• লাইফস্টাইল

জরায়ু ক্যানসার: জেনে নিন কোন পরীক্ষা বাঁচাবে আপনার প্রাণ

  • লাইফস্টাইল

প্রতীকী ছবি

নিউজ ডেস্ক : বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসার রয়েছে যা খুবই ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক। যেমন— ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এবং এন্ডোমেট্রিয়াল বা জরায়ুর ক্যানসার। এ দুই ধরনের ক্যানসারের প্রকোপ আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। এর মূল কারণ হলো— রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ঠিক সময়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা না করা।

ক্যানসার এখনো প্রায় গোলকধাঁধা। শরীরের একেক জায়গার ক্যানসারের চরিত্র একেক রকম। ফলে তার চিকিৎসাও ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনার যে ক্যানসারই হয়েছে, তা অনেক সময় আপনার পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। ধরা যাক, দিনের পর দিন গ্যাসের ব্যথা হচ্ছে, ঋতুস্রাবের সময়ে ভারি রক্তপাত হচ্ছে এবং তলপেটেও অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। এমন দেখলে তা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। দোকান থেকে ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খেয়ে নেন। তাতে সাময়িক আরাম হলেও রোগ সারে না। যখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়, ততদিনে দেখা যায় ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। এমন কয়েক ধরনের ক্যানসার আছে, যা অতি ভয়াবহ ও বিপজ্জনক। 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কারণ লুকিয়ে থাকে শরীরেই। যেমন এক ব্যক্তি সারাজীবন ধূমপান করে গেলেন, তার ক্যানসার হলো না। অথচ যিনি সিগারেট ছুঁয়েও দেখেননি, সেই তিনি এ রোগের শিকার হলেন। এ রহস্যের বীজ বহুলাংশে বপন করা থাকে তার জিনে ও জীবনযাপনের পদ্ধতিতে। সে জন্যই আগে থেকে পরীক্ষা করানো জরুরি। যার পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে, অর্থাৎ স্তন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, প্রস্টেট বা কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন কেউ, তার আরও বেশি করে পরীক্ষা করানো উচিত। অথচ বেশিরভাগ নারীই এ ব্যাপারে সচেতন নয়, এমনটিই মনে করছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রোবটিক সার্জন সুব্রত দেবনাথ। 

পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস না থাকলেও বয়স ৩০ কিংবা ৪০ পেরিয়ে গেলে প্রত্যেক নারীরই কিছু স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো উচিত, যার মধ্যে পড়ছে আলট্রাসাউন্ড, আলট্রাসোনোগ্রাফি, ট্রান্সভ্যাজ়াইনাল আলট্রাসোনোগ্রাফি ইত্যাদি। 

৪৫ থেকে ৫২ বছর পর্যন্ত ‘মেনোপজাল এজ’ ধরা হয়। কোনো নারীর ৪৫ বছর বয়সের পর যদি ঋতুস্রাব এক বছর বন্ধ থাকে, তা হলে তাকে রজোনিবৃত্তি বলে ধরে নেওয়া হয়। রজোনিবৃত্তির পরও যদি ঋতুস্রাবের মতোই রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে সেটি স্বাভাবিক নয় বলেই জানান স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রোবোটিক সার্জন রূপস্রী দাশগুপ্ত। সে ক্ষেত্রে জরায়ুর ভেতরের স্তর পুরু হয়ে যেতে পারে, সেখানে সিস্ট বা টিউমার তৈরি হতে পারে। রজোনিবৃত্তির পর অনেকে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন। সে ক্ষেত্রে থেরাপি শুরু হওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত একটু-আধটু রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু মাস ছয়েক পরও যদি দেখা যায় যে রক্তপাত হচ্ছে, তাহলে সাবধান হতে হবে।

এখানেও ভুলভ্রান্তি হয়। জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ভেতরে যদি কোনো সিস্ট তৈরি হয়, তখন তা ক্যানসার ভেবে বসেন অনেকেই। অনেক সময় দেখা যায়, অ্যাট্রোপিক ভ্যাজাইনাইটিস বা অ্যাট্রোপিক এন্ডোমেট্রাইটিস হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জরায়ুর ভেতরের চামড়া পাতলা হয়ে গিয়ে প্রদাহ হয়। তা থেকেও রক্তপাত হতে পারে। 

জরায়ুর ক্যানসারের ক্ষেত্রে আবার কোমর, তলদেশে এক টানা ব্যথা চলতেই থাকে। রোগী অনুযায়ী ব্যথার মাত্রার তারতম্য দেখা যায়। অধিকাংশ নারীই ব্যথাটা অনুভব করেন কোমর ও নিতম্বের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। পায়ের ওপরের অংশেও ব্যথা হতে পারে। আবার কিছু নারীর ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ব্যথা হয়। সে ক্ষেত্রেও সাবধান হওয়া জরুরি। আর পরিবারে যদি ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, ওজন অতিরিক্ত হয়, হরমোনের থেরাপির জন্য ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খান, তাহলে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভালো।

যেসব পরীক্ষা করালে আগে থেকেই ধরা পড়বে ক্যানসার—

একটা বয়সের পর থেকে নারীদের রুটিন চেকআপ করা জরুরি। যদি ক্যানসার থেকে বাঁচতে হয়, তাহলে পরীক্ষা করাতেই হবে। রোগ একবার শরীরে চেপে বসলে, তার নিরাময়ের পথ কঠিন। ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় না, তবে তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। তাই যদি ক্যানসারের আশঙ্কাকেই নির্মূল করে দেওয়া যায়, তাহলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

চল্লিশের পর ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করিয়ে নেওয়া জরুরি। কারণ জরায়ুর মধ্যে কোনো গ্রোথ আছে কিনা, তার লাইনিং কতটা মোটা— এসব পরীক্ষা করে নিলে জানা যাবে ক্যানসার আছে কিনা।

আর ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান নিয়ে অনেক নারীই ভয় পান। যোনির ভেতর দিয়ে একটি প্রোব ঢোকানো হয়। তবে এ পদ্ধতি ব্যথাহীন। এমনভাবে পরীক্ষাটি করা হয়, যাতে সেই নারীর সঙ্কোচবোধ না হয় এবং যন্ত্রণাও কম হয়। এ পরীক্ষায় জরায়ু, ডিম্বাশয়ের ভেতরের সমস্যাগুলো আগে চিহ্নিত করা যায়।

আবার যাদের মেনোপোজ হয়নি, তাদের থেকে মেনোপোজ পর্ব পেরিয়ে যাওয়া নারীর জরায়ুর ভেতরের চামড়ার পুরুত্ব কম। পরীক্ষায় যদি সেই পুরুত্ব ৫ মিলিমিটারের কম আসে, তাহলে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু বেশি হলেই মুশকিল। তখন রোগনির্ণয়ের জন্য বাকি পরীক্ষা শুরু করতে হবে।

শুধু ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড নয়, আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সঙ্গে হিস্টেরোস্কপি ও বায়পসিও করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের যোনি দিয়ে এন্ডোস্কপি করার মতো ছোট ক্যামেরা ঢুকিয়ে সন্দেহজনক জায়গা থেকে বায়পসি স্যাম্পল নিতে হয়। রিপোর্ট তিন রকম আসতে পারে। একটা বিনাইন, যাতে ক্যানসার নেই। সে ক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। 

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হাইপারপ্লাশিয়া বা অন্য কারণ দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকতে পারে। 

তৃতীয় ক্ষেত্রে ক্যানসার ধরা পড়তে পারে। কী ধরনের ক্যানসার, তার উৎস কী, কোন স্টেজে রয়েছে তা দেখে সেই মতো অস্ত্রোপচার, রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও কিছু পদ্ধতি মেনে চলেন চিকিৎসকরা। 

অনেকেই মনে করেন যে, কম বয়সে জরায়ুর ভেতরে কোনো টিউমার বা সিস্ট হলে বায়োপসি করা ঠিক নয়। তাতে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে জরায়ুতে ছিদ্র করা হয় না। রোগীকে অজ্ঞান করে গোটা জরায়ুই বাইরে বার করে এনে সংরক্ষণ করে তাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সেরে নেন চিকিৎসকরা। এই পদ্ধতিতে ঝুঁকি অনেক কম ও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে না। 

 

মন্তব্য (০)





image

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন মুড়ি খান

নিউজ ডেস্ক : মুড়ি আমাদের কমবেশি সবার পছন্দ। আর মুড়ি শুধু বাংলাদেশ কিংবা ...

image

মিষ্টি দোকানের মত রসগোল্লা বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন খুব সহজে

নিউজ ডেস্ক : আমাদের সবার পছন্দ রসগোল্লা। যে কোনো অনুষ্ঠান কিংবা উৎসবে রস...

image

সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গেলেই বুক ধড়ফড়— এমন সমস্যা হলে যা...

নিউজ ডেস্ক : এখন সিঁড়ি বেয়ে পায়ে হেঁটে ওঠানামা করার অভ্যাস অনেকেরই নেই।...

image

ডায়েট সফট ড্রিংক স্ট্রোক-আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে তিনগুণ

নিউজ ডেস্ক : প্রতিদিন মাত্র এক ক্যান ডায়েট সোডা পান করাও স্ট্রোক বা আলঝে...

image

সন্তানের মুখে মুখে তর্কের স্বভাব পরিবর্তন আনতে ৫ পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক : আপনার সন্তান অনেক সময়েই বড়দের মুখে মুখে তর্ক করে থাকে। কড়...

  • company_logo