
খুলনা প্রতিনিধিঃ খুলনার সড়ক এখন শুধু যানজট ও দুর্ঘটনার শঙ্কায়ই ভুগছে না, যোগ হয়েছে নতুন এক দুঃস্বপ্ন—বেওয়ারিস কুকুরের উপদ্রব। লবণচরা থেকে বাদামতলা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পরিধির নগরীতে প্রতিদিনই ঘটছে কুকুরের তাড়া খাওয়ার ঘটনা। রাস্তায় হাঁটতে বের হলেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পথচারীদের মনে আতঙ্ক, আর চালকদের জন্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিনের বেলায়ও হঠাৎ দল বেঁধে রাস্তায় উঠে আসে কুকুর। বিশেষ করে সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার পথে এবং রাতে কর্মজীবীরা বাড়ি ফেরার সময় সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়ছেন। সমাজসেবী, নাগরিক সংগঠন, অভিভাবক ও সাবেক কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে এসব সমস্যার লিখিত অভিযোগ ইতোমধ্যেই পৌঁছেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) কাছে।
সড়কের পাশে যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাসকেই কুকুর উপদ্রবের বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেসিসি। বিশেষ করে ডাস্টবিনের পাশে জমে থাকা আবর্জনা ছিঁড়ে খাবার সংগ্রহ করে সেখানেই দল বেঁধে অবস্থান নেয় কুকুরগুলো। ফলে পুরো নগরীর বিভিন্ন স্পটে কুকুরের বিচরণ বেড়েছে।
কেসিসির প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে— ৪১টি কুকুর রয়েছে সোনাডাঙ্গা ৪১ নম্বর এলাকার আশেপাশে, ৩৬টি কুকুর পিটিআই মোড়ে, ২৮টি কুকুর গল্লামারী মোড়ে, ২৬টি কুকুর নিউমার্কেট এলাকায় নিয়মিত ঘোরাফেরা করছে।
এছাড়া লবণচরা, মোল্লাপাড়া, জিন্নাপাড়া, মাস্টারপাড়া, নিরালা, বয়রা বাজার, ডাকবাংলা মোড়, খুমেক হাসপাতাল চত্বরসহ নগরীর প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বেওয়ারিস কুকুরের দাপট চোখে পড়ছে।
খুলনা নাগরিক সমাজ, গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। নাগরিক সমাজের নেতা মিজানুর রহমান বাবু বলেন—“বেওয়ারিস কুকুর নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে নগরীর জনজীবন ক্রমেই অচল হয়ে পড়বে। এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভায় নাগরিক নেতা মোঃ আয়নুল হক বলেন—“এভাবে চলতে থাকলে শিশু-কিশোর ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। জলাতঙ্কসহ নানান রোগের ভয় সবসময়ই থেকে যাবে।” প্রাণীপ্রেমিক এসএম সোহরাব হোসেন অবশ্য কুকুর নিধনের পরিবর্তে ভ্যাকসিনেশন ও নিয়ন্ত্রিত পুনর্বাসনের দাবি জানান।
অভিযোগ ও নাগরিক চাপের মুখে কেসিসি কর্তৃপক্ষ জলাতঙ্ক প্রতিরোধে ‘মার্চ ডগ ভ্যাকসিনেশন’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর আওতায় নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের প্রায় সাত হাজার কুকুরকে টিকা দেওয়া হবে।
কেসিসির প্রশাসক মোঃ ফিরোজ সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর বাজেট পেশকালে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১৮০ জন কর্মীকে যুক্ত করে সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কেসিসি সূত্র জানিয়েছে, এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য মূলত জলাতঙ্ক প্রতিরোধ এবং পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালেও ছয় হাজার কুকুরকে টিকাদানের আওতায় আনা হয়েছিল।
খুলনার নগরবাসীর কাছে বেওয়ারিস কুকুর এখন বড় এক নাগরিক সমস্যা। প্রতিদিনের পথচলা যে আতঙ্কে ভরে উঠছে, তা কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু ভ্যাকসিনেশন নয়, যত্রতত্র ময়লা ফেলার প্রবণতা বন্ধ, পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি এবং সচেতনতা বাড়ানোই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
মন্তব্য (০)