
নীলফামারী প্রতিনিধি : সেফ এক্সিটের কথা আমরা বলেছিলাম শেখ হাসিনার আমলে। আপনি যে অন্যায় করছেন, যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করছেন, যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, আপনি নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করেছেন। রাজনীতিতে আপনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, গদি রক্ষার জন্য বিরোধী দলের রাজনীতিকর্মীদের অদৃশ্য করেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা করছেন, ক্রসফায়ার দিচ্ছেন। আপনাদের এই নীলফামারীতে আমাদের প্রায় চার-পাঁচজন ছেলেকে এই অঞ্চলের একজন মন্ত্রীর নির্দেশে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। শুধুমাত্র তারা গণতন্ত্র ফেরানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলন করেছিল বলেই তাদের লাশ পাওয়া গেছে রাস্তার ধারে, খালের ধারে ও পুকুরের ধারে।
নীলফামারীতে আমরা বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে তেলী মোস্তাকিন আলীর পরিবারের হাতে উপহার তুলে দেওয়ার সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান নূরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও এ ধরনের কাজ করেছেন। আমাদের দলেও তো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেবী নাজনীন আছেন, তাঁকে কি কখনো এমন অমানবিক কাজ করতে দেখেছেন? আমাদের বর্ষীয়ান নেতারা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েও বিএনপির সঙ্গে আছেন এবং কাজ করছেন। আমরা তখনই বলেছিলাম, আপনি যে এত অত্যাচার করছেন, আপনি কি আপনার সেফ এক্সিটের কথা চিন্তা করে রেখেছেন?
বর্তমান সময়ে যিনি সেফ এক্সিটের কথা বলছেন, তিনিও সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁকে চিন্তা করে বলতে হবে, কার সেফ এক্সিটের কথা বলছেন। যদি কোনো ব্যক্তি অন্যায় করে থাকে, যদি দুর্নীতি নয়, মহা দুর্নীতি করে থাকে, টাকা পাচার করে থাকে, অপরাধ করে থাকে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তার সেফ এক্সিট দরকার। আপনি তো এই সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, আপনি বলুন কারা কারা এ ধরনের অন্যায় ও অপরাধ করেছে। তখন তারাও তাদের সেফ এক্সিটের কথা চিন্তা করবে, জাতীয় চিন্তা করবে।
রিজভী বলেন, ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সকল গণতান্ত্রিক দল সমর্থন করেছি। তিনি একজন গুণী ব্যক্তি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ভালো কাজ করবে এটাই আমাদের সকলের কাম্য ছিল। যদি এর মধ্যে কোনো উপদেষ্টা থেকে থাকেন, যিনি বলেছেন ‘সেফ এক্সিট নেওয়ার কথা’, তিনিও তো উপদেষ্টা ছিলেন। তাহলে আপনি তালিকা দিন কারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, কারা টাকা পাচার করছে, কারা দুর্নীতি করছে, কারা অন্যায় করছে। আমরা তো বরাবরই এই সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই, যাতে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে কাজ করে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে এবং তার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, অনেক কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছে, কথা বলছে এবং এটি নিয়ে প্রতিনিয়ত সকাল-সন্ধ্যা কাজ চলছে।
উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “আপনি এই সরকারের একজন উপদেষ্টা হওয়ার পরেও যখন বলছেন, তখন আপনাকে তালিকা দেওয়া উচিত। কারণ যার অন্তরের আলো থাকে, সততার আলো থাকে, তার বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ এলেও তার সেফ এক্সিটের দরকার হবে না।”
এদিকে, একই অনুষ্ঠানে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত সৈয়দপুর (সাংগঠনিক) জেলায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন ও শহীদ নাঈম বাবু’র পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে আর্থিক অনুদান দেয় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন , বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, সৈয়দপুর (সাংগঠনিক) জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আক্তার, কাতার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামুন-সহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মীরা।
মন্তব্য (০)