
নওগাঁ প্রতিনিধি: উত্তরের জেলা নওগাঁ শহরের নিকটবর্তি একটি উপজেলা হচ্ছে রাণীনগর। এক সময় সর্বহারা ও জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে উপজেলাটি দেশজুড়ে রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলো। বর্তমানে উপজেলাটি শান্তির জনপদের পাশাপাশি ধান উৎপাদনে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি ঐতিহাসিক রক্তদহ বিলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ইতিমধ্যই দেশজুড়ে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে রাণীনগর উপজেলাকে।
বর্তমানে উপজেলার সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনা খাতকে ঘিরে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের দিক নির্দেশনা মোতাবেক ও সার্বিক সহযোগিতায় ইতিমধ্যই অনেকগুলো ছোট ছোট উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় ইউএনও রাকিবুল হাসানের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছে উপজেলাবাসী। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পুরো উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে বিনির্মাণ করার ক্ষেত্রে ইউএনও রাকিবুল হাসান যে যুগান্তকারী উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছেন সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়নে আরো কিছু সময় ইউএনওকে পাশে চান উপজেলাবাসী।
গত ছয়মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাকিবুল হাসান দৃশ্যমান অনেক উন্নয়নমূলক কাজ শেষ করেছেন। ইতিমধ্যই উপজেলা পরিষদ প্রশাসনিক ভবনসহ বহুবছরের জরাজীর্ন আবাসিক ভবনগুলোকে আধুনিকায় করা হয়েছে। বহুবছরের জঞ্জাল পরিষদের অভ্যন্তরের পরিত্যক্ত জলাশয় ভরাট করে স্থানটি পুনঃব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিক ভবনটি আধুনিককায়ন করা হয়েছে। পরিষদ চত্বরে পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে যা জলাবদ্ধতা রোধে সহায়ক ভ’মিকা রাখছে। উপজেলা চত্বরে দীর্ঘদিনের পানি সংকট সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অভিমুখে একটি সংযোগ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে যুগান্তকারী অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান। সেই পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাতিরপুল এলাকায় রক্তদহ বিলকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় ও নিরাপদ চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে রতনডারা খালের মাঝখানে একটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ যেমন বাড়বে তেমনি স্থানীয় পর্যটন শিল্পকে উৎসাহিত করবে। ইতিমধ্যই রতনডারা খালের বড় বড় গাছ ও পানির মিলনের দৃশ্য উত্তরবঙ্গের এক বিকল্প রাতারগুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যুব সমাজের ক্রীড়া চর্চা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি আধুনিক ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যা বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় ও আন্তঃউপজেলা পর্যায়ে খেলাধুলার আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। শের-এ বাংলা সরকারি কলেজ মাঠকে সংস্কার করে খেলাবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার গোনা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: শরিফুল ইসলাম খান জানান তিলোত্তমা শহর নওগাঁর সবচেয়ে নিকটবর্তি উপজেলা হিসেবে রাণীনগরে কোনো ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানাও গড়ে ওঠেনি। ভৌত অবকাঠামো খাতে তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়াও নেই। তবে গত বছরের শেষের দিক থেকে ক্রমশ পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলার দিকে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে পর্যটন খাতে বিশাল সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে রক্তদহ বিল এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যে পাখি পল্লী, মৎস্য অভয়ারন্য ও পর্যটন এলাকা বিনির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পর্যটনমুখি যে সকল নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং কচুরিপানা সরিয়ে পুরো রক্তদহ বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার যে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেই উদ্যোগকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই উপজেলায় আরো কিছুদিন অবস্থান করার কোন বিকল্প নেই।
উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান রক্তদহ বিলে যে পাখি পল্লী ও পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে শতাধিক মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এই পর্যটন এলাকাকে ঘিরে বর্তমান ইউএনও আরো অনেক পর্যটকবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যেগুলো বাস্তবায়ন হলে এই এলাকার নাম দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে বর্ষার সময় রক্তদহ বিলে পানির থৈ থৈ ও কুলুকুলু ধ্বনি, পাখির কোলাহল ও প্রকৃতির অপার রূপ দর্শনে পর্যটকদের কাছে সুপরিচিতি লাভ করেছে উপজেলার পাখি পল্লী। পাখি পল্লীতে পাখিদের অবাধ আনাগোনা ও বসবাসের জন্য রোপন করা হচ্ছে পরিবেশ ও পাখিবান্ধব গাছ, ঝুলন্ত একটি সেতু নির্মাণ করাসহ নানা পর্যটকবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যেগুলো সুচারু ভাবে বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণকারী হিসেবে ইউএনও রাকিবুল হাসানের প্রয়োজন খুব বেশি।
উপজেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মুরাদ চৌধুরী সেলিম জানান বর্তমান ইউএনও গত ছয়মাসে বিভিন্ন জনবান্ধব কাজের মাধ্যমে উপজেলাবাসীর হৃদয়ে একজন মানবিক ইউএনও হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি উপজেলার অবহেলিত হাট ও বাজারের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষের উন্নয়ন ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে চলেছেন। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এবং অনেক কাজ চলমানও রেখেছেন। বছরের পর বছর পড়ে থাকা উপজেলার নানা সমস্যাকে তিনি নিজ উদ্যোগে সমাধান করছেন। পুরো উপজেলা প্রশাসনকে এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন যা উপজেলা প্রশাসনের ইতিহাসে বিরল।
আরেক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ জানান উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে হয়রানী ও ভোগান্তি ছাড়াই যে কোন সেবা পাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সংস্কার ও উন্নয়নে নানাবিধ উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরে আসা, বিধবা এবং নির্যাতিত নারীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেলাই মেশিন বিতরণ করা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের চলাচল সহজ করতে বিতরণ করা হয়েছে হুইল চেয়ার। উপজেলায় অবৈধ ভাবে মাটি খননের মতো কাজকে তিনি দিন-রাত অভিযানের মাধ্যমে কঠোর হাতে দমন করেছেন। তিনি প্রতিনিয়তই উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন। এমন কি ছুটির দিনেও তিনি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গিয়ে সমস্যা সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রনি ভ’মিকা পালন করে চলেছেন।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপজেলার ত্রিমোহনী বাজার এলাকার বাসিন্দা প্রবীর কুমার পাল জানান উপজেলার গলার কাটা রাণীনগর রেলগেট প্রশ্বস্তকরণ, নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই আঁকা-বাঁকা আঞ্চলিক সড়কটি প্রশ্বস্তকরণ ও পর্যটকবান্ধব রক্তদহ বিল এলাকাকে নিয়ে ইউএনও সাহেব যে সকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেগুলো সম্পন্ন করতে পারলে রাণীনগর উপজেলা সত্যিই সারা দেশের মধ্যে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে পরিগণিত হবে। ইতিমধ্যই তিনি অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বাস্তবেই কাজ করে দেখাচ্ছেন। উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে বিনির্মাণে এবং উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে ওনার যত পরিকল্পনা সেগুলো বাস্তবায়নে এই উপজেলায় আরো কিছুদিন অবস্থান করা খুবই প্রয়োজন। সব মিলিয়ে উপজেলাবান্ধব ইউএনও সাহেবের সকল পদক্ষেপই প্রশংসনীয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রাকিবুল হাসান বলেন, ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ভরা রাণীনগরকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোসহ নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এ বছর পর্যটন খাতে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কাউকে না কাউকে ভালো কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। তাই তিনিও রাণীনগরকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে বিনির্মাণ করার লক্ষ্যে যোগদানের পর থেকেই অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যই সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। সবগুলো তিনি শেষ করতে পারবেন কি না তা জানেন না। তবে আগামীতে যিনি আসবেন তিনি নিশ্চয় উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে অবশ্যই এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে উদ্যমী হবেন। তিনি সর্বোপরি এই উপজেলার জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন প্রকল্প চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মন্তব্য (০)