
নিউজ ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীতে নৌযানে চাদাঁবাজির ঘটনায় পুলিশের অভিযানের সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন পুলিশসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার মেঘনা নদীর নুনেরটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক এলাকা দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার নলচর গ্রামের বারেকের নেতৃত্বে তার ছেলে মহসিন, হাসনাত, রানা, সাজ্জাদসহ ২০ থেকে ৩০ জনের একটি চাঁদাবাজ চক্র বালু ও মালবাহী বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালেও বারেকের নেতৃত্বে টিটু ও মহসিনসহ তাদের লোকজন দেশীয় অস্ত্র টেঁটা, বল্লম, রাম দা নিয়ে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজি শুরু করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এসবি জয়নব বৃষ্টি পরিবহণ নামের এক বাল্কহেডের শ্রমিক মহিবুল্লাহ ও জাকারিয়া ইসলামকে তারা পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।
খবর পেয়ে বৈদ্যেরবাজার ও চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। এ সময় চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা পুলিশের ওপর টেঁটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
হামলায় পুলিশের এএসআই মাকসুদ, কনস্টেবল সোহাগ ও সাইদুর আহত হন। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এ সময় বারেকের ছেলে চাঁদাবাজ রানা ও সাজ্জাদকে আটক করে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে পুলিশ কনস্টেবল সোহাগ ও বাল্কহেডের শ্রমিক জাকারিয়া ইসলামের অবস্থার অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এসবি জয়নব বৃষ্টি পরিবহণ নামের বাল্কহেডের সুকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, নৌপথে আড়াইহাজার উপজেলার মরিচাকান্দি এলাকা থেকে বালুভর্তি বাল্কহেড নিয়ে তিনি রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে সোনারগাঁ উপজেলার বারদী নুনেরটেকে এলাকায় নৌ চাঁদাবাজরা তার বাল্কহেডটি আটক করে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এ চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় চাঁদাবাজ চক্র আমাদের দুই শ্রমিককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এ পথে প্রতিদিন নৌ চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। কোনো নৌযানের শ্রমিক যদি চাঁদা দিতে অস্বীকার করে তাহলে চাঁদবাজ চক্রের সদস্যরা তাদের পিটিয়ে আহত করে।
অভিযুক্ত বারেকের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি নৌ চাঁদাবাজ চক্র সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীতে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছিল। মঙ্গলবার সকালে এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন বাল্কহেডে চাঁদা তোলার সময় এক বাল্কহেডের শ্রমিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাদের তারা পিটিয়ে আহত করে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য (০)