রংপুর ব্যুরো : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭২) এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬৫) হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নিহত দম্পতির বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাতে তারাগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকালে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রোববার সকালে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে দম্পতির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত যোগেশ চন্দ্র রায় দীর্ঘদিন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। পরিবারে দুই ছেলে-বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় জয়পুরহাট এবং ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় ঢাকায় পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত। সন্তানরা বাইরে থাকায় দম্পতি গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করতেন।
রোববার সকালে প্রতিবেশীরা দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে সন্দেহে বাড়ির গেট টপকে ভেতরে ঢোকেন।পরে ডাইনিং রুমে যোগেশ চন্দ্র রায়ের এবং রান্নাঘরে তার স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।দু’জনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল।খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,যোগেশ চন্দ্র রায় শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের মানুষ ছিলেন এবং এলাকায় তার সুনাম ছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে প্রায়ই কথাবার্তা বলতেন।প্রতিবেশীদের ধারণা, পরিকল্পিতভাবেই দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে।কেউ কেউ পারিবারিক জমি, বিরোধ অথবা মন্দির সংক্রান্ত কোনো বিষয়কে হত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ভাবছেন। তবে সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
এই হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা একজন মানুষের এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার।তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিহত দম্পতির স্বজনরা শোক ভরা কণ্ঠে বলেন, “যারা এভাবে বাবা–মাকে হত্যা করেছে, তারা মানুষ নয়। আমরা শুধু চাই-যেন দ্রুত হত্যাকারীরা ধরা পড়ে এবং কঠিন শাস্তি পায়।”
মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত জোরদার করেছে। ঘটনাটি এখন তারাগঞ্জসহ পুরো রংপুর জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন,“মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছি এবং জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পুলিশ গভীরভাবে তদন্ত করছে। ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।খুব দ্রুতই হত্যায় জড়িতরা আইনের আওতায় আসবে বলে আমরা আশা করছি।
মন্তব্য (০)