• লাইফস্টাইল

ষোলো আনা

  • লাইফস্টাইল
  • ০৫ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:১২:২০

লাইফস্টাইল ডেস্ক: রাতে দেরী করে ঘুমিয়েছি বলে ভাবলাম সকালে নিশ্চই দেরীতে ঘুম ভাঙবে। কিন্তু না, ৬ টার কিছু আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। সারাদিন মাথা ধরে থাকবে ভেবে আবার একটু ঘুমনোর চেষ্টা করলাম। ঠিক আন্দাজ নেই কিন্তু মনে হয় মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কতক্ষণ বাদেই দেখি একটা অচেনা বাড়িতে এসে পৌঁছেছি। আসার রাস্তাটা কিন্তু দেখিনি। প্রকান্ড এক বাড়ি এবং বেশ পুরনো। বাড়িটিতে বেশ আভিজাতের ছাপ। ঠিক পুরনো বনেদী বাড়িগুলোর মতো। যাই হোক, সদর দরজা খোলা দেখে বেল টেপার প্রয়োজন বোধ করলাম না। অভদ্রের মতো ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ভেতরটাও বেশ। চারিদিকে রুচিশীলতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল। কিছুদূর এগোতেই একটা সিঁড়ি পেলাম। কিছু না ভেবেই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এলাম। ল্যান্ডিং পেরিয়ে একটা লম্বা বারান্দা যাকে করিডোর বলাটাই বেশি মানানসই। আশেপাশে অনেকগুলো দরজা চোখে পড়তে লাগল। তারই একটা বেছে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ঢুকে তো আমি অবাক। দেখলাম আমারই বয়সী অনেকগুলো মেয়ে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ লিখছে, কেউ বই পড়ছে, কেউ বা রঙ করতে করতে আপন মনে গান গাইছে। মনে মনে ভাবলাম, কোনো আর্ট স্কুলে এসে পড়লাম নাকি? ঘরে কয়েকটা টেবিল-চেয়ার ছিল। উপস্থিত মেয়েগুলোর মধ্যে কয়েকজন টেবিলে এবং অধিকাংশই মেঝেতে ম্যাট বিছিয়ে নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছিল। আজব ব্যাপার এই যে, এরা প্রায় প্রত্যেকেই কারো না কারো সাথে গল্প করছিল কিন্তু আমি যে একজন নতুন ব্যাক্তি ঘরে এসে ঢুকেছি সেই ব্যাপারে কেউ কনো উৎসাহই দেখালো না। কেউ একবারটি ঘাড় ঘুরিয়েও দেখল না। যেন আমার উপস্থিতি কেউ টেরই পায়নি। যাই হোক, আমার জন্যে ভালই হল। আমি একটা কোণে একটা খালি টেবিল-চেয়ার পেয়ে সেটা দখল করলাম। কি করবো বুঝতে না পেরে একটা বই পড়া শুরু করলাম (কি বই মনে নেই)। কিছুক্ষণ বাদে বইটা বন্ধ করে রেখে ঘরটার চারিপাশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। কেউ হাসছে, কেউ গাইছে- সব মিলিয়ে আজব এক আবহ। প্রকান্ড ঘরটার এক কোণে হঠাত চোখ আটকে গেল। বোধয় সেই মুহূর্তেই হার্টফেল করত কিন্তু কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তারা যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। এ কি ! এ কি করে সম্ভব?! নিজেকে চিমটি কাটার চেষ্টা করলাম। অনেকগুলো ছোট ছোট বইয়ের র‍্যাকের মাঝামাঝি একটা বড় ইজি চেয়ার। ওতে ওটা কে বসে?! আরে! এ দেখি আমারই গুরু ! সত্যজিৎ রায় ! অনেক রকমের অনুভূতি একসঙ্গে কাজ করছিল। কিন্তু ভয়টাই হচ্ছিল সবচেয়ে বেশি। ব্যাপারটা কী? মরে টরে গেলাম না তো? পাল্‌স ধরে দেখলাম, নাহ বেঁচেই তো আছি। কিন্তু তাহলে... শ্বাস প্রচন্ড ওঠানামা করছিল। এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। এটাকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। আস্তে আস্তে এবং ভয়ে ভয়ে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম। উনি বই পড়াতে নিমগ্ন। আমার পাল্‌স তখন রকেটের বেগে দৌড়চ্ছে। কি করব বুঝতে না পেরে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি এক পর্যায়ে বই থেকে চোখ না উঠিয়েই ভারী গলায় বললেন – “বোসো” একটা মোড়া টেনে নিয়ে বসলাম। আর বুঝতে বাকি রইল না যে কোনোভাবে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে কোনো একটা সময়ে এসে পৌঁছেছি। উনার বয়স দেখেই সেটা আন্দাজ করলাম। কিন্ত এলাম কেমন করে? টাইম মেশিন তো ব্যবহার করিনি। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবেই বা কেন? ফেরত যাব কেমন করে? যাক গে। সেগুলো ভাববার সময় নেই। কি যে বলব বুঝতে পারছিলাম না। কেউ যখন নিজের একমাত্র আইডলের সামনে এসে দাঁড়ায় অতো সহজে কি কথা বলতে পারে? বোকার মতো বলে ফেললাম, “আপনার সাথে একটা ছবি তুলতে পারি?” বলেই ভয় পেয়ে গেলাম। যদি ধমক দেন? বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। আমাকে অবাক করে দিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে হেসে ভয়ংকর সুন্দর উচ্চারণে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “But you don’t have a camera with you.” এবার ভয় খানিকটা কমল। কনফিডেন্স ও গেল বেড়ে। কিন্তু নিজের বোকামোটা বুঝতে পারলাম। এ তো আর সেলফি-যুগ নয় যে হুট করে সেলফি তুলে নেব। পরমুহূর্তেই মনে হলো, উনি যেরকম দূরদর্শী মানুষ, আমার টাইম ট্র্যাভেলের ঘটনাটা আর যেই হোক, উনি বিশ্বাস করবেনই। করতে বাধ্য। কেন, উনি তো নিজেই তো এমন অজস্র ahead of times লেখা ও গল্প লিখেছেন। প্রোফেসর শংকু, অনুকূল, রতনবাবু আর সেই লোকটা – আরো কত কি ! তাই আমি কনফিডেন্স এর সাথেই বললাম, “আমি যদি বলি আমার পকেটেই একটা ছোট্ট ক্যামেরা আছে?” বোধয় তিনি আমার কথায় মজাই পেলেন। চ্যালেঞ্জ এর সুরে বললেন, “দেখাও দেখি তবে।“ পকেট থেকে আমার ফোনটা বার করলাম। কিন্তু আশ্চর্য ! ফোনটা দেখে তিনি একটুও অবাক হলেন না! বললেন উনার ছবি তুলতে। তাই করলাম। কিন্তু যখন ছবিগুলো চেক করলাম, দেখলাম যে অদ্ভুতভাবে উনার চেহারার ওপর একটা ছায়া এসে পড়েছে। তিনি আবার ছবি তোলার অনুমতি দিলেন। এবারে দেখলাম ছবিটা ঝাপসা হয়ে গেছে। এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করেও কোনো ফল হলো না। কোনো না কোনোভাবে ছবিগুলো নষ্ট হচ্ছেই এবং চেহারাটা ঠিকমতো বোঝাই যাচ্ছে না। ছবির আশা ছাড়লাম। “তবে আপনার একটা সাক্ষাৎকার কিন্তু আমাকে নিতেই হবে,” হাত জড়ো করে অনুরোধ করলাম। “বেশ তো,” খুশি হয়েই বললেন তিনি। “আপনি কি বুঝতে পেরেছেন আমি কে?” “নিশ্চই। ফিউচার থেকে এসেছ, তাই তো?” মনে মনে ভীষণ অবাক হলাম। যাই হোক। “আমি যদি বলি আমি আপনার একজন অন্ধ ভক্ত তাহলে অনেক কমই বলা হবে।“ “সে তো বুঝতেই পারছি,” অতি স্বাভাবিক স্বরে বললেন। “আমি কি করে নিজের সময়ে ফেরত যাব জানি না। কখন যাব তাও জানি না। তবে যাবার আগে আপনার হাতের যেকোনো একটা লেখা নিয়ে যেতে চাই।“ “বেশ তো। বোসো। আমি নিয়ে আসছি।“ তিনি উঠে গেলেন কোনো একটা লেখা আনতে। অন্য ঘরে যখন গেলেন আমার তো আর তর সইছিল না। বাবা-মা কে কতক্ষণে যে ঘটনাটা বলব! তারা হয়ত বিশ্বাসই করবেন না। আসলে সত্যজিৎ রায়ের মতো অতো সহজে মনে হয় ব্যাপারটা কেউ-ই বিশ্বাস করতে চাইবে না। পাশের ঘর থেকে উনার হেঁটে আসার শব্দ শুনতে পেলাম। যাক! ষোল কলা পূর্ণ। কিন্তু না। ঘুম ভেঙ্গেই শুনতে পেলাম, “আফা, চাদ্দরডি ভিজামু নে?” ষোল কলা অপূর্ণ। লেখক-সৈয়দা ফারহাত তারান্নুম পেশা: শিক্ষার্থী

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo