• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

সর্বনাশা চায়না জালে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় মাছ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ২২ জুন, ২০২২ ১৪:০৬:০২

ছবিঃ সিএনআই

মোঃ মনিরুজ্জামান, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)ঃ তুরাগ, বংশাই, ঘাটাখালী ও কাটাখালী নদী বেষ্টিত গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈ উপজেলা। এই উপজেলায় রয়েছে অলোয়া বিল,মকশ বিল,বগাবাড়ীর বিল,উকুনমারি বিল,শালিকমারা বিল,জোগারহাড়ি বিলসহ বেশকিছু বড়, বড় বিল। যা স্হানীয়ভাবে দেশীয় মাছের বড় যোগানদাতা। ইতিমধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে  নদ-নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে মাছের প্রজনন মৌসুম। আর মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট ও বাধাই জালের পর এবার ভয়ঙ্কর চায়না ম্যাজিক জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। অবৈধ ওই জাল দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা মা মাছ নিধন করলেও মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের নেই নজরদারী। অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা নদীতে অবাধে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় চলতি বছরেই দেশীয় মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তির আশংকা করছে অনেকেই।

জানা যায়, চীন দেশের লোকজন তাদের ক্ষেত খামারে বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড় নিধনের জন্য এ জাল তৈরি করে। এটিকে জাল হিসেবে বর্ণনা করা হলেও মৎস বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে চায়না দুয়ারী বা রিংজাল মূলত মাছ ধরার এক ধরণের বিশেষ ফাঁদ। না।একে চায়না জাল, রিং জাল, ম্যাজিক জাল এবং ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয়। এটি প্রায় ৬০ থেকে ৮০ ফুট লম্বা। ছোট ছোট কক্ষ বিশিষ্ট খোপের মতো। এ জাল বাঁশের খুঁটির সঙ্গে জালের দু'মাথা বেঁধে ফাঁদ পেতে রাখে খাল -বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের তলদেশ দিয়ে। জালের কাঠামোতে লোহার থাকায় জালটি পানির তলদেশে পৌঁছায়। এই জাল ক্ষুদ্র ফাঁসের কারণে সেই পথ ধরে ছোট থেকে বড় যে কোন ধরণের মাছ চলাচল করলে অনায়াসে জালের ভিতরে প্রবেশ করবে। এই জালের ফাঁদে যে কোন মাছ প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। এ জালে আটকা পড়ে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতের মাছ। এমন ছোট পোনাও আটকা পড়ে যা কোন কাজে লাগে না বলে সেগুলো ফেলে দেন মাছ শিকারিরা। ডারকি জাল দিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ অবাধে নিধন করছেন। অবৈধ জালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাছের স্বাভাবিক প্রজনন,বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাবে নদ-নদীতে মাছের প্রাচুর্য কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুটি, টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বড় বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও ছোট নদীগুলো। অচিরেই এসব জাল বন্ধ না হলে দেশের মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা স্থানীয়দের।
জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না। উপজেলার খাল-বিল ও নদীগুলোর স্বল্প পানিতে এই জালের ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরেজমিনে, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মেদিআশুলাই, নামাশুলাই, বাশঁতৈল-মকস বিল, ডুবাইল, নিশিন্দাহাটি, শ্রীফলতলী, হিজলতলী ও টালাবহ গ্রাম ঘুড়ে সারি সারি চায়না জাল দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। আর অবাধে ডিমওয়ালা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পোনা মাছও ধরা পড়ছে এই জালে। এভাবে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ ধরলে মাছের অভাব দেখা দেবে।

চাপাইর ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, এই চায়না জালের প্রতি সকল নমানুষই ক্ষিপ্ত। আমি নিজেও এই সর্বনাশা জালকে ছাপোর্ট করি না। ইলিশ নিধন আইনের মত চায়না জাল দিয়ে ডিমওয়ালা মা মাছসহ ছোট ছোট মাছ নিধনের বিষয়টি আইনের আওতায় আনা হলে ভালো হয়। এই সর্বনাশা জাল দিয়ে মাছ নিধনের বিষয়ে যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তা না হলে আমরা দেশি মাছ আর খুজে পাব না।

স্থানীয় পেশাদার জেলে গোবিন্দ বলেন, যারা অরিজিনাল জেলে সম্প্রদায় মাছ ব্যবসায়ী তারা কখনোই এই চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার পক্ষে না। এই জাল দেশে আসাতে অতি শীঘ্রই দেশি মাছের ব্যপক ঘাটতি দেখা দিবে। চায়না জালে সব ধরণের ছোট-বড় মাছই উঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায়, অহরহ স্থানীয় মৌসুমী মৎস্য শিকারীরা মাছ ধরতে নেমেছে। ফলে আমরা যারা বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে মাছ ধরি তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না জাল কিনছে। এখন চায়না জাল দিয়ে যেভাবে ছোট মাছ ধরা হচ্ছে, তাতে শুষ্ক মৌসুমে মাছের তীব্র আকাল হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ বলেন, চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে অচিরেই নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব চায়না জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্হ্যা গ্রহন করা হবে। আমরা সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এ বছরও আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo