• লিড নিউজ
  • জাতীয়

‎ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন: কোন দিকে মোড় নিচ্ছে কূটনৈতিক সম্পর্ক?

  • Lead News
  • জাতীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো বিবাদ— যেকোনো সংকটে সমাধানে যখন ভরসা কূটনীতি, তখন সেই কূটনৈতিক সম্পর্কেই টানাপোড়েন বাড়ছে ঢাকা ও দিল্লির। ঘটছে ভিসা সেন্টার বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলার ঘটনাও। আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাগ-ক্ষোভ বা আপত্তি যতই প্রকট হোক, সংকট সমাধান করতে হবে কূটনীতির মাধ্যমেই। অন্যদিকে, ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকা-দিল্লি শীতলতায় উষ্ণতার জানান দিতে পারে নতুন সরকারের পথচলা।

‎বাংলাদেশ-ভারতে অবস্থিত দুই হাইকমিশনই হচ্ছে বিক্ষোভ কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তু। চলছে রাষ্ট্রদূতকে তলব-পাল্টা তলব, বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়েও গেছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণ পর্যন্তও পৌঁছে গেছে বিক্ষোভকারীরা, ভাঙচুর হয়েছে শিলিগুড়িতে ভিসা সেন্টারে।

‎গেল বছর গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ডিসেম্বরে হামলা হয়েছে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনেও, যদিও এর জেরে দুঃখপ্রকাশ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আলোচনা উঠছে, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী ধরনের আইনি সুরক্ষা রয়েছে?

‎এর উত্তর মিলবে ১৯৬১ সালের এ ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনসে। এর স্বাক্ষরকারী জাতিসংঘের প্রায় সব দেশই। ১৯৬৫ সালে ভারত এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করার ১৩ বছর পর আন্তর্জাতিক এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। যারা ধারা ২২ এ আছে মিশন ও মিশন প্রাঙ্গণের নিরাপত্তার কথা।

‎এখানে বলা হচ্ছে, মিশনের প্রাঙ্গণ হবে অলঙ্ঘনীয়। মিশন প্রধানের অনুমতি ছাড়া সেখানে যেমন কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, তেমনি বিদেশি মিশনগুলোর যাতে কোনোরূপ মর্যাদা হানি না হয় বা কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতিসাধন করতে না পারে সে ব্যাপারেও বিশেষ দায়িত্ব থাকবে স্বাগতিক দেশের। ২২ ধারার ৩ উপধারা অনুসারে— মিশনের প্রাঙ্গণ, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সম্পত্তিসহ যেকোনো ধরনের যানবাহন তল্লাশি, জব্দ বা অধিগ্রহণে আওতামুক্ত।

‎আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ কাজী ওমর ফয়সাল বলেন, ‘এ দায়িত্ব উভয়েরই। যেমন বাংলাদেশের দায়িত্ব রয়েছে আমাদের যে ইন্ডিয়ান হাইকমিশন আছে একে প্রটেক্ট করা। একইভাবে ভারতেরও দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশের হাইকমিশনকে প্রটেক্ট করা। এ দায়িত্ব প্যারামাউন্ট, এর কোনো এক্সসেপশন নেই। আপনি যদি মনে করেন আপনার কোনো ডিপ্লোম্যাট দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে আপনাদের এর প্রতিকার খুঁজতে হবে। আমরা ব্যত্যয় দেখেছি মাঝে মাঝে আগরতলাতে কী হয়েছে, আমাদের কলকাতায় কী হয়েছে।’

‎কিন্তু এখন যা হচ্ছে তার সমাধান কী? আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক রাগ ক্ষোভ যাই থাকুক, সমাধান খুঁজতে হবে কূটনীতিতেই।

‎ওমর ফয়সাল বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক এখনো ওই পর্যায়ে যায়নি যে আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবো। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার সম্পর্ক কেন অবনতির দিকে যাচ্ছে? এর পেছনে কি ইন্ডিয়ায় আশ্রয়প্রাপ্ত বাংলাদেশি অপরাধী আছে তারা দায়ি কি না?’

‎আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক স্মার্তা শর্মা বলেন, ‘ভারতকে আপনি কোনো দেশের সঙ্গে রিপ্লেস করতে পারবেন না। ভাষাগত দিক রয়েছে, লোকেরা বাংলা বলে ভাষা বোঝে। চিপ কস্টে ট্রাভেল হয়। এ রিলেশনশিপ খুবিই সিকিউর একটি রিলেশনশিপ, কিসিউরিটির দিক দিয়ে হোক বা ইকোনমির দিক দিয়ে হোক।’

‎এ ভারতীয় বিশ্লেষক মনে করেন, দুই প্রান্তের সম্পর্কের শীতলতায় উষ্ণতা আনার সুযোগ আছে নতুন সরকারের। যদিও সেখানে শর্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মনে করেন তিনি।

‎স্মিতা শর্মা বলেন, ‘সেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। নয়তো আবার সেই সিচুয়েশন হয়ে যাবে যেটির আরোপ আপনারা শেখ হাসিনার ওপর লাগাচ্ছেন। যে তিনি ইনক্লুসিভ নির্বাচন দিচ্ছেন না। এখন দরকার সেখানে ইনক্লুসিভ নির্বাচন হোক। নির্বাচিত সরকার আসুক। তারপর দিল্লি আর ঢাকার মধ্যে নতুনভাবে চেষ্টা হবে কীভাবে এ সম্পর্ককে স্টেবল করা যায়।’

‎বিশ্লেষকরা বলছেন, পারস্পারিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সম্পর্কই প্রকৃতপক্ষে কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে, নিশ্চিত করতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সুসম্পর্ক।

মন্তব্য (০)





  • company_logo