
নিউজ ডেস্কঃ এসএসসি পেরিয়ে কলেজজীবনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই এটা এক নতুন যাত্রার শুরু। স্বপ্নের কলেজে ভর্তি হওয়া, কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করা—সবকিছুতেই থাকে উত্তেজনা, প্রত্যাশা আর কিছুটা উদ্বেগও। কারণ এই সময়টা শুধু আনন্দের নয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ারও। অথচ অনেক সময়ই সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পড়েন দ্বিধায়। কীভাবে আবেদন করবেন, কোন কলেজে কী সুযোগ-সুবিধা আছে, বিষয় বাছাইয়ে কী কী ভাবতে হবে, এসব প্রশ্নের জবাব জানা থাকলে ভবিষ্যৎ পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাই কলেজে ভর্তির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা একান্ত জরুরি।
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া
বর্তমানে বাংলাদেশের কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হয়। একবার রেজিস্ট্রেশন করলেই শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দক্রম অনুযায়ী বেছে নিতে পারে। তবে কলেজ নির্বাচন করার সময় শুধু নামের প্রতি না ঝুঁকে, ভালোভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন—নিজের এলাকা, কলেজটির ফলাফলের মান, পরিবেশ ও শৃঙ্খলা, বিষয়ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা এবং পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। সঠিক সিদ্ধান্তই গড়ে দেবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।
অনলাইনে আবেদন করতে যা প্রয়োজন হয়
কলেজে অনলাইনে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে—এসএসসি রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পাসের সাল, শিক্ষা বোর্ডের নাম এবং সচল একটি মোবাইল নম্বর। প্রতি আবেদন ফর্মের জন্য সাধারণত ১৫০ টাকা ফি নির্ধারিত থাকে, যা মোবাইল আর্থিক সেবা বা অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষার্থীকে আবেদনের কনফারমেশন কপি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে, যা পরবর্তী ধাপে কাজে লাগবে।
ভর্তির আবেদন জমা দেওয়ার পর বিভিন্ন ধাপে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রথম মেধাতালিকায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোবাইল আর্থিক সেবা বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ২০০ টাকা দিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হয়। যেসব শিক্ষার্থী প্রথম মেধাতালিকায় স্থান পায় না, তাদের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। অনেকে প্রথম পছন্দ না পেলে পরবর্তী তালিকায় সুযোগ পায়।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—অনেক সময় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি নিশ্চিত করতে ভুল করে বসে বা সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। এটি একটি গুরুতর ভুল, যা ভবিষ্যতের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়মিত ওয়েবসাইট ও মোবাইলে এসএমএস চেক করা অত্যন্ত জরুরি। সতর্কতা ও সচেতনতা থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়াটি সহজ ও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
বিভাগ নির্বাচন:
এসএসসি পাসের পর কলেজে কোন বিভাগে পড়বেন—বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা না মানবিক—তা ঠিক করা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটি ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের পথ নির্ধারণ করে দিতে পারে, তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভালোভাবে ভেবে-চিন্তে।
সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে হলে ৪.০০ বা তার বেশি জিপিএ এবং গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর ভালো দখল থাকা প্রয়োজন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে তুলনামূলক কম, অর্থাৎ ৩.৫০ বা তার কাছাকাছি জিপিএ পেলেও ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব। মানবিক বিভাগে কিছুটা কম জিপিএ থাকলেও অনেক ভালো কলেজে সুযোগ পাওয়া যায়।
তবে বিভাগ নির্বাচন শুধুমাত্র জিপিএ বা কলেজের নামের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। এর সঙ্গে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে—নিজের আগ্রহ, ভবিষ্যৎ পেশার পরিকল্পনা (যেমন: চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, শিক্ষক, আইনজীবী ইত্যাদি), এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা। কারণ ভুল বিভাগ বেছে নেওয়া মানে শুধু নিজের আগ্রহের সঙ্গে সংঘাত নয়, উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনায় সমস্যার মুখে পড়াও।
আরও যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
কলেজ নির্বাচন ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার, যেমন:
১. কলেজের অবস্থান (বাসা থেকে দূরত্ব)
২. শিক্ষক-শিক্ষিকার মান ও সংখ্যা
৩. বিজ্ঞান ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি সুবিধা
৪. সহশিক্ষা কার্যক্রম: কুইজ, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি
৫. কলেজের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা
৬. শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত
৭. টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ
৮. নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থা (বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য)
ভর্তি ফি ও আর্থিক বিষয়
সরকারি কলেজে ভর্তি ফি তুলনামূলকভাবে কম, সাধারণত ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা। বেসরকারি কলেজে ভর্তি ফি শুরু হয় প্রায় ৮,০০০ টাকা থেকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে অনেক ভালো বেসরকারি কলেজে স্কলারশিপ বা ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে, যা ভালো জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পেতে পারে।
এসব ভুল এড়িয়ে চলার জন্য আত্মবিশ্বাস, সময়জ্ঞান, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা অপরিহার্য। এসএসসির পর কলেজে ভর্তি কেবল একটি প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক, যা ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার এবং জীবনের দিকনির্দেশ নির্ধারণ করে। তাই এই সময়ে তথ্যসচেতনতা, ব্যক্তিগত সক্ষমতা ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক কলেজ, সঠিক বিভাগ ও সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়াই হবে একান্ত প্রয়োজনীয়। মনে রাখবেন, ভর্তিই শেষ নয়, এই ভর্তির পর শুরু হবে নতুন অধ্যায়, যার প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।
মন্তব্য (০)