• বিশেষ প্রতিবেদন

নাগরপুরে বিলুপ্তির পথে কামার শিল্প!

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১৬ মার্চ, ২০২১ ১০:৫৮:১৮

ছবিঃ সিএনআই

নাগরপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বিলুপ্তির পথে প্রায় কর্মকারদের কামার শিল্প। এখন আগের মত আর নেই কামার শিল্পের কাজ কর্ম। শুধু ঈদ আর পূজা পার্বনেই কামারদের কাজের কদর বাড়ে। সারা বছর নানা সংকট আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাটছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর কামার সম্প্রদায়ের দিনগুলো। ক্রমাগতভাবে লোহা ও কয়লার দাম বাড়তে থাকায় টিকে থাকতে পারছে না কামার সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত কামাররা। তাই ইতোমধ্যে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়। কামার শিল্পের সাথে জড়িত কামাররা জানায়, দীর্ঘদিন পূর্ব থেকে নাগরপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার কামার শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। 

যারা নিজেরাই লোহা দিয়ে কামারের কাজ করতেন। পর্যায়ক্রমে এ শিল্পের চাহিদা কম হওয়া ও লোহার দাম ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে নাগরপুরে অর্ধশতাধিকের মতো কামার পরিবার রয়েছে। অনেক কষ্টে তারা অভাব অনাটনের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। আগের চেয়ে তাদের কাজের চাহিদা কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে চলছে তাদের সংসার জীবন। ১০/১২ বছর আগে নাগরপুর বাজারে প্রায় ২০ টি পরিবারের প্রধানরা এই পেশায় জড়িত ছিল। বর্তমানে সেখানে ৮টি পরিবারের প্রধান এ পেশার সাথে জড়িত আছে। নাগরপুর বাজারে মোঃ আক্তার কর্মকার আমার সংবাদকে বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর যাবত এই পেশার সঙ্গে জড়িত। কয়েক বছর আগে এক বস্তা কাঠ কয়লা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কেনা যেতো। এছাড়া ১ মন পাথর কয়লা ৫ থেকে সাড়ে ৫্শ টাকায় পাওয়া যেতো।  

বর্তমানে সেই কয়লা ১৮্শ থেকে দুই হাজার টাকায় কিনতে হয়। আগে ইটের ভাটায় পোড়ানো খড়ি থেকে কয়লা পাওয়া যেতো। বাসা-বাড়ি থেকেও অনেক কয়লা পাওয়া যেত। বর্তমানে গ্যাসের চুলা হওয়াতে কয়লা আর পাওয়া যায়না। কামার শিল্পের জিনিস পত্রের দাম বানের পানির মতো বেড়েই চলেছে। কয়েক বছর আগেও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে ১ কেজি লোহা পাওয়া যেত। বর্তমানে সেই লোহা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে কিনতে হয়। এছাড়া আগের মতো বাজারে ভালো লোহাও পাওয়া যায়না। চাপাতি বানানোর জন্য স্প্রিং ৭০ টাকার পরিবর্তে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে কিনতে হয়। তাও আবার অনেক কষ্টে পাওয়া যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়লা কিনে আনতে হয়। সেই তুলনায় মজুরী বা তৈরীর মূল্য তেমন একটা বাড়েনি। উপজেলার দুয়াজানি গ্রামের মো. বাদশা মিয়া (কামার) প্রতিবেদকে বলেন, প্রায় ৮০ বছর আগ থেকে আমার বাবা এই পেশায় জড়িত ছিল আমিও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত আছি। নতুন করে এই কাজে কেউ আসতে চায়না। কারণ প্রচন্ড গরম, উত্তপ্ত লোহা এবং চুলার আগুনের পাশে বসে কাজ করা ভিষণ কষ্ট দায়ক। কয়লার ধোয়া নিঃশ্বাসের সাথে তাদের শরীরের মধ্যে ঢুকে যায়।

ফলে তারা প্রায় শ্বাস-কষ্ট ও পেটের পিড়ায় ভুগতে হয়। তবুও পৈত্রিক এই পেশা ছেড়ে যেতে পারছি না। তিনি জানান, ঈদ-পূজা পার্বণে তাদের কাজের চাহিদা একটু বাড়ে। বিশেষ করে কোরবানীর ঈদে প্রতিদিন হাজিরা ৫ থেকে ৬শ টাকার মতো হয়। অন্য সময় ২ থেকে ৩শ টাকা হাজিরা পাওয়া যায়। তবে মাঝে মধ্যে খালি পকেটে বাড়ি ফিরতে হয়। তিনি আরও জানান, ঈদ এবং পূজার সময় ছুড়ি, চাকু, বটি, চাপাতি, বানানোর ধূম পড়ে। তবে কৃষি কাজের জন্য তাদের তৈরী
লোহার জিনিসপত্র নিয়মিত কৃষকেরা তৈরী বা ক্রয় করে থাকেন। এছাড়া অনেকেই বাজার থেকে ষ্টীলের তৈরী বিদেশী ছুড়ি, চাকু ইত্যাদি কিনে আনেন। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় কামার শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকেরা এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের সদ্বিচ্ছা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। করোনা সময়কালীন সময়ে তাদের করুন ভাবে জীবন যাপন করতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো এই শিল্প হারিয়ে যেতে পারে বলে তিনি জানান। নাগরপুর যদুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব আহসানউদ্দিন মুঠোফোনে প্রতিবেদকে বলেন, গ্রাম অঞ্চলের মানুষ স্বল্পমূল্যে এদের বানানোর উপকরণ ক্রয় করতে পারতো মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে কামার শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এরা আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমি আশা করি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo