• বিশেষ প্রতিবেদন

আশুলিয়ায় এক-চাকার সাইকেলেই জীবিকা নির্বাহ, সরগরম হয়ে উঠেছে পিঠা বিক্রি 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ২১:৫৩:২৪

ছবিঃ সিএনআই

মশিউর রহমান, সাভার প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে  চলছে শীতের পিঠা বিক্রি। রাস্তার বিভিন্ন মোড়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটের সামনে খোলা আকাশের নিচে শীতের পিঠা বিক্রি করছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। তবে পুরুষের চেয়ে নারী পিঠা বিক্রেতাই বেশি। তেমনি দীর্ঘ ৪ বছর যাবত শীতের সময়ে সড়কের পাশে ভাপা পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মিঠু মিয়া নামে এক দরিদ্র ব্যক্তি। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। শুধু যে কর্মজীবী মানুষেরা এই পিঠা খান তা নয়, সব শ্রেণি পেশার মানুষ এই পিঠা খেতে আসেন। 

সরেজমিনে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অলি-গলি, রাস্তার মোড়ে বসেছে চিতই, ভাপা ও তেলের পিঠার দোকান। সকাল থেকেই এই পিঠা বিক্রি শুরু হয়। ফুঁটপাতের দোকান ঘিরে ক্রেতারা বসে আছেন। নারী বিক্রেতা পিঠা তৈরি করছেন আর গরম গরম পিঠা তুলে দিচ্ছেন সামনে বসে থাকা ক্রেতার প্লেটে। কেউকেউ প্যাকেটে ভরে গরম পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাসায়।

এদিকে আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তার পাশে এক চাকার সাইকেলে করে ভাপা পিঠা বিক্রি করেন কুড়িগ্রাম জেলার রওমারী থানার বাসিন্দা মিঠু মিয়া।

তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শীতের সময় হলেই আমি গ্রাম থেকে শহরে চলে আসি এই পিঠা বিক্রির জন্য। দীর্ঘ ৪ বছর যাবত এক চাকার সাইকেলে করে এভাবেই রাস্তার পাশেই ভাপা পিঠা বিক্রি করে আসছি। কিন্তু মাঝে মধ্যেই পিঠা নিয়ে বসে থাকি কাস্টমারের অপেক্ষায় দুএকজন আসলে পিঠা বিক্রি করি। আর নই বাকী সময় পিঠা নিয়ে এভাবেই দাড়িয়ে থাকি। যেদিন একটু পিঠা বেশি বিক্রি হয় সেদিন লাভের অংশটা বুঝা যায়। তাছাড়া বিক্রি কম হলে তখন চালান তুলতেই হিমশিম খেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এইযে এখন তো শীতের সময় পিঠা বিক্রি করছি। কিন্তু গুড়ের দাম, চাউলের দাম ও তেলের দাম এই সব কিছুর দামই বেশি। আমরা বেশি দামে কিনলেও বেশি দামে বিক্রি করতে পারি না। বেশি দামের কথা বললে কাস্টমার আসেই না।

শীত চলে গেলে বাকী সময় কি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, শীত চলে গেলে বেশিরভাগ সময়ই রিকশা অথবা কৃষি কাজ করে কাটিয়ে দেই।

 পিঠা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও তেলের পিঠাই সাধারণত বানান তারা। এসব পিঠার দামও খুব বেশি নয়। আর চাহিদাও অনেক। চিতই পিঠা ৫টাকা, তেলের পিঠা ৫ টাকা, ভাপা পিঠা ১০টাকা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেয়া হয় সরিষা ভর্তা ও শুটকি ভর্তা। আর ভাপা পিঠার সঙ্গে খেজুরের গুড় মিশ্রিত থাকে।

আশুলিয়া থানার পাশে গত প্রায় ৫ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন নুর ইসলাম। তিনি বলেন, শীতের পিঠা বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমার স্ত্রীও শীতের পিঠা বিক্রি করে। আমরা সারা বছরই বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করি। তবে শীত আসলে এ ব্যবসা জমজমাট থাকে। বেশ লাভবান হওয়া যায়।

তিনি বলেন, কাল আমরা দুজন মিলে প্রায় দুই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেছি। শীত শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। সামনে আরো বেশি পিঠা বিক্রি হবে। 

পল্লীবিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ডের সামনে কথা হয় পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি ৬ বছরের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় শীতের পিঠা বিক্রি করছি। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষই আমার পিঠা খায়। বাইরে থেকেও ক্রেতা আসে আমার পিঠা খেতে।

পিঠা খেতে আসা, কবির হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, শীতে এখানে আমি মাঝে মধ্যে পিঠা খেতে আসি। অল্প খরচে খাওয়া হয়। গরম গরম পিঠা খেতে বেশ লাগে। 

তিনি আরও বলেন, আমার ৩ টা সন্তান রেখে আমার স্বামী মারা গেছে। আমি পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাই। আমি সব সময় ভাপা পিঠা বিক্রি করি।  শীত বেশি পড়লে শীতের পিঠাও বেশি বিক্রি হয়।

নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে পিঠা বিক্রেতা সাজেদা বেগম ক্রেতার ভিড়ে কথাই বলতে পারছিলেন না। বেশ কিছুক্ষন পর নিজের মেয়ের হাতে দায়িত্ব দিয়ে বললেন, এই সময়টায় কাস্টমার বেশি থাকে। সবাই আগে পেতে চায়। তাই ঝামেলায় পড়ে যাই। 

তিনি জানান, প্রায় ৩ বছর এখানে পিঠা বিক্রি করছেন । শুধু শীতের সময় চিতই, ভাপা ও তেলের পিঠা বিক্রি করেন। বছরের বাকি সময়টাতে অন্য কাজ করলেও এখন পিঠা বিক্রি করে সংসার চলে তার।

তিনি আরও বলেন, শীতের সময় এসব পিঠার চাহিদা বেশি। বিক্রি বেশ ভালো হয়। সারাবছর পিঠা বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। আমার স্বামী কাজ করতে পারে না, অসুস্থ্য। তাই পরিবারের সব দায়িত্ব আমার। ও এখন আমাকে সাহায্য করে। প্রতিদিন যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে রাখি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo