• সমগ্র বাংলা

বর্মন পল্লীতে টাকা ছাড়া মিলছে না বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড!

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৭ জানুয়ারী, ২০২০ ১৯:৪০:৩৪

শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এ জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে শ্রীবরদী একটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এ অঞ্চলটি পাহাড়ি বন-বনানীর অপার সৌন্দের্যের লীলাভূমি। আর এ উপজেলারই রানীশিমুল ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক নিবির বসবাসস্থল ‘বর্মন পল্লী’। এখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষই সনাতন ধর্মাবলম্বীর অর্থ্যাৎ হিন্দু সম্প্রদায়ের। এ ‘বর্মন পল্লী’তে রাজগোত্রীয় সদস্যের ৩৩১ খানা মিলে প্রায় ১১ শত মানুষের বসবাস,-যাতে ভোটার সংখ্যা ৬২৫ জন। জানা যায়, নানা সম্যসা ও দূর্ভোগে জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন- যাপন করে আসছেন ওই ‘বর্মন পল্লী’র অধিবাসীরা। বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সমাজিক ও ধর্মীয় নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন তারা। ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে স্থানীয় মেম্বার ও প্রভাবশালী একটি কু-চক্রের নামে উঠেছে নানা ধরনের অনিয়ম- দূর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে- টাকা ছাড়া বয়স্ক-বিধবা- প্রতিবন্ধী কোন কার্ডই মিলে না তাদের। একটা কার্ডের জন্য জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। ঘুরে ঘুরেও অবশেষে টাকা ছাড়া মিলে না কাঙ্খিত সেই কার্ড। কথা হয় কার্ড না পাওয়া বিধবা নীরুবালা বর্মন(৭৭), উপমান বর্মন(৮২), দূর্গামনি বর্মন(৬৯), শান্তি বর্মন(৮২), বীজালা বর্মন(৮৪), সৃষ্টি রানী বর্মন(৮২), পবিত্রী রানী বর্মন(৭৪), বজবালা বর্মন(৭১), কিরণ বর্মন(৭৩), শান্তবালা বর্মন(৬৮), নন্দ রানী বর্মন(৭০), বৃদ্ধ দীগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন(৯০) ও সুবাষ গোস্বামী(৮৯)’র সাথে। তারা জানান, ‘আমরা অন্য ধর্মের লোক হওয়ায় আমাদের দিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমরা ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি। একটা কার্ডের জন্য তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। আর ঘুরেও কোন লাভ হয় না। টাকা ছাড়া তারা কোন কার্ড প্রদান করে না। এ জন্য প্রতিটা কার্ডের বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে চাওয়া হয় ৬-৭ হাজার টাকা। তারা আরও জানায়, যারাই কার্ড পেয়েছে তাদেরকে কিছু না কিছু টাকা ঘুষ দিয়েই তা হাসিল করতে হয়েছে। আমাদের যাদের পক্ষে টাকা বা কোন কিছু বিনিময় দেওয়া সম্ভব হয়নি, তারা কোন কিছু পাইনি’। এ ছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে এ ‘বর্মন পল্লী’র অধিবাসীরা। এলাকার আশেপাশে কোন প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুল নেই। তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য যেতে হয় সেই সূদূর রানীশিমুল ইউনিয়ন বাজার স্কুলে। অথচ এ ইউনিয়নে শিক্ষার হার- ৪৫%। স্বাস্থ্য খাতেও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এ ইউনিয়নের মানুষজন। শ্রীবরদী উপজেলাতে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও ডাক্তার ও সরঞ্জামাদির অভাবে এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যতীত কোন রোগীই রাখা হয় না। পাঠিয়ে দেয়া হয় শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে। এদিকে, বর্তমান সরকারের আমলে গৃহহীনদের ঘর প্রদান কার্যক্রম যখন অব্যাহত রয়েছে, তখন ব্যতিত্রম দেখা যায়, এ ‘বর্মন পল্লী’তে। ধর্মীয় বৈষম্যতা, অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক অসহায়-গরীব-দুঃখি গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে, যা অত্যন্ত কষ্ট ও বেদনাদায়ক। এ বর্মন পল্লী’তে ৩ টি মন্দির রয়েছে, যা রাধা গোবিন্দ, নাগ ও বাসন্তি মন্দির নামে পরিচিত। নিজেদের অর্থায়নে রাধা গোবিন্দ ও বাসন্তি মন্দিরের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলেও, নাগ মন্দিরের রয়েছে বেহাল দশা-যার চারদিকে ফাঁকা, একটি বেড়াও নেই। অথচ, গীতা শিশু স্কুলে এখানে প্রতিদিন শিক্ষা নেয় প্রায় ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী। ‘বর্মন পল্লী ’র নানা সমস্যার বিষয়ে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের রানীশিমুল ইউনিয়ন শাখার সভাপতি গোপীনাথ বর্মন জানান, বর্তমান সরকারের গৃহিত নানা সুন্দর সুন্দর উদ্যোগ ও কার্যক্রম সমাজে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা ভিন্ন ধর্মের আছি, তাদের ক্ষেত্রে এর চিত্র ভিন্ন। জনপ্রতিনিধিরা টাকা ছাড়া কোন বয়স্ক- বিধবা-প্রতিবন্ধী কার্ডই প্রদান করেন না। গৃহহীনদের বাসস্থানেরও কোন ব্যবস্থা করে দেন না। এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমাদের ন্যায্য অধিকার আমরা ফিরে পেতে চাই। অন্যদিকে, ‘বর্মন পল্লী’তে সরকারের নানা সুবিধা প্রদানে অনিয়ম- দূর্নীতি প্রসঙ্গে রানীশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা জানান, এ ‘বর্মন পল্লী’তে এতো অনিয়ম-দূর্নীতি চলছে, তা আমার জানা ছিলো না। যারা বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড পায়নি,  আমি নিজে গিয়ে তাদের কার্ড প্রদান করে আসব। আমি যথাসম্ভব এ এলাকার উন্নয়নে সবসময় কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবো। এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা আক্তার জানান, আমি ২/৩ মাস যাবত শ্রীবরদীতে দয়িত্বে এসেছি। এসেই এ উপজেলার নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমি এ সব বিষয়ে তেমন অবগত ছিলাম না। আজ জানলাম, আমি ওই ইউনিয়নের ‘বর্মন পল্লী’ পরিদর্শন করে এসব বিষয়ে দ্রুত  পদক্ষেপ নেবো এবং যাদের ব্যাপারে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ এর সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করবো। উল্লেখ্য, শেরপুরে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শান্তি রক্ষায় সাংবাদিকদের সক্ষমতা উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে। ২৬ জানুয়ারী রবিবার ছিলো সাংবাদিকদের ফিল্ড ভিজিট। শনিবার ওই কর্মশালার উদ্বোধন করেন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম। ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনের সহযোগিতায় এর আয়োজন করেছে নিউজনেটওয়ার্ক সংগঠন। এ কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট, সিনিয়র সাংবাদিক জিয়াউর রহমান ও রেজাউল করিম। এ কর্মশালাটি ২৮ জানুয়ারী মঙ্গলবার শেষ হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo