পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর অভিযুক্ত আসামি নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন জানান, ‘প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে প্রাণীকল্যাণ আইন’ ২০১৯ এর ৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি খাতুনকে আসামি করা হয়েছে।’
এদিকে, মামলার পরপরই রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মামলার পর গতরাতে অভিযান চালিয়ে ঈশ্বরদী পৌর সদরে রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশে জনৈক বিদ্যুত এন বাসার চারতলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। যে কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনা অমানবিক। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও মহাপরিচালক স্যারও ফোন করে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে সোমবার (১ ডিসেম্বর) গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বাসা খালি করে অন্যত্র চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে নয়নের স্ত্রী নিশি রহমান মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকতো এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সজিনার গাছের গোড়ায় রেখে আসি। কীভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একটি কোনায় থাকতো টম নামের একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় কান্না আর ছুটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুর টমকে।
পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী জীবন্ত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে বেঁধে রোববার রাতের কোনো এক সময় ফেলে দেন উপজেলা পরিষদের পুকুরে। একদিন পর সোমবার সকালে পাওয়া যায় কুকুর ছানাগুলোর মরদেহ। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটি চাপা দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে বাইরে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। তখন তার ছেলে বলে ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। তুলে খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।
মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন। মঙ্গলবার সারাদিন ছানাগুলোর খোঁজে মা কুকুরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা চত্বর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
মন্তব্য (০)