
নিউজ ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব সংগঠন যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম বলেছেন, ভোটের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে যুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যার কারণে গণপরিষদের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক সেমিনারে যুবশক্তির আহ্বায়ক এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বাংলামোটরে যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত একটা গণ পরিষদ কেবল সংবিধান প্রণয়ন করতে পারে। অথচ ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠন করা হয়েছে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকারের অধীনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। স্বাধীন দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয়নি। যার ফলে সংবিধান জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেই সংবিধান জনমানুষের মৌলিক চাহিদার কথা বলা হয় না, জনমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয় না সেই সংবিধান আমরা চাই না। আওয়ামী লীগের ফিরে আসা আটকাতে নতুন সংবিধান লাগবে।’ তাছাড়া ৫৪ বছর ধরে সংবিধানে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি স্থান পায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যুবশক্তির সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, ‘সংবিধানের একেকটা অঙ্গ প্রতঙ্গ কাটাছেঁড়া করে সংবিধানকে বিদঘুটে ও বিশ্রি করে ফেলা হয়েছে। এই সংবিধান ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে আমাদের নতুন সংবিধান লিখতে হবে। নাগরিক অধিকারের বদলে রাতের আঁধারে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে এমন সংবিধান আমরা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘এই সংবিধান বোঝার জন্য শিক্ষক রাখতে হয়। সব শ্রেণির মানুষের জন্য বোধগম্য এমন সংবিধান আনতে হবে যাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা থাকবে এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। আমরা চাই এমন একটি সংবিধান যাতে লেখা থাকবে, শাসক ও নাগরিকের সমান অধিকার। আমরা এমন সংবিধান চাই যা নাগরিকের ওপর অবিচার করবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই এমন সংবিধান, যে সংবিধান মানুষের গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে পারে। এমন সংবিধান, যেটা বাংলাদেশের মানুষের অভিপ্রায়কে ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে সুরক্ষিত করতে পারে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে পারে। যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে পারে। ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে জারি রাখতে পারে।’ সংবিধান নিয়ে আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে কথাগুলো বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে, এমন সংবিধান চান উল্লেখ করে এনসিপির সদস্যসচিব আরও বলেন, ‘আমরা এমন সংবিধান চাই, যেটা বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষকে ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ, সব সম্প্রদায়ের মানুষ, সব জনগোষ্ঠীর মানুষের অধিকারকে ধারণ করতে পারে।’
নতুন সংবিধান না হলে এসব চাওয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সময় কোর্টে এটাকে চ্যালেঞ্জ করা হবে; কোর্ট সিদ্ধান্ত যদি বাতিল করার অথরিটি দেখে, যেহেতু এই সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার ৭২–এর বেসিক স্ট্রাকচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। আমরা এমন সংবিধান চাই, যে সংবিধান তার নতুন বেসিক স্ট্রাকচার নিয়ে জাতির কাছে হাজির হবে।’
জুলাই সনদকে ‘সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করে সেটাকে বাস্তবায়ন করা হবে নাকি অঙ্গীকারের মধ্য ফেলে রাখা হবে, এমন প্রশ্ন তোলেন আখতার হোসেন।
সেমিনারে জাবেদ রাসিন বলেন, ‘কোনো যুগপৎ আন্দোলনে এনসিপি যাবে না। এনসিপির অন্যান্য যে দাবিগুলো আছে, যে রাজনৈতিক দলগুলো সেই দাবিগুলোর সঙ্গে তাদের আমাদের একাত্মতা আছে—আমরা সেই দাবিগুলো নিয়ে আমাদের মতো করে আন্দোলন বা কর্মসূচি দেব। কিন্তু কোনো জোটের সঙ্গে, কোনো দলের সঙ্গে, কোনো যুগপৎ আন্দোলনে এনসিপি যাবে না।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অনেক কথা ছড়াচ্ছে বাজারে এনসিপি একটি জোটে যাচ্ছে। অমুক দলের সঙ্গে , অমুক দলের সাথে—আমি আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, এনসিপি কোনো জোটে যাবে না। এনসিপি সামনে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে, মধ্যমপন্থী বাংলাদেশি রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।’
দেশের বিদ্যমান সংবিধানকে মৃত উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের সংকট হচ্ছে সংবিধান নিয়ে এবং এই সংবিধানের ভেতর থেকেই বারবার মিলিটারি শাসন আসে, বারবার জরুরি অবস্থা আসে।’ তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে বাহাত্তরের সংবিধানটা আছে, এটা একটা মরহুম সংবিধান। কিন্তু আমাদের দেশের স্টাবলিশমেন্ট এটা রাখবেই। রাজা মারা গেছেন, কিন্তু তার মমিটা দেখিয়ে বলা হবে, এটা জীবিত আছে। এই সংবিধান আর নাই।’
বর্তমান সরকার সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে— এটা ধাপ্পাবাজি বলে অভিহিত করেন সারোয়ার তুষার। ১০৬ ধারার মূল বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বাংলাদেশে, এটার পরে সরকার গঠন করা যাবে কি না সেটার জন্য শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি তার প্রধান বিচারপতির কাছে রেফারেন্স পাঠাচ্ছেন, যে বিচারপতি তখন পলাতক। সেই রেফারেন্সের ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে। মহা ধাপ্পাবাজি। এর চেয়ে বড় ধাপ্পাবাজি আর হতে পারে না।’
এনসিপির ওই নেতা আরও বলেন, ‘সেই ১০৬-এর সার্টিফায়েড কপিটা কই, আমরা দেখতে চাই। কপিটা দেখান। আমাদের একটা ভীষণ বিপদের মধ্যে আপনারা নিয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তে যে কাউকে দিয়ে এই সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলানো হবে। ১০৬-এর সার্টিফায়েড কপিটা আসলে কোথায়? কোনো শুনানি হয়নি। ১০৬-এর একটা বাধ্যবাধকতা আছে যে শুনানি হতে হবে। আপনারা কেউ শুনানির কথা শুনেছেন?’
এনসিপির নেতা বলেন, ‘যখন জুলাই সনদের বাস্তবায়নের কথা আসছে, তারা আমাদের আবার আদালত দেখাচ্ছেন। ১০৬ দেখাচ্ছেন। ১০৬ একটা সাংবিধানিক ব্যাপার। সংবিধানের অধীন একটা বিষয় দিয়ে কীভাবে অতি সাংবিধানিক বিষয়ের ফয়সালা হতে পারে? ১০৬-এর মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ টেকানো যাবে না, পার্লামেন্টও টেকানো যাবে না।’
এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমীন, সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম, মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল প্রমুখ।
মন্তব্য (০)