• বিশেষ প্রতিবেদন

বগুড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে লাচ্ছা-সেমাই কারখানার কারিগররা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৯ এপ্রিল, ২০২৩ ২২:০৫:৩২

ছবিঃ সিএনআই

সঞ্জু রায়, বগুড়া: বগুড়ায় ব্যস্ততম সময় পার করছে লাচ্ছা সেমাইয়ের কারিগররা। রমজানের শুরু থেকেই চাহিদার শীর্ষে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি রেশমি সেমাই ও লাচ্ছার। ডালডা ও পাম অয়েলের দাম কমলেও শ্রমিক, বিদ্যুৎ ও ময়দার মুল্যবৃদ্ধির কারণে এবছর কিছুটা বেশী দামেই কিনতে হবে লাচ্ছা সেমাই। তবে করোনা প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে এবার বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় প্রায় চারশো কোটি টাকার লাচ্ছা-সেমাই বেচাকেনার আশা কারখানা মালিকদের।
রীতি অনুযায়ী ঈদের সকালে মায়ের হাতের লাচ্ছা সেমাই ছাড়া যেন কিছুটা অপূর্ণই থেকে যায় ঈদ আনন্দ। আর অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে মাহে রমজানের ইফতারেও মেন্যুতেও থাকে লাচ্ছা সেমাইয়ের নানা পদ। তাইতো বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণে রমজানের শুরু থেকেই ব্যস্ততম সময় পার করছেন বগুড়ার লাচ্ছা-সেমাইয়ের কারখানাগুলো।

মেশিনের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ময়দা থেকে তৈরি হচ্ছে চিকন সেমাই আর রোদে শুকিয়ে ভাজার পর প্যাকেটজাত করা হচ্ছে সেমাই যা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর খুশির দিনে ভাল মানের সেমাই সরবরাহ করে মানুষকে তৃপ্তির স্বাদ দিতে তাইতো দম ফেলার ফুরসত নেই বগুড়ার নুসরাত, কাকলী, মলি বেওয়াদের মতো সেমাই কারিগরদের।আধুনিক মেশিন ব্যবহার করে এক একটি কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিকের পরিশ্রমে প্রতিদিন উৎপাদন করা হচ্ছে চিকন সেমাই। আর দশ কিংবা এগারো প্যাচের হাতের কায়দায় পানি, ময়দা আর ডালডার মিশ্রনে তৈরি রোল থেকে কয়েকধাপে তৈরি করা হচ্ছে মুখরোচক লাচ্ছা। আর রমজানে চাহিদা বেশী থাকায় অতিরিক্ত লাচ্ছা তৈরি করতে কারখানাগুলোতে যোগ দিয়েছেন মৌসুমী কারিগরদের অনেকে। বগুড়া এরুলিয়া বিমানবন্দর এলাকার সেমাই কারখানার শ্রমিক মলি বেওয়া জানান, ঈদকে সামনে রেখে তাদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তাদের তৈরি সেমাই বগুড়ার পাশাপাশি উত্তরের ১৬ জেলাসহ পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর অন্যদিকে প্রতিদিনের কাজ শেষে তারা অভিজ্ঞতা ও বয়স বিবেচনায় ২’শ থেকে ৪’শ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাচ্ছেন যাতে পরিবারের হাল ধরতেও তারা সহায়ক হচ্ছেন।এছাঢ়াও বগুড়ার প্রসিদ্ধ খাজা বেকারি ও লাচ্ছা কারখানার এক শ্রমিক জানান, রমজানের শুরু থেকেই তারা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। তাদের নির্দিষ্ট শ্রমিকের পাশাপাশি ভোক্তা চাহিদা মেটাতে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন মৌসুমী কারিগররাও। তিনি জানান, ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছার পাশাপাশি সাধারণ লাচ্ছার চাহিদা বেশি থাকে ঈদের বাজারে তাই তারা নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে লাচ্ছা তৈরি ও দ্রæত তা বাজারে পৌঁছানোর।

তবে বগুড়ার বিভিন্ন লাচ্ছা ও সেমাই কারখানা এবং স্থানীয় বিভিন্ন বাজার সরিজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিকেজি খোলা সেমাইয়ের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। যে সেমাই আগে ভোক্তারা পেয়েছে ৬০ টাকায় তা এখন পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত সেমাই ১’শ টাকা। অন্যদিকে ননব্রান্ড লাচ্ছায় ১০ এবং ব্রান্ডের লাচ্ছায় বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। আর ব্রান্ডের প্রতিকেজি ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছার জন্য এবার ভোক্তাদের গুণতে হবে ৮শ থেকে ১৫শ টাকা। ডালডায় ভাজা দুই থেকে আড়াইশ আর সোয়াবিনে ভাজা লাচ্ছা কিনতে হবে ২৪০ টাকা কেজি।

এদিকে দাম কেন বাড়লো এবং এবছর ঈদ মার্কেটে লাচ্ছা-সেমাই কেমন বিক্রি হবে এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট এন্ড কনফেকশনারী প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদ এর সহ-সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ শেখ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পাম ওয়েলে ব্যারেল প্রতি ৩ হাজার টাকা আর ডালডার কেজিতে প্রায় ১৪ টাকা কমলেও বেড়েছে ময়দার দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা ময়দায় ১২’শ টাকা বেড়েছে সাথে শ্রমিক ও বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায় এবছর দাম কিছুটা বাড়বে। তবে গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ভাল ব্যবসা হবে বলে জানান তিনি। তাদের সমিতির তথ্য অনুযায়ী এবার রমজানে শুধুমাত্র বগুড়ায় ব্রান্ড-নন ব্রান্ড মিলে উৎপাদন হবে অন্তত ২৫ হাজার মেট্রিকটন লাচ্ছা সেমাই। তাদের প্রত্যাশা এবার বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় কেনাবেচা হবে প্রায় ৪শ কোটি টাকার লাচ্ছা সেমাই।

 

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo