• অর্থনীতি

টেকসই উন্নয়নে মূল বাধা অর্থ পাচার

  • অর্থনীতি
  • ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১২:৩০:০৯

সিএনআই ডেস্ক:  টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে মূল বাধা অর্থ পাচার- এমনটি মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘ডেলিভারিং এসডিজি ইন বাংলাদেশ : রোল অব নন স্টেট একটরস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন বক্তারা। সভায় এসডিজির ৪ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি শীর্ষক বইয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। অর্থপাচারের এ প্রবণতা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। সভায় এসডিজি বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পদ, আয় এবং ভোগ বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি উন্নয়নে দেশের সব অংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন বক্তারা। এসডিজি বাস্তবায়নে পথে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বক্তরা বলেন, ব্যাপক বৈষম্য, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা। এ তিন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। তবে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিতে এগিয়ে গেলেও মানসম্মত শিক্ষা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এছাড়া শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া তথ্য ঘাটতিও অন্যতম একটি সমস্যা। এ সংলাপ আয়োজনে সিপিডিকে সহায়তা করেছে এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম- দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ড. রেনি হোলেনেস্টিন, জাতিসংঘের আবাসিক প্রধান সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। বক্তব্য রাখেন সিডিপির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রধান আচা ওরকেল সং, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ফারাহ কবির, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির ড. মোস্তাফিজুর রহমান. ড. গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ। আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের বিস্ময়। গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে সমাজের সব অংশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃতে এমডিজির মতো এসডিজি বাস্তবায়নেও সাফল্য লাভ করা যাবে। তথ্য ঘাটতি পূরণে কাজ চলছে। ড. রেহমান সোবহান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সমাজের সব অংশকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজির বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে একটি বিশেষ অধিবেশন হওয়া উচিত। তার সঙ্গে সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করতে পারে সরকার। এতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এসডিজি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মতামত পাওয়া যাবে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি কর্মকাণ্ডে সরকারের বাইরে থাকা বেসরকারি অংশ, এনজিও, সুশীল সমাজ, স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেননা এসডিজির মূল কথাই হচ্ছে কাউকে পেছনে ফেলে নয়। তাছাড়া এসডিজি মূল্যায়নে তথ্যের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা থাকতে হবে। দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও এর সুফল সমানভাবে যাচ্ছে না। শিক্ষিত বেকার রয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষতা বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা, রাজস্ব আদায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, স্থানীয় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে কাজ করতে হবে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। সরকারের বাইরে থাকা বিরাট অংশের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এসডিজিতে তথ্যের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। তিনি জানান, এসডিজি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করেছে। সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রেও রয়েছে চ্যালেঞ্জ। যদিও এ সমস্যা বাংলাদেশের সৃষ্টি নয়। যে কোনো দেশ বৈষম্য কমাতে না পারা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠ করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা এখনও অনেক দূরে রয়েছে। তথ্য ঘাটতির কারণে তদারকির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। সম্পদ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সমস্যাও। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বজনীন শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার নারীর অভিগম্যতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া যে শিক্ষা বাজার স্বীকৃতি দেয় না, সে শিক্ষা দিয়ে কিভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে? আচা ওরকেল সং বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাত সহযোগিতার জন্য মুখিয়ে আছে। আবার সমালোচনামূলক মনোভাবও রয়েছে। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসডিজি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে দ্বিতীয় ফেজ হিসেবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এসডিজি বাস্তবায়ন। সেটি হচ্ছে প্রথম ফেজ। এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার হয়তো পুরো অর্থ জোগান দিতে পারবে না। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি উদ্যোক্তা, জনপ্রতিনিধি, এনজিও, গণমাধ্যমসহ সব শ্রেণির ভূমিকা রয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে হবে। ড. রেনি হোলেনেস্টিন বলেন, নাগরিকের কণ্ঠ সংকীর্ণ হলে এসডিজি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। রাষ্ট্র ও সমাজে নানা রকম অসঙ্গতি দেখা দেবে। বাড়বে বৈষম্য। ফারাহ কবীর বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। এসডিজি বাস্তবায়নে জ্বালানি নিরাপত্তা একটি অন্যতম বিষয়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo