্থানই নয়; ভূমি ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি এক উদ্যোগেই খাস জমি উদ্ধার ও রাজস্ব আয়ের দিক থেকে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে নওগাঁ জেলা। মাত্র এক বছরে সাধারণ দাবীর বিপরীতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ২২৩ টাকা যা ১১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সংস্থার দাবীর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ২১ হাজার ৬৫৮ টাকা যা ৬৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এক বছর আগেই যা ছিলো যথাক্রমে মাত্র ৮৫ দশমিক ৭৭ ও ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এছাড়া খাস জমি উদ্ধার হয়েছে ১.৮৭ একর এবং ১১৮৭ টি পুকুর ও জলাশয় অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রকাশ্যে আনতে পুকুর পাড়ে সরকারী খাস জমি চিহ্নিত করণ (২৪ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি) স্থায়ী সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এই পুকুর/জলাশয়ের মালিক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক, নওগাঁ। একইসাথে সাইনবোর্ডে মৌজার নাম, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমান ও জমির শ্রেনী স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের ৩টি কাজের মধ্যে একটি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসি, যা রুটিন ও প্রমাপ মোতাবেক আমরা সচরাচর বাস্তবায়ন করি। জেলা প্রশাসকের দৈনন্দিন কাজ সমন্বয় সাধন করা যা একেবারে ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যম, সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণি ও পেশাজীবী মানুষের সাথে। কিন্তু কালেক্টর হিসেবে সমাজের অবহেলিত, সাধারণ, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা যারা সহায় সম্বলহীন, যাদের ভূমি বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান নেই কিংবা যাদের আচরণে, চলনে, বলনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি সেইসব মানুষকে সরাসরি সেবা দেয়া যায়। আমি নওগাঁ জেলার কর্মক্ষেত্রে তাই এই বিষয়টাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছি। হয়তোবা সকল কাজ সাবলীলভাবে শেষ হয় নাই। হয়তো সকল অফিস দূর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হয় নাই। কিন্তু আমার বিশ্বাস আমি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছি।’
মন্তব্য (০)