
নিউজ ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অংশীজনরা। তাদের দাবি, ভোটকেন্দ্র হলে হলে নির্ধারণ করলে পেশিশক্তির প্রভাব ও বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে। তাই বিকল্প হিসেবে অনুষদ বা একাডেমিক ভবনে ভোট নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
প্রচলিত কাঠামো অনুযায়ী, জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট হয়ে থাকে আবাসিক হলভিত্তিক কেন্দ্রে। তবে এখনও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে উচ্ছেদ না হওয়া এবং সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের জন্য আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করতে হবে। অনুষদভিত্তিক ভোটকেন্দ্র হলে পেশিশক্তির প্রভাব ও বিশৃঙ্খলা কমবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতিও দূর হবে।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রদলের সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রদল সব সময় গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করে। জাকসুর ভোটকেন্দ্র হলভিত্তিক হবে নাকি অনুষদভিত্তিক হবে, সেটি মূল বিষয় নয়—মূল বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। তবে এতো সংখ্যক ছাত্রী যদি অনুষদে একসঙ্গে ভোট দিতে আসে, তাহলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।’
জাবি শাখা শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক এবং ইংরেজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অনুষদভিত্তিক ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রস্তাবনা। এর মাধ্যমে নির্বাচনে আধিপত্য কায়েম বা ম্যানিপুলেশন অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব। তবে হলের সিট থেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থী উচ্ছেদে প্রশাসন শিথিলতা দেখালে সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।’
বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের সংগঠক এবং বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও হলগুলো থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করতে পারেনি। হলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে ঘিরে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে হলগুলোকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করলে নিরাপত্তা আশঙ্কা থেকেই যাবে। অনুষদ বা একাডেমিক ভবনগুলো একটি বিকল্প হতে পারে।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাবি শাখার সদস্যসচিব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আবু তৌহিদ মো. সিয়াম বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের দিন পেশিশক্তির প্রভাব, গ্যাঞ্জাম ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে হলে ভোটকেন্দ্রগুলো হলের পরিবর্তে অনুষদভিত্তিক করা যেতে পারে। এতে একাধিক সুবিধা মিলবে। একইসঙ্গে হলে হলে ভোট হলে প্রভাব বিস্তার সহজ হয়। কিন্তু অনুষদভিত্তিক ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকায় তা সম্ভব হবে না। এছাড়া সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রভাবও তুলনামূলক কম থাকবে এবং প্রার্থীরা নারী-পুরুষ উভয় ভোটারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারবেন।’
ইতিহাস বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আগেই অনুষদভিত্তিক ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তখন প্রশাসন এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। এখন ছাত্রদলের হল কমিটি হওয়ায় পেশিশক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। অনুষদভিত্তিক ভোটকেন্দ্র হলে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও নিরাপদ হবে।’
এ বিষয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বাহিরে কিছু করার সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রে ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে তা উল্লেখ আছে।’
মন্তব্য (০)