• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

নির্ধারত নতুন দামে চা পাতা কিনছে না কারখানাগুলো, বিপাকে চা চাষিরা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ২২ মে, ২০২২ ১০:০২:১১

ছবিঃ সিএনআই

এস কে দোয়েল,তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়):  পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কাঁচা চা পাতার নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সে নির্ধারণ কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সে দামে চাষিদের কাছ থেকে পাতা কিনছে না চা কারখানাগুলো। এমন অভিযোগ চা চাষিদের। তাদের অভিযোগ গত ১৮ মে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির জরুরী সভায় প্রতি কেজি চা পাতার ১৮ টাকা নির্ধারন করা হলেও সে দামে পাতা কিনছে না কারখানা। ফলত তাদেরকে আগের দামেই ১১/১২ টাকায় পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে। আর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাঁচা চা পাতার ২৫-৪০% পর্যন্ত কেটে নিচ্ছে। এতে করে চাষিরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন বলে জানিয়েন তারা।

চাষিদের অভিযোগ, কারখানাগুলো আমাদের কাছ থেকে কম দামে চা পাতা সরবরাহ করে উৎকৃষ্টমানের পাতায় উৎপাদিত চা নিলাম বাজারে না দিয়ে গোপনে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে বিক্রি করা হচ্ছে। আর খারাপ পাতা দিয়ে চা উৎপাদন করে অকশন মার্কেটে তুলে চায়ের মান খারাপ এনে কৃষকদের ঠকানো হচ্ছে।

শালবাহান পেদিয়াগছ এলাকার চা চাষী ইমরান খানসহ কয়েকজন জানান, এ অঞ্চলে প্রথম চা বাগান গড়ে উঠেছে। আশা নিয়ে চা বাগান তৈরি করেছে চা চাষী ও বাগান মালিকরা। বর্তমানে এক কেজি কাঁচা চা পাতায় উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১৪/১৫ টাকা। কিন্তু কারখানা মালিকরা চা পাতা কিনতে চান মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকায়।

শারিয়াল জোত গ্রামের চা চাষি মজিবর রহমান, প্রেমচরণজোত গ্রামের আনোয়ার হোসেন, দর্জিপাড়া গ্রামের আব্দুল করিম জানান, চা পাতার নতুন দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করার কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরের দিন চা পাতা কারখানায় নিয়ে গেলে পাতা না নেওয়ার কথা জানান তারা। পরে পাইকারদের সাথে কথা বললে তারাও একই কথা বলেন। এখন ১২/১৩ টাকায় পাতা নিচ্ছে, আবার ২৫-৪০% পর্যন্ত কেটে নিচ্ছে। তাহলে নতুন দাম নির্ধারন করে লাভ কী হলো, তারা কি প্রশাসনের নির্ধারণ কমিটিতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন না?

তেলিপাড়া গ্রামের চা চাষি আহসান হাবিব জানান, এ মৌসুমে পাতার দাম পাচ্ছি না। পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে ১১-১২টাকায়। লাভের জায়গায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষকরা চা পাতার ন্যায্য মূল্য পেতে রাজপথে আন্দোলন, মানববন্ধন করলেও কোন টনক নড়ছে না। গত বুধবার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে মূল্য নির্ধারণ কমিটির জরুরী সভায় চা পাতার কেজি প্রতি ১৮ টাকা হলেও কারখানাগুলো সে দামে পাতা নিচ্ছে না। খুব বিপাকে রয়েছি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, তেঁতুলিয়ায় ১ হাজার ২শত ৯০ হেক্টরের বেশি জমিতে গড়ে উঠেছে চা বাগান। নিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ১ শ ৬৮ টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৬ হাজার। ১৪ টিরও বেশি গড়ে চা কারখানা গড়ে উঠলেও চা পাতার দাম না পাওয়ায় হতাশায় রয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা।

মহামারী করোনাকালে এ অঞ্চলে ২০২১ সালে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কেজি চা রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙা হয়েছে। উৎপাদনে রেকর্ড হলেও চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত গুণতে হচ্ছে লোকসান। এভাবে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে সমতলের চা-শিল্প।

তবে কারখানার মালিকদের অভিযোগ, নিলাম বাজারে চায়ের দরপতন, মানসম্পন্ন চা পাতা সরবরাহ না করায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। চায়ের নিলাম বাজার যখন ভালো ছিল তখন ২৪ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে চা পাতা কিনেছেন তারা। বর্তমানে নিলাম বাজারে সিলেটের চা থেকে পঞ্চগড়ের চায়ের মান নিম্ন। ‘দুটি পাতা একটি কুড়ি’ এই নীতি না মেনে বাগান থেকে চা পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ কারণে মানসম্পন্ন চা উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। এজন্য নতুন নির্ধারিত দামেও চা পাতা কিনতে পারছেন না মালিকরা।

গ্রিন কেয়ার চা কারখানার ম্যানেজার মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, এটি সত্য নয়। চা-পাতার দাম অকশন বাজারের ওপর নির্ভর করে। এক কেজি চায়ের অর্ধেক পাবে কৃষক আর অর্ধেক পাবে কারখানা। সেই অনুযায়ী চায়ের মূল্য নির্ধারণ হয়।’বিশেষ করে চা পাতা তোলার নিয়ম হচ্ছে হাতে তোলা। এক কুঁড়ির তিন পাতা পর্যন্ত। কিন্তু এখানকার চাষিরা ৪-৮ পাতা পর্যন্ত নিয়ে আসছে কারখানায়। যার কারণে চায়ের মান খারাপ হলে মূল্য হ্রাস ঘটছে। বাগান থেকে নিয়মমত পাতা কেটে কারখানায় আনলে কৃষিক নতুন নির্ধারিত ১৮ টাকাই পাবে বলে জানান তিনি।

গত ১৮ মে জেলা প্রশাসকের ডাকা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ জরুরী সভায় কারখানা মালিকদের কালোবাজারির কথা উঠে আসলে সদর উপজেলা চেয়াম্যান আমিরুল ইসলাম একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম একটি টাস্কফোর্স কমিটি করার সিদ্ধান্ত  নেন। বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক শাখার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামিম আল মামুনকে চাষীদের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে দিতে বললে ড. শামিম আল মামুনের মতামতের ভিত্তিতে ১৮ টাকা প্রতি কেজি চায়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo