• রাজনীতি

ত্রয়োদশ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন যে কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি

  • রাজনীতি

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক : ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। তফশিল ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল।

এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই শুরু করেছেন। বিভিন্ন উইং থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে আসনভিত্তিক মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। 

এদিকে সোমবার রাতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জনসম্পৃক্ত নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটারদের ‘ডোর টু ডোর’ যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফাসহ বিগত দিনে বিএনপি সরকার আমলের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে। এর মাধ্যমে সারা দেশে নির্বাচনি ঢেউ তুলতে চাইছে দলটি। এটি সফল করতে সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। 

তফশিলের আগেই একক প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এজন্য দলের সিদ্ধান্তেও নানা পরিবর্তন আসবে। নানা হিসাবনিকাশ শেষেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার আগেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। একক প্রার্থীর নেতৃত্বে দলীয় অবস্থান সুসংহত করা এবং জনগণের আরও কাছে পৌঁছানোর চেষ্টার অংশ হিসাবেই এটি করার পরিকল্পনা হচ্ছে। 

এর কারণ হিসাবে নেতারা জানান, তফশিলের পর একক প্রার্থী ঘোষণা করলে আসনভিত্তিক নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা হয়েছিল। আবার ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়। তাই বলাই যায়, দীর্ঘ ১৫ বছর নির্বাচন থেকে দূরে থাকা এবং আওয়ামী লীগের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে ভোটকেন্দ্রিক দৌড়ঝাঁপ হয়নি। যে কারণে এবার প্রতিটি আসনে বিএনপির বহু প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে ভোটের আগমুহূর্তে নানা দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। যার প্রভাব দল ও ভোটের মাঠে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ধারণা থেকেই মূলত তফশিলের আগেই বেশির ভাগ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে আসনভিত্তিক যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে একক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন-এমন প্রত্যাশা নীতিনির্ধারকদের।

নীতিনির্ধারকদের আরও অভিমত-আপাতত ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা হতে পারে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদের বেশি সুযোগ দিতে চাইছে দলটির হাইকমান্ড। 

বাকি আসনে ‘জোট’ কিংবা ‘সমঝোতার’ বিষয়টি মাথায় রেখেই হয়তো ঘোষণা করা হবে না। আবার মিত্রদেরও কয়েকটি আসনের নিশ্চয়তা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা মৌখিকভাবে জানানোও হতে পারে। তবে তফশিল ঘোষণার পরই ‘জোট’ কিংবা ‘সমাঝোতা’ যা-ই হোক না কেন, তাদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হবে। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এবার প্রার্থী মনোনয়নে বড় ধরনের অনেক চমক থাকতে পারে।

কিছু আসনে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যাদের কথা অনেকের চিন্তার মধ্যেও থাকবে না। আবার অনেক সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন টিকিট পাবেন না। এতটুকু বলা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী, সৎ-যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নিতে পারেন। এছাড়া এটা নিশ্চিত যে, যার বিরুদ্ধে অপকর্মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং মাঠে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের আমলনামা রয়েছে।

দলটির (বিএনপি) গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কিংবা অন্য যে কোনো নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী মনোনয়নে দলের একটি পর্লামেন্টারি বোর্ড থাকবে। জাতীয় স্থায়ী কমিটিই হবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিংবা যে কোনো নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করবে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’ 

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, তফশিলের আগেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে পারেন। দলের যথাযথ নিয়ম বা প্রক্রিয়া মেনেই কেন্দ্রীয়ভাবে অথবা আসনভিত্তিক কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ২৯৬ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা করেছে। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ বিভাগীয় পর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। এ দলটিও ৩০০ আসনে একক প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করেছে। সিলেট, বরিশাল বিভাগীয় আসনসহ বেশকিছু আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করেছে দলটি। একইভাবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও দুই ধাপে ২৬৮ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদও প্রথম ধাপে ৩৬ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বিএনপিও তফশিলের আগেই বেশির ভাগ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দেবে। 

নির্বাচন সামনে রেখে জনসম্পৃক্ত নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী দিনে নির্বাচনের মাঠে কীভাবে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করা যায় এবং জনগণকে কীভাবে নির্বাচনমুখী করা যায়, সেটিই এখন দলটির রাজনীতির মূল লক্ষ্য। 

বিএনপির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে যে নানামুখী প্রোপাগান্ডা চলছে, সেটি আমলে নিয়ে এবং জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসাবে বিএনপি এখন মাঠে থাকার পাশাপাশি মানুষের ঘরে ঘরেও যেতে চায়। 

সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ধরনের আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

আরও জানা যায়, বৈঠকে জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে ভোটারদের ‘ডোর টু ডোর’ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে দলের মহিলা নেতাকর্মীদেরও সম্পৃক্ত করা হবে। কেন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন প্রয়োজন; নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগও পিছিয়ে যাবে, যে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য তারা দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছে-বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার প্রচারণাও চালানো হবে। বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে এই ৩১ দফার ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, সেই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হবে।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণকে নির্বাচনমুখী করার পাশাপাশি দলকেও পুরোপুরি নির্বাচনমুখী করতে চায় বিএনপি। জানা যায়, বৈঠকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচনের দিকে ফোকাস করা যায়, সে ব্যাপারে বিএনপির নেতারা আলোচনা করেন। তারা বলেন, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর পাঁচ মাসের মতো বাকি রয়েছে। এমন অবস্থায় দলকে পুরো নির্বাচনমুখী করতে হবে, প্রস্তুত করতে হবে। এ লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করতে চায় দলটি। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া এমন সংস্কার প্রস্তাবগুলো নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করার পক্ষে বিএনপি। সেটা নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে হতে পারে। আর সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো নির্বাচিত পরবর্তী সংসদ করবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

মন্তব্য (০)





image

‎দুর্গা পূজায় সম্প্রীতি রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান তারেক র...

নিউজ ডেস্কঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দ...

image

‎পিআর চাইলেই হবে না, নির্বাচন হলে জনগণই নির্ধারণ করবে: খসরু

নিউজ ডেস্কঃ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ...

image

‎রাশেদ খানের জন্য সুখবর, হতে পারেন ডাকসুর জিএস

নিউজ ডেস্কঃ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের আগে এম. ফিল প্র...

image

‎দুর্গাপূজাকে ঘিরে যেকোনো হীন উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিতে হব...

নিউজ ডেস্কঃ আসন্ন দুর্গাপুজা উপলক্ষে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স...

image

জীবন দেব তবু ৭১ ও ২৪ রাজাকারদের হতে দেব না: ইশরাক

নিউজ ডেস্ক : পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক) নির্বাচনি পদ্ধতি নিয়ে উ...

  • company_logo