
নিউজ ডেস্কঃ বিসিবি নির্বাচনের সময় যতই এগোচ্ছে, ততই উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সংগঠকরা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতে শুরু করেছেন। সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তুলছেন কেউ কেউ। অনেক ভোটারদের বৈধতা নিয়ে উঠছে অভিযোগ।
২৩ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর অর্থাৎ ভোটারদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা দিয়ে শুরু হয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। ২৪ সেপ্টেম্বর একদিন আপিল করার সুযোগ দিয়ে আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) সেটার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিলর মনোনয়নে একটি আপত্তি জমা পড়েছে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে যাওয়া তামিম ইকবালের বিরুদ্ধে। সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহের স্বাক্ষরকৃত অভিযোগপত্রটি গতকাল নির্বাচন কমিশনারের হাতে এসে পৌঁছায়। আর সেটার শুনানির জন্যি আজ বিসিবিতে এসেছিলেন তামিম।
শুনানি শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তামিম। তিনি বলেন, 'আমি চাপমুক্তভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। চাপ আমার ওপরে অনেক আছে। কাল আমার কাউন্সিলরশিপও বাতিল হয়ে যেতে পারে। আদালতে রিট হতে পারে, মামলাও হতে পারে। কেন হবে, সেটা আপনারা ভালো করে বুঝবেন।'
৩টি ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরেও তামিমের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করাটাকে লজ্জার বিষয় বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই অধিনায়ক। তিনি বলেন, 'আমার কাউন্সিলরশিপ চ্যালেঞ্জ করলে সেটা একটা লজ্জার বিষয়। কারণ আমি সব দিক থেকে যোগ্য। এটা যদি চ্যালেঞ্জ হয়, আমাকে যদি বাতিলও করা দেয়া হয় (কাউন্সিলরশিপ), সেটা কেন করা হয়েছে আপনারা সবাই বুঝবেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বুঝবে, কেন করা হয়েছে।'
‘আমি সংগঠক না এটা কেউ বলতে পারবে না। দুইটা দলের কমিটিতে আছি, আরো একটা দল নিজে চালাই...। আমার নিজেরই লজ্জা লাগতেছে আজ এখানে এসে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। আমরা এতটা নিচে নেমে যাচ্ছি শুধু কিছু ইচ্ছে পূরণ করার জন্য আপনারা এই পর্যায়ে নিয়ে আসতেছেন। আমি আবারও বলি সঠিকভাবে নির্বাচন করি, হেরে যাই, কে সভাপতি হোক না হোক আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু এই নোংরামি কইরেন না শুধু ইগো বা জেতার জন্য।’
এদিকে, নির্বাচনে সরকারের একটি অংশ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে তামিম বলেন, 'আমাদের এখনকার সরকারের দায়িত্বের মধ্যে কী নেই সংস্কার করা? আমাদের এই সরকারের কি দায়িত্ব না একটা উদাহরণ তৈরি করে দিয়ে যাওয়া যে পরবর্তীতে যে আসবে সে এটা অনুসরণ করে। সরকারের একটা অংশ যদি এভাবে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করে, এভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে তাহলে কি এটা কোনো ভালো উদাহরণ হতে পারে? আমি ওইদিন (২২ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে যা যা বলেছি তাই ঘটেছে। কাউন্সিলর তালিকা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ৫টার সময়ে তালিকা দেয়ার ডেডলাইন, ৮টা, ৯টা, ১০টা পেরিয়ে পরের দিন পর্যন্ত চলে যাচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে করছেন। ক্যাটাগরি 'সি' তে কাকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে, এত ক্রিকেটার বাংলাদেশে কিন্তু কাকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। কাউকে ছোট করছি না, সবাই বাংলাদেশের ক্রিকেটার। ক্রিকেটার ছোট হোক বা বড় হোক, সবাইকে আমি সম্মান করি। কিন্তু নিজের পছন্দমতো সবকিছু করা হচ্ছে৷'
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াঁ, মন্ত্রী পরিষদ সচিবের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন তামিম।
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে তামিমের মনে। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন আমি নির্বাচন করবো কী করবো না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমাকে নির্বাচন করতে দিবে কী দিবে না। এই জিনিসটাও তো আপনাকে দেখতে হবে।’
পত্র-পত্রিকায় আসা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি বিসিবি। নির্বাচন কমিশন তাদের আপিল করার সুযোগ দিয়েছেন। তামিম অবস্থান নিয়েছেন এসব ক্লাবের পক্ষে। তার যুক্তি হলো, ক্রিকেটকে বাঁচানোর স্বার্থে এদের অনুমোদন দেয়া উচিত।
তামিম বলেন, 'আমি উনাদেরকে (নির্বাচন কমিশনারদের) বলেছি, আপনাদের অনেক কিছু আইনের উর্ধ্বে গিয়ে চিন্তা করতে হবে, যখন এটা মানুষের পরিবারের ক্ষেত্রে, রুজি-রুটির ক্ষেত্রে এসে যায়। আপনারা সবকিছু বিবেচনা করবেন৷ ৩০০টা ক্রিকেটারের বিষয় আছে। তারা রাস্তায় নেমে আসবে যদি না খেলতে পারে৷ সবকিছু বিবেচনা করে এটা করবেন। আমার কাছে মনে হয় যথেষ্ট যুক্তি আছে তাদের, আমার দল অবশ্যই আছে, তবে আমি পার্টিকুলারলি কোনো দল নিয়ে নয় পুরো ক্রিকেটের স্বার্থে কথা বলেছি। খেলোয়াড়দের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আমি আশাবাদী এমন নোংরামি হবে না৷ এই ১৫টা দল আজকে এই অবস্থানে কেন, সেটা আপনারা জানেন। এতে একজন ব্যক্তির নিজস্ব স্বার্থ ছিল। লুকোচুরির কিছু নেই। একজন ব্যক্তির কারণে আজকে এমনটা হয়েছে৷ আমি ডিটেইলসে গেলাম না। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনে যা হওয়ার হোক, দলগুলো বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেটটা চলতে থাকবে। এই ছেলেগুলো ক্রিকেট খেলতে পারবে৷ কয়েকদিন পরই তৃতীয় বিভাগ। আমি ভুল না করলে এই ১৫টা দলের মধ্যে ৮-৯টা তৃতীয় বিভাগের মধ্যে। এই দলগুলার মালিক কিন্তু আমি না৷ কিন্তু এই দলগুলা যদি বাদ দেয়া হয়, ৮-৯টা দল মানে ১৫০-২০০ খেলোয়াড়। এই ১৫০-২০০ খেলোয়াড়ের দায়িত্ব কে নেবে, ইসি না বিসিবি?
তিনি আরও বলেন, 'সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে প্রতিটি খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক ৫০ শতাংশের কম হয়ে গিয়েছিল। খেলোয়াড়রা দল পাবে কিনা এটা নিয়ে অনেক আশঙ্কা ছিল। গুলশান ক্লাবের দায়িত্বশীলরা যখন আমাকে দায়িত্ব নেয়ার জন্য বলে...... আমি নির্দিষ্ট করে বললে দায়িত্ব নিয়ে আমরা ১ কোটি টাকা খরচ করেছি। এখানে লিটন দাসের মতো খেলোয়াড়ও খেলেছে, অনূর্ধ্ব-১৯ এর বেশিরভাগ খেলোয়াড় খেলেছে। আমার ক্লাবের চেয়ে যতটা আশা ছিল তার চেয়ে বেশি ফলাফল এসেছে। যখন একটা ক্লাবকে কেউ স্পন্সর করে, এখানে কেউ তো টিভি সত্ব বা স্পন্সরশিপেত টাকা পায় না, কেউ না কেউ দায়িত্ব নিয়ে পকেটের টাকা দিয়ে দলটা চালায়। এটার বিনিময়ে কাউন্সিলরশিপ পায়, ভোটিংয়ের অধিকার পায়। আজকে আমার কাউন্সিলরশিপ কেড়ে নিলে, সামনের তিন বছর যদি আমি টাকা খরচ না করি, এই ২০ টা খেলোয়াড়ের দায়-দায়িত্ব কে নিবে, ইসি নিবে নাকি বিসিবি নিবে। এখানে ১৫টি ক্লাবের কথা আসছে, ৩০০ জন খেলোয়াড়। এই ১৫টা ক্লাবের কাউন্সিলর যদি সরে আসে এই ৩০০ খেলোয়াড়ের দায়িত্বটা কে নিবে! বিসিবি, ইসি নাকি অন্য কেউ। আমার কথা সহজ, যদি আমার ভোটব্যাংক বাড়ানোর জন্য বা যারা নির্বাচন করছে তাদের ভোটব্যাংক বাড়ানোর জন্য এই ক্লাব কালকে জন্ম দেয়া হইতো, আমি তখন আপনার শঙ্গে ১০০ পার্সেন্ট একমত হতাম যে এটা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু এই ক্লাবগুলোর তো ৫,১০, ১৫ বা ২০ বছরের ইতিহাস আছে। এদেরকে নিয়ে কী রাজনীতি করছেন। এখানে তো এসবের দরকার নেই। এখানে ক্রিকেটের একটা নির্বাচন হচ্ছে। যে যোগ্য, যাকে ভোট দিবে সে-ই জিতবে। এখানে তো আর জনগণ ভোট দেয় না, না সাংবাদিক ভোট দেয়। যাকে ভালো মনে করবে পাশ করায়ে নিয়ে চলে যাবে, এটা নিয়ে এত কিছু করার দরকার কী।'
মন্তব্য (০)