• সমগ্র বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাসপাতাল থেকে গায়েব হওয়া সেই লাশ উদ্ধার

  • সমগ্র বাংলা
  • ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৮:১৯:২৮

প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে গায়েব হওয়া নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের শ্রমিক মুজাহিদের (১৮) লাশের সন্ধান মিলেছে। লাশটি দি নিউ ল্যাব এইড হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে বসে কোনো অভিযোগ না দেওয়ার শর্তে চার লাখ টাকায় বিষয়টি রফার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার পক্ষের লোকজন। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার সামনে নির্মাণাধীন জেলা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মুজাহিদ মারা যান। তিনি সরাইল উপজেলার উচালিয়াপাড়ার অলিউর রহমানের ছেলে। 

মুজাহিদকে হাসপাতালে নিয়ে আসা শ্রমিকরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। সোমবার সকালে মসজিদের দেয়ালে পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছিলেন মুজাহিদ। এসময় নিচে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হন। অচেতন অবস্থায় তাকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ঘোষণা করার পর মুজাহিদের লাশ কাউকে কিছু না বলে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্টাফরা জানান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করার পর জরুরি বিভাগ থেকে পুলিশকে জানিয়ে লাশ মর্গে পাঠানো হয় এবং মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া শ্রমিকের লাশটি গোপনে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গের ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম সুমন বলেন, একটি লাশ মর্গে নিয়ে যেতে জরুরি বিভাগ থেকে ফোন দেওয়া হয়। মাত্র পাঁচ মিনিটের ভেতরে মর্গ থেকে ট্রলি নিয়ে এসে দেখি লাশটি জরুরি বিভাগে নেই। বিষয়টি আমি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। পরে প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর খোঁজ করে লাশটি শহরের কুমারশীল মোড়ের দি নিউ ল্যাব এইড হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ঠিকাদারের লোকজন লাশটি সেই হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বসেই তাৎক্ষণিক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিনের নেতৃত্বে চার লাখ টাকায় বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। সেখানে ইয়াছিন ছাড়াও পশ্চিম মেড্ডার এলাকার হাজি বকুল নামে এক বিএনপি নেতাও ছিলেন। এই বিষয়ে হাসপাতালে খবর পেয়ে
আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নির্মাণ শ্রমিক মারা যাওয়ার খবর পেয়ে এসে লাশ পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, কাউকে কিছু না বলে লাশটি নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে সহকর্মী এসআই আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, লাশটি কুমারশীল মোড়ের ল্যাব এইড হাসপাতালে পাওয়া গেছে।

সেখানে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন উপস্থিত আছেন। তিনি ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে। আওয়ামী লীগ নেতা তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন বিষয়টি মীমাংসার পথে উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বসেছিলাম। নিহত শ্রমিকের কোনো অভিভাবক পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে সে যে আরেক শ্রমিকের অধীনে ছিল তার কাছে চার লাখ টাকা দেওয়ার কথা হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদার হিরু সাহেব আস্থা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে এখনো কথা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসাইন বলেন, তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠাতে বলেছি। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্ত করে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

এদিকে নিহত শ্রমিকের মামী লিপি বেগম অভিযোগ করেন, শুধু বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজন মানুষের শরীরের এই অবস্থা হতে পারে না। তারা কেউ এগিয়ে এসে মুজাহিদকে ধরেনি। তাদের গাফিলতি ছিল।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo