• বিশেষ প্রতিবেদন

ধামরাইয়ে অবৈধ ভাবে কাঠ পুড়িয়ে হ‌চ্ছে কয়লা তৈরি, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১১:৫৭:০০

ছবিঃ সিএনআই

সাটু‌রিয়া (মা‌নিকগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সাটু‌রিয়ার পার্শবর্তী ঢাকা জেলার ধামরাই‌য়ে জনবসতি থেকে কিছুটা দূরে নির্জন এলাকায় দূর থেকে চোখে পড়বে ছোট ছোট সাদা রঙের ঢিবি। দেখতে সুন্দর হলেও মাটি, ইট ও কাঠের গুড়া দিয়ে বানানো এসব ঢিবি মূলত গাছ উজারের মাধ্যম। 

স্থানীয়রা এটিকে চুলা বা চুল্লি বলেই চেনে। নির্বিচারে কেটে আনা হাজার হাজার গাছ এসব চুল্লিতে পুড়িয়ে বানানো হয় কয়লা। এ সব চু‌ল্লির নির্গত ধুয়ার কুণ্ডলী দূষণ ছড়াচ্ছে পরিবেশে। পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে জনজীবন ও জৈববৈচিত্র। এসব অবৈধ চুল্লির মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস পায়না কেউই। এমনকি অসাধু চুল্লি মালিকদের বিরু‌দ্ধে কথা না ব‌লে জনপ্রতিনিধিরাও শোনাচ্ছে নরম সুর। তবে ধামরাই বন বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত এসব চুল্লি ভেঙে ফেলার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

ঢাকার ধামরাই উপজেলার দুটি ইউনিয়নে এমন প্রায় ১৫-২০টি চুল্লির সন্ধান পাওয়া গেছে। গাছ কে‌টে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির এমন প্রক্রিয়া অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও এসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পুড়নো। বছরের পর বছর এসব চুল্লিতে টনকে টন গাছ কেটে পোড়ানো হলেও প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। ক্ষোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাহস দেখায় না। তাইতো গাছপালা উজারকারীরা দিনের পর দিন হয়ে উঠছেন বেপরোয়া।

ধামরাই উপজেলার বাইশাকান্দা ও বালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে প্রকাশ্যে অবাধে বনের কাঠ পোড়ানোর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বাইশাকান্দা ইউনিয়নের গোলাকান্দা গ্রামে ৮টি চুল্লির মালিক হারুন অর রশিদ। আর বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামে আরও ৬টি চুল্লির মালিক নাহিদ রানা ও মো. ইমরান। দক্ষিণ গাঁওতারা এলাকায় ২টি চুল্লির মালিক নুরুল ইসলাম। চুল্লি গুলোর সামনে কেটে রাখা হয়েছে মণকে মণ বনের গাছ। প্রতিটি চুল্লিতে ২০০-৩০০ মণ কাঠ প্রবেশ করিয়ে আগুন দেয়ার পর খোলা অংশটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর টানা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কাঠ পোড়ানো শেষ হলে কয়লা বের করা হয়। একেকটি চুল্লি থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকার কয়লা পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব এলাকার অনেক বাসিন্দারা এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, বছরের পর বছর এসব চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ গুলো আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে চুল্লির মালিকরা। যখন কাঠ পোড়ানো শুরু হয় চুল্লি থেকে প্রগান্ড ধোয়ার কুন্ডলী বের হতে থাকে। এতে আশপাশের পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় বয়োবৃদ্ধ, শিশু সহ অনেকের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে চোখ জ্বালাপোড়া করে। গোপনে অনেকে প্রতিবাদ করলেও প্রকাশ্যে বলার সাহস পায় না। কারণ এসব চুল্লির মালিকরা প্রভাবশালী।

ধামরাই পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক সিয়াম সারোয়ার জামিল বলেন, যত্রতত্র অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লা কারখানা পরিবেশের জন্যে হুমকি স্বরূপ। এগুলো থেকে সারা দিন ধোঁয়ার কুন্ডলী নির্গত হচ্ছে। একেতো নির্বিচারে গাছ কেটে বনভূমি উজাড় করে এখানে পোড়ানো হচ্ছে। অন্য দিকে ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জানাচ্ছি।

বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের চুল্লির মালিক নাহিদ রানা বলেন, দেখেন ওনে ৬ ডা না কয়টা চুলা আছে? ৬টা থাকলে ৬ডাই আছে। ইটখোলাতো চলবানছে, ওগলাইতো পরিবেশ দূষণ হয়। আমারডা অবৈধ। সব অবৈধ ব্যবসা এগনা। যে মুনে চালাই পারি চালাই। না পারলে বন্ধ থাকবো।

নাহিদের সঙ্গী আরেক মালিক মো. ইমরান বলেন, ওহানে যা আছে আমাগো দুই জনেরই। ৫টা চুলা আছে। কত গুলা কয়লা হয় হিসাব নাই। একেক সময় একেক রকম বাইর হয়। কাঠ এইগলা বিভিন্ন জায়গা থাইকা বেপারী আইসা দিয়া যায়।

আর্থিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নে বলেন, ওইসব ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারলাম না। ওইগলা সব আমার পার্টনার নাহিদ জানে।

দক্ষিণ গাঁওতারা এলাকার নুরুল ইসলাম নামে আরেকজন চুল্লির মালিক বলেন, লিখিত কোন অনুমতি নেই। অনুমতি সবারই মুখে মুখে আছে। পরিবেশের ক্ষতিতো একটু হইবই।

তবে বাইশাকান্দা ইউনিয়নের গোলাকান্দা গ্রামে হারুন অর রশিদের চুল্লির তথ্য সংগ্রহের সময় তার লোকজন বিদ্রুপ করে বলেন, ছবি তুইলা নিয়া যান গা। আপনারা নিউজ করলে কি হইবো?

তবে চুল্লির মালিক হারুন অর রশিদকে অনেকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, এটার বিরুদ্ধে ওই গ্রামের লোকজনকে আইডিয়া দিছি। তারা এসবের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরও নিয়েছে। অন্যদের মাধ্যমে জিনিস গুলা বন্ধ করে দেয়া যায় কি না? সরাসরি ডাইরেক্ট আমি না যাইয়া। অন্যদের দিয়া অভিযোগ করাইয়া।

ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মোতালেব আল মামুন বলেন, দুই বছর আগে আমরা ভাইঙ্গা দিয়েছিলাম। পরে আমার বদলি হওয়ায় আমি চলে গিয়েছিলাম। সম্প্রতি আমি আবার এখানে জয়েন করেছি। আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়ে এটা ভেঙ্গে দিবো। আগামি সপ্তাহে ইনশাল্লাহ আমরা ওটা ভেঙ্গে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo