
নিউজ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পার হয়েছে। এ সময়ে সরকারের কিছু পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গেছে। তবে এখনো মানুষের জীবন-জীবিকায় স্বস্তি আসেনি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচিতে ব্যাপক দুর্বলতা ছিল। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’। এ সময় হতাশার কথা বলেন কেউ কেউ। তবে অনেক বক্তা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা কম। কারণ, তাদের মূলকাজ গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহণ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ বছরে বাংলাদেশের সব খাতের কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যারা এই কাঠামো ভেঙে দিয়েছে, তাদের বিচার হবে তো? রাজনীতিতে স্বার্থের সংঘাত থাকলে সব পরিকল্পনা হোঁচট খাবে।
এছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। বিএনপির এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো স্বৈরাচার ১৫ বছরে মানুষের যেসব অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ওইসব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। আর চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার টেকসই হবে না। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার আÍত্যাগের দর্শন সামনে রেখে দেশের উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। তারা সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ড, নীতি ও সংস্কার উদ্যোগ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে সবাই এতই হতাশ? হ্যাঁ, হতাশ হওয়ারই কথা। তবে আমরা কখনো বলিনি সবার বাড়িতে গোলাপ ফুল ফুটবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা অকল্পনীয়। এ ধরনের বিপ্লব পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি। নেতাহীন আন্দোলন। এ বিপ্লব যারা করেছেন, তাদের অধিকাংশই স্কুলের কোমলমতি বাচ্চা, তরুণ-তরুণী। টানা এক মাস রাস্তায় আন্দোলন করল। কেউ সাহায্য করল না। উলটো তাদের একাংশকে হত্যা করা হলো। তিনি আরও বলেন, ৫ থেকে ৮ আগস্ট ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। ৪০-৪৫টি থানা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশও মারা গেছে। এ অবস্থায় সরকার গঠনের পর আমাকে দেওয়া হলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা পুরোপরি ভেঙে পড়েছে। দায়িত্বে ফিরতে অনাগ্রহী। তারা বলেন, আমরা চাকরিও করব না, ডিউটিতেও যাব না। এরপর আলটিমেটাম দেওয়ার পর ধীরে ধীরে কর্মস্থলে আসতে শুরু করে পুলিশ। তবে এখনো পুলিশের কাঠামো তৈরি হয়নি। পুলিশের সংস্কার খুবই জরুরি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে তা না হলে অতীতে যেভাবে ছাত্রলীগের ছেলেরা পুলিশে ঢুকেছে, ভবিষ্যতেও যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের রাজনৈতিক কর্মীরাই পুলিশে যোগ দেবে।
মন্তব্য (০)