
পাবনা প্রতিনিধি : জাঁকজমকপূর্ণ ও উৎসবমূখরভাবে পাবনা সদরের ভাঁড়ারায় ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ লোকসঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় মাতলেন ইউনিয়নবাসী। শুক্রবার (০৩ অক্টোবর) রাতে ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খানের আয়োজনে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খানের সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ওসমান গনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব পাবনার গর্বিত সন্তান আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক।
তিনি বলেন, লোকগান আমাদের এক অনন্য সম্পদ। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে লোকগানকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ‘এসব লোকগানের তাৎপর্য অসাধারণ। এ গানেরই একটি ধারা বাউল গান, যা ইউনেস্কোর স্বীকৃতিও পেয়েছে। তাই সময় এসেছে এ গানগুলোর পরম্পরাকে আমাদের মাঝে ধারণ করার। ’ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গ্রামের সকল মানুষের মধ্যে এসব গানের ঐতিহ্য জাগ্রত করতে হবে। আমিও সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লোকসঙ্গীত ফিরিয়ে আনতে যে যে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন আছে সেসব বিষয় তুলে ধরা হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নেওয়ার পর শুধু অবকাঠামো পেয়েছি। এরপর নতুন সাজে সাজিয়েছি। একদম পরিত্যক্ত গোডাউনে পরিনত হয়েছিল। জনমানুষশূন্য নির্জন জায়গা হয়েছিল। এখন পরিষদের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রাম অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েরা যেন আনন্দের সঙ্গে বড় হয়ে উঠতে পারে। যাতে মাদক ও নানা অপরাধের দিকে ঝুঁকে না যায় সেদিকে বিবেচনা করে। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, গত দুদিন আগেও আমার উদ্যোগে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিবারি খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে শতশত লোকের সমাগম হয়েছিল। সামনে ইউনিয়নব্যাপী হাডুডু খেলার আয়োজন করা হবে। যাতে করে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পুনরায় আপন গতিতে ফিরে আসে। সন্ত্রাসীদের অবয়ারণ্য খ্যাত ভাঁড়ারাকে আর চিনতে হবে না লোকজন। এখন সবচেয়ে শান্তিময় ইউনিয়ন আমাদের ইউনিয়ন। নির্ভিঘ্নে কোন হয়রানি ছাড়াই সেবা দিতে নিচ্ছে জনগণ। বর্তমান জনগণও আমাদের সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইউনিয়নকে মডেলে পরিনত করতে চাই। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বর্তমানে সেবার দিক দিয়ে এগিয়ে, আবার শান্তির দিক দিয়েও এগিয়ে আমরা। এখানে কোন অশ্লীলতা, জুয়া ও অপরাধমূলক কাজ চলবে না।
স্বাগত বক্তব্যের পর সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে শুরু লোকসঙ্গীত আয়োজনের মূল আসর। এ সময় গান পরিবেশন করেন লোকগানের বিশিষ্ট শিল্পীরা। প্রধান অতিথি আবুল কাশেম মো: ফজলুল হকও গান পরিবেশন করেন। এসময় তিনি গানেরস্থল মুখর করে তোলেন।
এদিকে লোকসঙ্গীত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিল। হাজারো নারী পু্রুষদের বসার জন্য পৃথক পৃথক জায়গা করা হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে সব শ্রেণী পেশার মানুষ গান উপভোগ করেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো জনতার ঢল নামে।
লোকসঙ্গীত শুনতে আসা কয়েকজন বলেন, এসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। এখন সচারাচর দেখা যায় না। আমরা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষজনের বিনোদন দরকার আছে। এটার মাধ্যমে মনমানসিকতা ভালো থাকে। ছেলেপেলেরা মাদক বা অন্যায়কাজে লিপ্ত হয় না। বিনোদনের মধ্য দিয়েই যাতে আমাদের সন্তানরা গড়ে উঠতে পারে। চেয়ারম্যান সাহেব যেহেতু ঐতিহ্য ফিরে আনতে কাজ করছেন ধন্যবাদ জানান। আগামীতে মাঝেমধ্যেই সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল খালেক মিঠু, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আনিছুর রহমান, বিসিএস জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সুরুজ্জামান।
এছাড়াও অতিথি ছিলেন, দুবলিয়া হাজী জসিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ইংরেজী বিভাগীয় প্রধান রফিকুল ইসলাম হুদা, চর বলরামপুরের ছাত্রকল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাহিদুল হক, চর বলরামপুরের ছাত্র কল্যাণ ট্রাষ্টের সভাপতি ও বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক মোঃ ফয়েজ আহম্মেদ,ভাড়ারা আওরঙ্গবাদ হাফিজিয়া মাদরাসার সভাপতি মোঃ আলহাজ্ব সাদেক আলী বাবুল সরদার, কোলাদী গোরস্থান ও ঈদগাহ মাঠের সহসভাপতি মোজাহার আলী খান, এবি ব্যাংকের পাবনা শাখার সহকারী পরিচালক এম শরিফুল আরেফিন প্রমুখ। এছাড়াও ভাড়ারা, চরতারাপুর, সাদুল্লাপুর ও আতাইকুলা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য (০)