• লিড নিউজ
  • জাতীয়

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান: রাষ্ট্রদূত মুশফিক

  • Lead News
  • জাতীয়

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকে ইতালির একনায়ক মুসোলিনির কার্বন কপি বলে মন্তব্য করেছেন মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, ইতালিতে মুসোলিনিকে ঘিরে স্তাবক শ্রেণি তৈরি হয়েছিল, তাকে ভাবা হত সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে, সর্বেসর্বা, তিনি যাই ভাবেন তাই সেরা, তিনি যা বলেন সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। এই ব্যবস্থাটার হুবহু কার্বন কপি ছিল শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থা। মুসেলিনির ব্ল্যাক শার্ট বাহিনীর আদলে হাসিনা গড়ে তোলেন হেলমেট বাহিনী ছাত্রলীগ।

‎বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

‎পতিত ফ্যাসিবাদি দল আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন তারা ওপারে বসে সময় কেবল সময় কাটাচ্ছে আর বাইজি নাচাচ্ছে, তাহলে সেটা বড় ভুল। এর বাইরেও কিন্তু তারা ষড়যন্ত্রের ঝাল বুনছে। এই ষড়যন্ত্র বিস্তৃত হবে তখনি যখন আমাদের মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ, দ্বন্দ্ব আর অবিশ্বাস প্রসারিত হবে’।

‎পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনের কড়া সমালোচনা করে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘কেউ যদি মুসোলিনির বিরুদ্ধে কথা বলতো তাকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো অথবা তার জীবন চলে যেতে। বহু মানুষের জীবন গেছে। মুসোলিনি বিরোধীদের দমন করতে ব্ল্যাক শার্ট বাহিনী তৈরি করেছিলেন। তাদের কাজই ছিলে যারা মুসোলিনির বিরোধীতা করতো তাদের ধরে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতো। তার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবেনা, তিনি ছিলেন সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে, সর্বেসর্বা, তিনি যাই ভাবেন তাই সেরা, তিনি যা বলেন সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। এই ব্যবস্থাটার হুবহু কার্বন কপি ছিল শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থা। ব্ল্যাক শার্টের পরিবর্তে তিনি হেলমেট বাহিনী গঠন করলেন। সেই হেলমেট বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে মানুষের মুক্ত মতকে রুদ্ধ করলেন, মানুষের অধিকার কেড়ে নিলেন। সেই সঙ্গে কিছু স্তাবক শ্রেণি কথিত বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকও তিনি পেয়ে গেলেন, যারা তার দুঃশাসনের আবহ তৈরি করে দিয়েছিল। এই স্তাবক শ্রেণি তার আরাধনায় নিয়োজিত ছিল। এভাবে করে তিনি বাংলাদেশকে দেড় দশক ধরে শাসন করলেন।’

‎তিনি বলেন, ‘অনেকে ধারণা করেই নিয়েছিল যে বাংলাদেশ তার মুক্তি ফিরে পাবেনা। শেখ হাসিনা রানি সেজে দেশ শাসন করে যাবেন আর আমাদের তার বশ্যতা মেনে নিতে হবে। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে আমার দেশের কোমলমতি ছাত্ররা, স্কুল বয়সি ছাত্ররা, কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা, ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা। জীবন দিয়ে অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। আর তাদের সঙ্গে ছায়ার মতো যুক্ত হয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার বঞ্চিত হাসিনাবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে ঠিকে থাকা বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধী দলের অনেকেই রাজনীতি করতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন, অসংখ্য রাজনীতিবিদ গুমের শিকার হয়েছেন, অসংখ্য মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন হারিয়েছেন, অর্থ-বিত্ত হারিয়েছেন। এ রকম রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পেছনে ভ্যানগার্ড হিসেবে দাঁড়াল। ছাত্ররা ছিল লড়াইয়ের সম্মুখ সারিতে। ছাত্র-শিক্ষক-যুবক-মেহনতি মানুষ-গার্মেন্টস শ্রমিক-বিএনপি-জামায়াত-প্রগতিশীল দল, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হলো। শেখ হাসিনা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় ‘স্বামীর দেশে’ চলে গেলেন।’

‎জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘আমরা যে বিজয় অর্জন করলাম, তাতে তরুণ, যুবক, মেহনতি মানুষ, প্রায় ২ হাজার মানুষ রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। সরকারি বাহিনী এবং ছাত্রলীগের গুলিতে তাদের বুক বিদীর্ণ হয়েছে, রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আমি আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি তাদের যারা নিজেদের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে এই বিজয় এনে দিয়েছেন।’

‎এ বিজয় কারও একক বিজয় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো গোষ্ঠী কিংবা দলের বিজয় কিংবা গ্রুপের বিজয় নয়, এটি একটি সার্বজনীন বিজয়। এই আন্দোলনে সব ধরনের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, আমরা দেখেছি কীভাবে মায়েরা রাস্তায় নেমেছে, ছেলেদেরকে খাইয়ে দিয়েছে, পানি তুলে দিয়েছে, নিজের ছেলেকে মিছিলে পাঠিয়েছে, বাবারা তার ছেলের সঙ্গি হয়েছে। এই যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, সব রাজনৈতিক দল-মত, ওই একবিংশ শতাব্দির লেডি মুসোলিনির স্তাবক দলটি ছাড়া, সবাই এক মঞ্চে এসেছিলেন বলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়টি পেয়েছি।’

‎রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মনে রাখতে হবে আমাদের এই বিজয়টি যেন হাতছাড়া না হয়। আপনারা যদি মনে করেন তারা ওপারে বসে সময় কাটাচ্ছে আর বাইজি নাচাচ্ছে। সেটা কিন্তু না, তারা ষড়যন্ত্রের ঝাল বুনছে। এই ষড়যন্ত্র বিস্তৃত হবে তখনি যখন আমাদের মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ, দ্বন্দ্ব প্রসারিত হবে। তাদের আর কোনো স্থান নেই, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। আপসের মাধ্যমে লোক জড়ো করে তারা চাঁদাবাজি করছে, এটা তাদের চিরায়ত পেশা। ভারতের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে যে, হাসিনার সঙ্গে কথা বলার শর্তেও চাঁদাবাজি হচ্ছে।’

‎গণহত্যার বিচার দাবি করে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার যদি নিশ্চিত না করা হয়, খুনিদের বিচার যদি নিশ্চিত না করা হয় তাহলে আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। বাংলাদেশের মানুষ এটি সহ্য করবে না। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বিবিসি, আল-জাজিরা রিপোর্ট করেছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উঠে এসেছে- শেখ হাসিনা কীভাবে গুলির নির্দেশ দিচ্ছেন। ভাবা যায়! একটি রাষ্ট্রের প্রধান আসনে বসা একজন নারী নির্দেশ দিচ্ছেন গুলি করার। যে দেশের নিরীহ মানুষের ওপর, ছাত্রদের ওপর গুলির নির্দেশ দিতে পারে, তার চেয়ে ভয়াবহ, নৃশংস আর কী হতে পারে?’

‎সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্রদের, সাধারণ মানুষের, রাজনৈতিক দলগুলোর যে অর্জন এটি বৃথা হতে দেওয়া যাবেনা। আমাদের ব্যক্তি স্বার্থ, পছন্দ-অপছন্দ, দ্বিমত থাকতেই পারে, গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, সব বিষয়ে সব মানুষ একমত পোষণ করবে। মতের ভিন্নতা থাকবেই। মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। এটা যেন হিংসা বা বিদ্বেষে পরিণত না হয়। যে বাবা তার ছেলেকে হাত ধরে মিছিলে পাঠিয়েছেন তিনি কিন্তু সেই আগের দুঃশাসনের বাংলাদেশ ফেরত চাননা।’

‎তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তিন-তিনটি নির্বাচন চলে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। একটি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে- ভোট কী জিনিস, ভোট কেন্দ্র কী জিনিস তা তারা জানেনা। তাদের সেই ভোটের নিশ্চয়তা দেওয়া সবার দায়িত্ব।’

‎রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘সবাই মোটাদাগে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন বলে দেশে একটি অধিকারের আবহ বিরাজ করছে। যে যা ইচ্ছে বলতে পারছেন। যারা কয়দিন আগে শেখ হাসিনার পদলেহন করেছেন তারাও কিন্তু সুন্দর সুন্দর বাণী দিচ্ছেন, সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।’

‎তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে কী অবস্থায় পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে একাকার করে রেখে গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, কোনো সেন্সিবল মানুষ গভরনেন্সে নাই, তল্পিবাহকে পরিণত হয়েছে বিগত ১৫টি বছর, ফরেন কারেন্সি খালি করে দিয়েছে, বিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার তারা বিদেশে পাচার করেছে- এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যখন কোনো সরকার আসে সেটা সহজ কোনো কাজ নয়। এটা খুব কঠিন কাজ।’

‎রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘আমাদের অনেক কাজ বাকি। সব সেক্টরে রিফর্ম করতে হবে। আমলাতন্ত্রে রিফর্ম দরকার। যে আমলাতন্ত্র বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনাকে মুসোলিনি সাজিয়ে তারা কবিতা, গান লিখেছে, বই লিখেছে, তাদের কাজ নয় এসব। তারা মূর্তি বানিয়েছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে, এরা যেন ফ্রন্টলাইনে না থাকে, পলিসি মেকিংয়ে না থাকে।’

‎অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন দূতাবাসের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরিবেশন করা হয় দেশাত্মবোধক গান। হেড অব চ্যান্সেরি আব্দুল্লাহ আল ফরহাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য (০)





image

জুলাই আমাদের চেতনা, জুলাই আমাদের প্রেরণা: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্কঃ জুলাই আমাদের চেতনা, জুলাই আমাদের প্রেরণা বলে মন্...

image

ভবিষ্যৎ সরকারকে ‘জুলাই সনদ’ মেনেই চলতে হবে: জামায়াত

নিউজ ডেস্ক :  জামায়াতে ইসলামী বলেছে, অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ&rsqu...

image

জুলাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিস্ফোরণ, প্রতিবাদের প্রবল ...

নিউজ ডেস্ক : সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, জুলাই বৈষম্য...

image

যুক্তরাষ্ট্র কোনো শর্ত দেয়নি, শুল্ক চুক্তি সফল: প্রেস সচিব

নিউজ ডেস্কঃ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন...

image

দেশের তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস

নিউজ ডেস্কঃ দেশের তিনটি বিভাগে রোববার (২ আগস্ট) ভারী বৃষ্টি ...

  • company_logo