চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ শীতকালীন সময়ে জনপ্রিয় দেশের বৃহত্তম খেজুর গুড়ের হাট চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জে। সপ্তাহে দুদিন শুক্রবার ও সোমবা সরোজগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্কুল মাঠে প্রায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন এই খেজুর গুড়ের হাট। শীতকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খেজুরের গুড় কিনতে ভীড় জমায় ব্যাপারীরা।
হাট মালিক সুত্রে জানা গেছে,এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। তবে চাহিদা আছে আরও বেশী প্রতিনিয়ত খেজুর গাছ নিধনের কারনে এবার এই হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি থাকা সত্বেও গাছিরা গুড় সরবরাহ করতে পারছে না ।
জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, খেজুর গাছের সংখ্যা কম থাকায় গুড় উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কৃষক পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খেজুর গুড়ের হাট সরজমিনে দেখা গেছে, হাটের চারপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের হাক ডাকে মুখরিত । এই হাটে এবার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। কৃষকরা তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। আবার অনেক খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি দেশে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
এদিকে জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, গুড়ের চাহিদা পূরণ ও সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি করা। দেশে গুড়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ায়। একই সঙ্গে গুড়ের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখা যায়।
হাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের গুড়ের হাটে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে। এই হাটের গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌছে যাচ্ছে। জানা গেছে ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ি, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহিসহ আরও অন্যান্য জেলায় এই গুড় সরবরাহ এবং বিক্রেতারও এই হাটে গুড় কিনতে আসেন। এই হাটে গুড় বেচাকেনা করে কৃষক ও হাটমালিকরাও লাভবান হচ্ছে। এবং এই হাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকার মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হচ্ছে বলে জানান সাধারণ মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের এই খেজুর গুড়ের হাটে প্রতি সপ্তাহে এসে এসে প্রায় ট্রাক ট্রাক গুড় কিনে নিয়ে যাই ব্যাপারীরা । এই হাটের গুড়ের গুনগতমান ভালো তাই অনান্য জেলায় এই গুড়ের চাহিদাও অনেক বেশি।পাশাপাশি এই হাট থেকে গুড় কিনে অন্যহাটে বিক্রি করে ভালো লাভও হয় ব্যপারীদের।
গাছিরা বলেন খেজুর গুড়ের ভালো দাম না পাওয়ার কারনে চাষীরা খেজুর গাছ কেটে ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। একারনে প্রতিনিয়ত খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় ও গুড় উৎপাদনও কম হচ্ছে ।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট জমে উঠেছে। সপ্তাহের দু-দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাটে খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয়। তবে এবার জানা গেছে যে হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়ানোর জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেলার কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি গাছ। আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০টি গাছ, দামুড়হুদায় নয় হাজার ২০০টি গাছ, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০টি গাছ। মোট এবার খেজুর গাছের সংখ্যা দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে এবার গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা গুড়ের বিক্রির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবার এই গাছ প্রস্তুতে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের।
মন্তব্য ( ০)