• বিশেষ প্রতিবেদন

মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ, স্বপ্নে বিভোর কৃষক

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৪ মার্চ, ২০২৪ ১৮:৫৬:০৯

ছবিঃ সিএনআই

শিবচর, মাদারীপুর প্রতিনিধি: ‘মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই মহান উক্তিটি মতো মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত হয় সরিষা, ধনিয়া ও কালোজিরার মাঠ। মৌমাছিরা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে নাচানাচি করে। এ যেন ধনিয়া ও কালোজিরা ফুলের সাথে তাদের গভীর মিতালী।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বিভিন্ন সরিষা, ধনিয়া ও কালোজিরা ক্ষেতে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন আশপাশের মৌমাছি পালনকারীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মৌমাছি পালনকারী সরিষা, ধনিয়া ও কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে শিবচরের বিভিন্ন গ্রামে এসেছেন। শিবচরে চারদিকে কালোজিরা ফুলের হলুদের সমারোহ। মধুচাষিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কালোজিরা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে। ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজারো মৌমাছি মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে কালোজিরা ফুলের মাঠে।

উপজেলা কৃষি সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪ হাজার ২৮০টি মৌমাছির বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন। সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও  কৃষক উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন। মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

মৌচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ৮ থেকে ১০টি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর এর ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন।

মৌচাষিরা জানান, সরিষা ফুলের মধু রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররাও ক্রয় করেন। চাহিদা অনুযায়ী মধু বিক্রি করেন তারা। চাহিদা বেশি হলে দাম কিছুটা বেশি পান। আবার তুলনামূলক চাহিদা কম হলে দামও কিছুটা কম পান। তারা প্রতিকেজি সরিষা ফুলের মধু ৬শ থেকে ৮শ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি করেন তবে স্থানীয়দের কাছে তারা ৬শ টাকায় বিক্রি করে থাকেন বলেও জানান মৌচাষিরা।

সাতক্ষীরা থেকে আসা মধুচাষী বিল্লাল হোসেন বলেন, মৌচাষ তার পারিবারিক ব্যবসা। কালোজিরা থেকে উৎপাদিত মধুগুলো স্থানীয় ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরিষা কেন্দ্রিক মধু সংগ্রহের মূল মৌসুম হলেও লিচু, ধনিয়া ও কালোজিরা চাষের সময়ও মধু উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তাদের উৎপাদিত মধু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করা হয়।

মধুচাষী সোহাগ হোসেন বলেন,মৌমাছি চাষে অনেক খরচ হয়। ধনিয়া ও কালোজিরা ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহের জন্য ১৫৬টি বাক্স বসানো হয়েছে। তবে আবহাওয়া কিছুটা খারাপ হওয়ার কারণে মধু কম সংগ্রহ হয়েছে। মধু চাষে তেমন কষ্ট হয় না। কালোজিরা ক্ষেতের পাশে একবার মৌ-বক্স বসালেই মৌমাছি কালোজিরার মধ্যে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে। অল্প দিনেই অনেক মধু পাওয়া যায়।

শেখপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকা থেকে গ্রামে মধু কিনতে এসেছি। রাস্তার পাশে মধু সংগ্রহ করা দেখে বাইক থামিয়ে মধু কিনলাম। এখানে একদম প্রাকৃতিক খাঁটি মধু পাওয়া যায়। দামেও কিছুটা কম। তাই একবারে বেশি করে কিনে নিয়ে যাবো।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন করে বনজ, ফল ও কৃষি ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। এক ফুলের পরাগ অন্য ফুলের ডিম্বাশয়ে পড়লে পরাগায়ন ঘটে। মৌমাছি পালনকারী এবং কৃষক উভয়ই ফসল উৎপাদনে উপকৃত হয়।

উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছর দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক মধু চাষী তাদের মৌমাছি কলোনি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করতে উপজেলায় আসেন। এবার উপজেলায় ৪ হাজার ২৮০টি মৌমাছির বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন।  এ ব্যাপারে কৃষক ও মৌবাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষি অফিস নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo