রংপুর ব্যুরো: চাকরি পরীক্ষায় অন্যের হয়ে প্রক্সি দিতে এসে রংপুরে এক ব্যাংক কর্মকর্তার পতন ঘটেছে। জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়েও সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রতারণার পথ বেছে নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন তিনি।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুর শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মাহবুবে সোবহানী এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম গোলাম রব্বানী। তিনি জনতা ব্যাংক রংপুর করপোরেট শাখার কর্মকর্তা এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার টিওরমারী গ্রামের বাসিন্দা।তিনি ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী রাহাদুজ্জামান সুজনের (রোল: ২২৮৩৮৪৬) প্রক্সি হিসেবে অংশ নেন বলে আদালতে স্বীকার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম রব্বানী স্বীকার করেছেন যে তিনি পরীক্ষার্থী রাহাদুজ্জামান সুজনের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি করেন। সেই চুক্তির ভিত্তিতেই তিনি নিজে পরীক্ষা দিতে আসেন। তবে প্রবেশপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রে মিল না থাকায় পরীক্ষার শুরুর আগেই কক্ষ পরিদর্শকের সন্দেহ হয়। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে সোপর্দ করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মাহবুবে সোবহানী বলেন,চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়া গুরুতর অপরাধ। সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। গোলাম রব্বানীকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকৃত পরীক্ষার্থী রাহাদুজ্জামান সুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তিনি ভবিষ্যতে খাদ্য অধিদফতরের কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।”
ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, পরীক্ষায় নৈতিকতা ও সততার গুরুত্ব বোঝাতে এমন উদাহরণমূলক শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, যাতে অন্যরা ভবিষ্যতে এমন অপরাধে জড়িত না হয়।
রংপুরের ৪৬টি কেন্দ্রে মোট ৫০ হাজার ৭৭৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন খাদ্য অধিদফতরের উপ-খাদ্য পরিদর্শক (Sub-Inspector of Food) পদে নিয়োগ পরীক্ষায়। দেশব্যাপী একই সময় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা কীভাবে এমন প্রতারণায় জড়াতে পারেন! কেউ কেউ বলেছেন,চাকরি পাওয়ার এই অনৈতিক প্রতিযোগিতা এখন সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে নষ্ট করছে।”
রংপুর অঞ্চলে পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা নিয়োগ কমিটির সদস্যরা তদারকিতে ছিলেন। প্রতিটি কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর, প্রবেশপত্র যাচাই ও আইডি মিলিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা ছিল।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান,নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি বা জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর নজরদারি চালানো হয়েছে।পরীক্ষার আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মোতায়েন করা হয়।আজকের ঘটনাটি আমাদের নজরদারির কার্যকারিতারই প্রমাণ। তিনি আরও বলেন,সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে হলে যোগ্যতা ও সততা সবচেয়ে বড় শর্ত। অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়া শুধু আইনবিরোধী নয়, এটি নৈতিক অধঃপতনেরও প্রতীক।
মন্তব্য (০)