
নিউজ ডেস্কঃ কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলি হামলার পর আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) যৌথভাবে জরুরি সম্মেলন করেছে।
এ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা ঘটনাটিকে ‘কাপুরুষোচিত আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে কাতারের প্রতি পূর্ণ সংহতি ঘোষণা করেছেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় একটি আবাসিক এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় কাতারি নাগরিকসহ কয়েকজন নিহত হন। সেখানে ফিলিস্তিনি হামাসের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছিলেন। হামলায় কূটনৈতিক আবাসন, বিদ্যালয়, শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র ও অন্যান্য স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কাতারের সরকারি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে আরব ও ইসলামি নেতারা হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আগ্রাসন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন, ইসরাইলের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের নাজুক পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করছে।
সম্মেলনে কাতারের মধ্যস্থতাকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও গাজায় রক্তপাত বন্ধে দোহা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই কাতারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ইসরাইল শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং গোটা আরব-ইসলামি বিশ্বের বিরুদ্ধে শত্রুতার পরিচয় দিয়েছে।
বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতাকে কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়, বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর উদাসীনতার কারণেই ইসরাইল অব্যাহতভাবে আগ্রাসন চালাতে সাহস পাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে মোড় পরিবর্তন
বিশ্লেষকদের মতে, কাতারে হামলার মাধ্যমে ইসরাইল কৌশলগত ভুল করেছে। এটি কেবল কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন নয়, বরং পুরো অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। আগে যেখানে আরব দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল, সেখানে এখন এই প্রক্রিয়া কার্যত স্থগিত হয়ে গেছে।
বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতার যে আলোচনা চলছিল, দোহা সম্মেলনের পর সেটি ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত’ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
দোহা ঘোষণা: ঐক্যবদ্ধ বার্তা
সম্মেলনের যৌথ ঘোষণা বলছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কেবল নিন্দা নয়, বরং কার্যকর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নকরণ এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
এ সিদ্ধান্তে ইসরাইলের প্রতি ইতিমধ্যে যারা কূটনৈতিক ছাড় দিয়েছিল, তারাও জনমতের চাপে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে কেবল গাজা নয়, বরং পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাচ্ছে।
শেষ কথা
কাতারে হামলার মাধ্যমে ইসরাইল নিজেই নিজের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল করেছে। ফিলিস্তিনি প্রশ্ন আবারও আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে এসেছে। দোহা সম্মেলনের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান স্পষ্ট করেছে— ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নির্ধারণ করবে এখানকার জনগণ ও রাষ্ট্রগুলো, বাইরের শক্তির চাপ নয়।
মন্তব্য (০)