তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক : ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জের সময় শুরু হয়েছে। দেশটিই অ্যাপটির সবচেয়ে বড় বাজার হলেও সেখানেই এখন সবচেয়ে বড় চাপের মুখে পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।
সম্প্রতি ভারত সরকার অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগসেবার ওপর কিছু নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যা হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এসব নিয়মের ফলে সাধারণ ব্যবহারকারী ও ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত মাসের শেষ দিকে নির্দেশনাগুলো জারি করা হলেও চলতি মাসে তা প্রকাশ্যে আসে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সব সময় একটি সক্রিয় সিম কার্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
এছাড়া ওয়েব ও ডেস্কটপ সংস্করণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর ব্যবহারকারীকে লগআউট হতে হবে এবং পুনরায় ব্যবহার করতে হলে কিউআর কোড স্ক্যান করে ডিভাইস সংযুক্ত করতে হবে।
সরকারের দাবি, সাইবার অপরাধ দমন করতেই এই পদক্ষেপ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে সাইবার প্রতারণায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২৮ বিলিয়ন রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলছে, কেওয়াইসি সম্পন্ন ও সক্রিয় সিমের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট যুক্ত থাকলে প্রতারণা শনাক্ত করা সহজ হবে। এতে ফিশিং, ভুয়া বিনিয়োগ স্কিম ও তথাকথিত ডিজিটাল গ্রেপ্তার সংক্রান্ত জালিয়াতি কমানো সম্ভব হবে।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিজিটাল অধিকারকর্মী ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, এটি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ, যার ফলে অপরাধীদের চেয়ে বৈধ ব্যবহারকারীরাই বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন।
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ কেবল যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অসংখ্য ছোট ব্যবসা তাদের অর্ডার নেওয়া ও গ্রাহকসেবার জন্য এই প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল।
দেশটিতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ ব্যবহারকারী প্রতিদিন অ্যাপটি ব্যবহার করেন। হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাপের ক্ষেত্রেও দৈনিক ব্যবহারকারীর হার প্রায় ৬৭ শতাংশ।
অনেক ছোট ব্যবসা একটি ফোনে সিম রেখে অন্য ডিভাইসে ওয়েব ভার্সনের মাধ্যমে কাজ চালায়। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এই পদ্ধতিতে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে, যার ফলে অর্ডার গ্রহণ ও গ্রাহক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের প্রবৃদ্ধির গতি কমে এসেছে। নতুন ব্যবহারকারী যোগ হচ্ছে কম, আর বর্তমান ব্যবহারকারীদের ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ, অথচ ডাউনলোডের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাপই এখন কোম্পানির প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। ২০২১ সালের তুলনায় এই অ্যাপের ব্যবহার ১৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
এদিকে শিল্প সংগঠন ব্রডব্যান্ড ইন্ডিয়া ফোরাম সতর্ক করে জানিয়েছে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রযুক্তিগতভাবে জটিল এবং এতে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি বাড়বে।
নীতিবিশেষজ্ঞদের মত, আইন প্রণয়ন না করে শুধু প্রশাসনিক নির্দেশনার মাধ্যমে এমন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যথাযথ আলোচনা না করায় বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে। যদিও আদালতে এই নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করা কঠিন, তবুও আলোচনা ও সমালোচনা থামছে না।
সব মিলিয়ে, ভারতের বাজারে হোয়াটসঅ্যাপ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। নতুন এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অ্যাপটির ব্যবহার ও বিস্তারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য (০)