নিউজ ডেস্ক : ভারতের কুখ্যাত সন্ত্রাসী লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং কানাডায় একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার এ চক্রের সদস্যরা অ্যাবটসফোর্ডের ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক কানাডীয় শিল্পপতিকে হত্যা এবং এক পাঞ্জাবি গায়কের বাড়িতে গুলিবর্ষণের দায় স্বীকার করেছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
রাজস্থান পুলিশ যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় এই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য জগদীপ সিং ওরফে জগ্গাকে গ্রেফতারের ঠিক এক দিন পরেই এই দুটি ঘটনা সম্পর্কে জানা গেল।শিল্পপতিকে হত্যা
বিষ্ণোইয়ের সন্ত্রাসী দলের সদস্য গোল্ডি ঢিলোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি দর্শন সিং সাহাসিকে তারাই হত্যা করেছে।
বিষ্ণোইয়ের সন্ত্রাসী দলের দাবি, ৬৮ বছর বয়সি সাহাসি একটি বড় মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিষ্ণোই গ্যাং তার কাছে অর্থ দাবি করেছিল। কিন্তু তিনি অর্থ না দেওয়ায় তারা তাকে খুন করে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার সকালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যাবটসফোর্ডে নিজের বাড়ির বাইরে সাহাসিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাড়ির বাইরে সড়কের পাশে দাঁড়ানো সাহাসির গাড়ির কাছে সন্দেহভাজন খুনি তার অপেক্ষায় ওত পেতেছিল।
৬৮ বছর বয়সি শিল্পপতি সাহাসি তাঁর গাড়িতে উঠতেই খুনি তাঁকে নিশানা করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহাসিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
এ ঘটনার সময় সতর্কতা হিসেবে কাছাকাছি থাকা তিনটি স্কুলকে ‘শেল্টার-ইন-প্লেস’ প্রোটোকলের আওতায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়নি বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
১৯৯১ সালে সাহাসি কানাডায় যান
সাহাসি ছিলেন বিখ্যাত টেক্সটাইল রিসাইক্লিং কোম্পানি ক্যানাম ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট।
১৯৯১ সালে সাহাসি কানাডায় পাড়ি জমান। প্রথম দিকে তিনি সেখানে ছোটখাটো কাজ করতেন। পরে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত একটি টেক্সটাইল রিসাইক্লিং ইউনিটের একাংশ কিনে নেন। সেটিকে তিনি বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেন।
সাহাসি কেবল একজন সফল শিল্পপতিই ছিলেন না, একজন সমাজসেবীও ছিলেন। তাঁর মৃত্যু অ্যাবটসফোর্ড এবং কানাডার পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের মধ্যে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
অনেক কমিউনিটি নেতা এই ঘটনাটিকে কানাডার ভারতীয় অভিবাসীদের নিরাপত্তার জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং পুলিশের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গায়কের বাড়িতে গুলি
লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের দ্বিতীয় অপরাধটি হলো পাঞ্জাবি গায়ক চান্নি নাট্টানের বাড়ির বাইরে গুলি চালানো।
সন্ত্রাসী দলের সদস্য ঢিলোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে লিখেছে, নাট্টান গায়ক সর্দার খেরার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এই গুলি চালানো হয়।
ঢিলোঁ জানিয়েছে, নাট্টানের সঙ্গে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তবে তারা সতর্ক করে দিয়েছে, খেরার সঙ্গে কাজ করা যেকোনো গায়ক তাদের ক্ষতির জন্য নিজেদেরই দায়ী থাকবে।
লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং আসলে কী
কানাডা সরকারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী কাজ করা ৭০০ জনের বেশি শুটারের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।
এই গ্যাংটি র্যাপার এবং রাজনীতিবিদ সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যা, বলিউড অভিনেতা সালমান খানকে হুমকি দেওয়া এবং খালিস্তানপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি হাই প্রোফাইল মামলার সঙ্গে যুক্ত।
মন্তব্য (০)