
নিউজ ডেস্কঃ গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধান বা মাস্টারমাইন্ড কেউ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জেরার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি এ কথা বলেন। এদিন বিকাল ৩টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এ ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে অবশিষ্ট জবানবন্দি দেন আসিফ মাহমুদ। পরে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
প্রথমেই তাকে জেরা করেন শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেনের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি।
জেরার একপর্যায়ে আসিফকে তিনি বলেন, আপনাদের আন্দোলনে কোনো মাস্টারমাইন্ড ছিল কি না। জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গত বছরের ৫ জুন কোটাপ্রথা পুনর্বহালের রায়ের পর আমরা ৫৮ জন সমন্বয়ক-সহসমন্বয়ক মিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করি। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের ইন্ধন ছিল না। আন্দোলনে প্রধানও কেউ ছিল না। সমন্বয়কদের সবার মর্যাদা সমান ছিল।’
যোগাযোগের মাধ্যম কি ছিল—আইনজীবীর এমন প্রশ্নে আসিফ মাহমুদ বলেন, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আমরা ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেছি।
তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করেন আইনজীবী অভি। তখন উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘আমিসহ আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।’
এক দফা কর্মসূচির পেছনে বিদেশি কোনো শক্তি বা কারও হাত ছিল কি না—আসামিপক্ষের আইনজীবীর এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন, এক দফা কর্মসূচি ঘোষণার পেছনে কোনো বিদেশি ইন্ধন ছিল না। আমরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া আন্দোলনকারীরাই আন্দোলনের খরচের জন্য ফান্ড তৈরি করেছি।
সাক্ষীর উদ্দেশে আইনজীবী অভি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে যেখান থেকে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল সেখান থেকে আপনার দূরত্ব কতটুকু ছিল। জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমি ২০০ মিটার দূরে ছিলাম। তখন আইনজীবী অভি বলেন, এত দূর থেকে তো গুলি করার দৃশ্য দেখা যায় না। আসামিপক্ষের আইনজীবীর এমন কথার জবাবে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, এটা সত্য নয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে হতাহতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেদিন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে বলেন, ওইদিন আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হন। পরবর্তীতে জানতে পারি সেখানে ওইদিন ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন ওখানে পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলি করে। সেদিন বেলা দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
চানখারপুলের হত্যাকাণ্ডের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ ও গুলি চালানো পুলিশ ও কমান্ড কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ৯ অক্টোবর জবানবন্দি দেন আসিফ মাহমুদ।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চলতি বছরের গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। এই মামলায় যে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তারা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। এই আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। অন্য চারজন গ্রেফতার।
মন্তব্য (০)