
নিউজ ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক ই আজম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহীদদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ এখনো চলছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে একজন বিদেশিসহ অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, নিহতদের অনেকেই হামলায় অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত জুলাই শহীদের তালিকায়। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে একজনের নাম বাতিল করে বাকি নামগুলো যাচাই শুরু করেছে প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, 'দড়াটানা থেকে গাড়িখানা মোড়ে আসা একটি মিছিলে কয়েকজন মোটরবাইকে ছিলেন। হোটেলের সামনে পৌঁছে কয়েকজন ভিতরে ঢুকে পড়ে। এরপর বাইরে থাকা লোকজনও ভেতরে ঢুকে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বের হতে থাকে।'
তিনি আরও জানান, 'আগুন লাগার পর প্রথমে ফায়ার সার্ভিসকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে ভেতরে নিজেদের লোক আটকা পড়েছে শুনে কয়েক ঘণ্টা পর তাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।'
এখন প্রশ্ন উঠেছে, এমন ঘটনায় নিহত বা আহতদের জুলাই যোদ্ধা বা শহীদ হিসেবে গণ্য করা কতটা যুক্তিযুক্ত।
শুধু যশোর নয়, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের তালিকায় থাকা অনেক নাম নিয়েই সম্প্রতি বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেকেই আন্দোলনে অংশ না নিয়েও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম জানান, প্রশ্ন ওঠার পর হোটেল অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের বিষয়েও নতুন করে যাচাই চলছে।
নানা সমালোচনার পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়ে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে।
সরকার নিজেই এই তালিকা তৈরি করলেও এখন বলছে, আন্দোলনে অংশ না নিয়েও যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পর থেকেই আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৩৪ জনের নাম শহীদের তালিকায় গেজেট করে, পরে আরও ১০ জনের নাম যুক্ত হয়। ৩০ জুন প্রকাশিত সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী, শহীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪৪ জন। তবে আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত না থাকা ও চারজনের নাম দ্বিগুণভাবে প্রকাশিত হওয়ায় ৩ আগস্ট আটজনের নাম বাতিল করা হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন।
অন্যদিকে আহতদের প্রথম তালিকায় ছিল ১২,০৪৩ জনের নাম। পরে আরও ১,৭৫৭ জন যুক্ত হওয়ায় মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩,৮০০।
সরকারি যাচাই-বাছাইয়ের পরও অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনে অংশ না নেওয়া অনেকের নাম এখনো তালিকায় রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক ই আজম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহীদদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ এখনো চলছে।
তিনি জানান, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে, জুলাই যোদ্ধা বলতে বোঝায় তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ক্ষমতাসীন দলের হামলায় আহত ছাত্র-জনতাকে। আর শহীদ বলতে বোঝায় সেই হামলায় নিহতদের। এর বাইরে কারো তালিকায় থাকার সুযোগ নেই।’
মন্তব্য (০)