• শিক্ষা

বালু খেকো কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ৮ মাসেও হয়নি সংস্কার

  • শিক্ষা

ছবিঃ সিএনআই

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) একমাত্র কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বেহাল দশায়। প্রায় আট মাস আগে মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু হলেও, কাজের চরম ধীরগতির কারণে তা এখনও খেলার উপযোগী হয়ে ওঠেনি।ব

রং মাঠজুড়ে কেবল বালু আর বালুর স্তূপ জমায় এটিকে শিক্ষার্থীরা এখন 'বালু খেকো মাঠ' হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন। সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মাঠে খেলাধুলা ও নিয়মিত অনুশীলন কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া পূ্র্বে মাঠের যে সৌন্দর্য ছিল সেটিও নষ্ট হয়েছে বলুর স্তুপের কারণে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বালুর স্তুপকে প্রাচীন পিরামিড বলেও হাস্যরস করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কেন্দ্রীয় মাঠের এমন বেহাল দশার বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষার্থী ও নিয়মিত খেলোয়াড় সানোয়ার রাব্বি প্রমিজ বলেন, "মাঠ ইস্যুতে আমরা শিক্ষার্থীরা বিরক্ত। প্রতিনিয়ত ইন্জিনিয়ার দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দপ্তরে ঘুরি এমনকি ঠিকাদারকে পর্যন্ত বলি। আমরা যখন আন্দোলন করি তখন কাজ হয় আর যখন আন্দোলন করি না তখন কাজের গতি মন্থর হয়। গত ৭ মাস ধরে এখন পর্যন্ত বালু পড়া শেষ হয়নি। প্রথমে আবহাওয়ার কারণে বিলম্ব হচ্ছে বলছিলো এখন ঠিকাদার, সরকারি নিয়মের কারণে গতি কমে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনোদিন নাই যেদিন ব্যক্তিগত ভাবে আমরা ডিপিডি, পিডি, ছাত্রপরামর্শক, প্রক্টরের সাথে দেখা করি নাই কিংবা ফোন দিয়ে কাজ করতে বলি নাই উনারা দাবি করতে পারবে না।"

তিনি আরও বলেন, "দীর্ঘদিন থেকে এই আন্দোলন করা হচ্ছে মাঠ সংস্কারের। অভ্যুত্থান পরবর্তীতে বর্তমান প্রশাসন আন্তরিকতা দেখালেও ইন্জিনিয়ারিং দপ্তর এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মন্থর গতি আমাদের আশাহত করছে। শারীরিক শিক্ষায় তালা, মানববন্ধন, ভিসি মহোদয়ের কাছে অনুরোধ সবকিছুই করা হইছে। কবে হবে মাঠ? উনারা কি ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মনের কথা বুঝে না? অবিলম্বে মাঠের কাজ তরান্বিত করতে হবে। নয়তো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে আমাদের।"

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাজমুল হাসান বলেন, "আমরা কয়েকদিন আগে কন্ট্রাক্টর, ছাত্র প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সকলে বসেছি। কাজ দ্রুত করার জন্য আমরা বারবারই বলছি। কাজের বিলম্ব হওয়ার কারণ হলো কন্ট্রাক্টর ঠিকমতো কাজ করেনা। এর আগের কন্ট্রাক্টরেরতো বিলও আটকে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ২ মাস আগে নতুন কন্ট্রাক্টরকে কাজ দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ে কাজ করবে বলেছে।"

জানা গেছে মাঠ সংস্কারের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে ওয়াক ওয়ে, সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ ও রাস্তার কাজে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে থেকে মাঠ সংস্কারের জন্য যতগুলো টাকা লাগবে তা খরচ করতে পারবে।

প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মোফাসিরুল ইসলাম বলেন, "আমরা ওদেরকে (কন্ট্রাক্টর) বলছিলাম সাদা বালু ও  লাল বালু নিয়ে আসবে। এরপর মিক্সার হবে। এরপর একপাশ থেকে বালুগুলো বিছিয়ে আসবে। বিছানোর পরে ঘাস বিছানো হবে। তবে আশেপাশে লাল বালুর কোনো সোর্স নাই। লাল বালু আসছে পঞ্চগড় থেকে। লাল বালু ও সাদা বালু মিক্সিং করতে ২ সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। এরপর পানি দিয়ে ভেজাতে হবে ২ মাস। তবে কোনো সমস্যা না হলে ১ মাসের মধ্যে বালু ফেলানো সম্ভব।"

প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, "লাল বালু ও সাদা বালু মিক্সিং-এ ১ মাস সময় লাগবে।"

এর আগেও কয়েক ধাপে বালু ফেলা হয়েছে। তবে সেগুলোর ছিলনা তেমন কোনো পরিকল্পনা। অপরিকল্পিতভাবে বালু ফেলার কারণেই এবং পূর্বের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীর গতির কারণেই মাঠের এই বেহাল দশা। এছাড়া আগের ঠিকাদারের ড্রেনের কাজের ক্ষেত্রেও দুই নম্বর ইটের ব্যবহার করার সময়ও ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

আগে অপরিকল্পিতভাবে বালু ফেলার সাথে ইন্জিনিয়ারিং দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা প্রশ্নে মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, "প্রথমে যে কাজগুলো হয়েছে সেগুলো এক্সপার্ট ওপিনিয়ন ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে বিকেএসপির (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) এক্সপার্টের পরিকল্পনা মাফিক কাজ হচ্ছে। এটা আগে থেকে করলে এখন আর কাজ করা লাগতো না। এর আগে মাটির টপ লেয়ারে যে ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো এক্সপার্ট ওপিনিয়ন ছাড়া হয়েছে। যার কারণে ঘাস গোঁজানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন একটিভিটিসে সমস্যা হয়েছে।"

জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৯০ মিনি ট্রাক বালু ফেলানো হয়েছে। এরপরেও পরিপূর্ণভাবে মাঠের কাজ শেষ করা যায়নি। মাঠটি দীর্ঘ সময় পড়ে থাকার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

তবে দুই লেয়ারের মধ্যে প্রথম লেয়ারের কাজ শেষের পর দ্বিতীয় লেয়ারের কাজ শুরুর বিষয় উল্লেখ করে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাহাত হাসান দিদার বলেন, "এখন ডিজাইন অনুযায়ী শেষ লেয়ারের কাজ চলছে। আমরা বিকেএসপিতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রথমদিকে কাজের ক্ষেত্রে বিকেএসপির পরামর্শ নেওয়া হয়নি। পরামর্শ নেওয়া হলে হয়তো টাকা বেঁচে যেত। তবে আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না। আর প্রথমদিকে যে ঠিকাদার কাজ করেছে সে ছিল ড্রেনের ঠিকাদার। তাকে জরুরি কারণে কাজ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান ঠিকাদারদের মতে বালু ফেলতে ১ মাসের মতো সময় লাগবে। ফিল্ড রেডি হয়ে যাবে। তবে এরপর বিকেএসপির পরামর্শ মতে ঘাস লাগাতে হবে।"

তবে মাঠের কাজ শেষ করতে বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুবু এন্টারপ্রাইজ-এর কতদিন সময় লাগবে তা জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুরাদ মাহবুবকে ফোন দেওয়া হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠটি একসময় সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ সুন্দর একটি মাঠ ছিল বলে শিক্ষার্থীদের দাবি। সংস্কারের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এমন বেহাল অবস্থা দেখে আশাহত শিক্ষার্থীরা। খেলার জন্য উপযুক্ত ও সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ মাঠ দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য (০)





image

‎এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে: শিক্ষা উ...

নিউজ ডেস্কঃ এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর যেসব শিক্ষক ক্লাস ...

image

এমরেল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা এসটিইএম অলিম্পিয়াড

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার অন্যতম সেরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এমরেল্ড ইন্টারন...

image

র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় পবিপ্রবির তিন শিক্ষার্থী বহিষ্কার ‎

পবিপ্রবি প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্...

image

‎জকসু নির্বাচনের জন্য পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন ‎

নিউজ ডেস্কঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ন...

image

ঢাকায় আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

নিউজ ডেস্কঃ রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের স...

  • company_logo