• লিড নিউজ
  • জাতীয়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা

  • Lead News
  • জাতীয়

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করেছিল আলোচিত সাহসী ওই দফাগুলো। 

‎দাবিগুলো ছিলোঃ

‎১. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে (শেখ হাসিনাকে) জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

‎২. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

‎৩. যেসব এলাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে।

‎৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।

‎৫. নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

‎৬. ছাত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটক ও হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।

‎৭. দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রসংসদ চালু করতে হবে।

‎৮. অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে।

‎৯. আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী যেন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

‎এই ৯ দফা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে জানিয়েছেন সেই দিনের বিশেষ স্মৃতি।

‎অন্তু মুজাহিদ বলেন, ‘কালবেলার সাবেক সহকর্মী (ইস্রাফিল ফরাজী) আমাকে সঙ্গে নিয়ে কাঁটাবনের একটি বহুতল ভবনে নিয়ে গেলেন। একটি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের রুম নম্বর ১২০৪ এ প্রবেশ করতেই সেখানে বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধিকে দেখলাম, যারা এক রুম থেকে আরেক রুমে ছোটাছুটি করছেন, কেউ ফোনে কথা বলছেন। পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম ৪-৫ জন মিলে ল্যাপটপে কিছু একটা লিখছেন। (পরে জানতে পারি ৯ দফা দাবির ড্রাফট প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে আবু সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহ সিবগা, মুতাসিম বিল্লাহ শাহেদী, এস এম ফরহাদ, মোসাদ্দেক ইবনে আলী মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। তবে তাদের পরিচয় পরে জেনেছি)। তাদের কেউ ফোনে ডিরেকশন দিচ্ছেন, আন্দোলনের মাঠে কোথায় পানি পৌঁছাতে হবে, কারা যেন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দিচ্ছেন। সবাইকে খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছিল। আবার কেউ যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরার আপডেট নিচ্ছেন। মনে হচ্ছিল যেন এটাই আন্দোলনের কন্ট্রোলরুম।’

‎তিনি বলেন, ‘এ সময় আমার ব্যাগে থাকা দুটি পেয়ারা ওই অফিসের এক জুনিয়রকে দিয়ে কেটে সবাইকে দিতে বললাম। এরইমধ্যে ৯ দফার ড্রাফট প্রস্তুত হলো। ইস্রাফিল ফরাজী ভাষাগত ভুলগুলো ঠিক করে আমাকে ওই ড্রাফটে বানান ভুল আছে কিনা সেটা দেখে কারেকশন করে দিতে বললেন। ওই ৯ দফা কার নামে যাবে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।শেষমেষ সিদ্ধান্ত হলো যে আব্দুল কাদের যেহেতু সেফ জোনে আছে, তার নামে দেওয়া হবে। এরপর আব্দুল কাদেরকে সেগুলো পড়ে শোনানো হলো। দু-একটি বিষয়ে তিনি সম্ভবত দ্বিমত পোষণ করছিলেন। (ফোনের এপাশের কথাবার্তায় যতটা বুঝেছি)। সেগুলো কারেকশন করে এক পর্যায়ে ড্রাফট চূড়ান্ত করা হলো। এরপর কাদেরকে ফোন করে জানানো হলো যে এই ৯ দফা তার নামে পাঠানো হবে এবং সংবাদকর্মীদের কাছে তার ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। তাকে বলে দেওয়া হলো মিডিয়া যদি ৯ দফার বিষয়ে জানতে চায় সে যেন বলে হ্যাঁ, ৯ দফায় আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

‎‘৯ দফা প্রস্তুত। কিন্তু মিডিয়াতে কীভাবে পৌঁছানো যায়, সেটা নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে গেলাম আমরা। রুমে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সফট কপি প্রিন্ট করতে হবে। বাইরে গোলাগুলি চলছে। কাঁটাবন বাটাসিগন্যাল এলাকা থমথমে। সিদ্ধান্ত হলো, আমরা এটা বাটন ফোন থেকে ম্যাসেজ দিবো, আর বাংলামোটর থেকে প্রিন্ট করিয়ে বিভিন্ন হাউজে পৌঁছে দিবো। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। আমরা ওই ভবনের নিচে এলাম। মেইন গেট বন্ধ। কলাপসিবল গেটে ডাবল তালা দেওয়া। বাইরে পুলিশ অ্যাকশন মুডে।আমি দারোয়ানকে রিকোয়েস্ট করায় তিনি গেট খুলবেনই না। পরে ঝাড়ি দিতেই বললো মামা সাবধানে যাইয়েন, পুলিশ কিন্তু গুলি করতাছে। আমি আগে বের হলাম। কালবেলার আইডি কার্ড হাতে নিয়ে। পিছনে ইসরাফিল ফরাজী, সিবগাতুল্লাহ, মোসাদ্দেকসহ কয়েকজন। আমি সবাইকে বললাম, আপনারা কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা আমাকে অনুসরণ করবেন। পুলিশকে যা বলাল আমি বলবো। সামনে পুলিশ ফুল অ্যাকশন মুডে আছে। প্রথম দুই সারির পুলিশ সড়কে শুয়ে রাইফেল তাক করে আছে। পিছনে এখন লাইন (সম্ভবত) হাঁটু গেড়ে বসে রাইফেল তাক করে আছে আর বাকিরা পিছনে দাঁড়িয়ে।’

‎এই সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা তাদের বাম পাশ দিয়ে অতিক্রম করছি। কাছাকাছি যেতেই একজন অফিসার ছুটে আসছেন, আমি কালবেলার আইডি কার্ড দূর থেকে দেখিয়ে বলছি, সাংবাদিক, আমরা সাংবাদিক। তখন তারা আমাদের ইশারা দিয়ে বললেন, দ্রুত এখান থেকে চলে যান। আমরা ডান পাশের গলি দিয়ে বাজারে পৌঁছে গেলাম। এরপর মোসাদ্দেক ও এবি জুবায়েরসহ ৩ জনকে রিকশা ঠিক করে দিলাম। আমরা গিয়ে আবার মিলিত হলাম বাংলামোটর ইস্রাফিল ফরাজীর আরেকটি অফিসে। সেখান থেকে প্রিন্ট করা ৯ দফা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে ৪ জনকে বন্টন করে দেওয়া হলো। একটি বাইক সময় টিভি, বিজয় টিভি, বাংলাভিশন, ইটিভি, আরটিভি, এনটিভি, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ, মানবজমিন, ইত্তেফাক, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার যাবে। এবং অপর বাইকটি চ্যানেল২৪, দীপ্ত, চ্যানেল আই হয়ে ডিবিসি, বৈশাখী টেলিভিশন, যমুনা টিভি, যুগান্তর হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়াতে পৌঁছাবে।’

‎অন্তু মুজাহিদ বলেন, ‘অবশ্য ওই ভবনে থাকতেই আমরা কোন কোন মিডিয়ার রিপোর্টারের নম্বর আমার কাছে আছে তার তালিকা করেছিলাম এবং তাদের নম্বরে ম্যাসেজ করে ৯ দফা পৌঁছেছিলাম। এমনকি ওভার শিওর হওয়ার জন্য কাউকে কাউকে ফোনও দিয়েছি। বাংলা ভিশনের সাংবাদিক সাবেক সহকর্মী কেফায়েত শাকিল। তাকেও ফোন করে জানিয়েছিলাম ৯ দফা লাগবে কিনা, কিংবা পেয়েছেন কিনা?’

‎তিনি বলেন,‘বৃষ্টি পড়ছে। ৯ দফা আর ইস্রাফিল ফরাজীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম এখন টিভির কার্যালয় টিকাটুলির দিকে। পথে পথে বিভীষিকা। চারপাশে সংঘর্ষ বাধে বাধে অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাহারায় কড়া সেনা নিরাপত্তা মতিঝিলের আশেপাশের এলাকায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও কাজ হচ্ছে না। পরে দায়িত্বরত কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলে রিকোয়েস্ট করে মতিঝিল থেকে সামনে এগোলাম। সম্ভবত উটের খামারের পাশ দিয়ে। এবার বের হতে আবার চেকপোস্ট। সেনাবাহিনী আটকে দিলেন। পরে তাকেও আরেক দফা বুঝিয়ে এখন টিভির সামনে পৌঁছালাম। পার্কিংয়ে বাইক রেখে বেশ কিছু সময় মাহমুদ রাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো।’

‎তিনি আরও বলেন, ‘৯ দফা যাতে এখন টিভির পাশাপাশি তার পরিচিত সাংবাদিকদের কাছেও যেন তিনি পৌঁছে দেন সেই রিকোয়েস্টও করা হয়। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে পৌঁছালাম আমার কর্মস্থল কালবেলায়। সফট কপি আরও আগেই কালবেলার অনলাইন এডিটর পলাশ মাহমুদ, অনলাইন শিফট ইনচার্জ আবু আজাদ ও হার্ড কপি কালবেলার সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুল ইসলামের কাছেও পৌঁছানো হলো। এভাবেই ৯ দফা চোখের সামনে লেখা হলো, নিজ হাতে বানান কারেকশন করলাম, নিজের ডিসকভার ১০০ সিসি বাইকটাতে করে মিডিয়াতে পৌঁছে দিলাম। এরপরও অনেকে ভুল তথ্য উপস্থাপন, মিথ্যাচার করেছেন। আমরা চুপ করে আছি মানেই এই না যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যে কেউ তামাশা করে যাবে আর ছাত্রজনতা চুপ করে বসে থাকবে।’

‎সাহসী এই সাংবাদিক বলেন, ‘সেদিন পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আপোষহীন থেকে আন্দোলনের পক্ষে কাজ করে গেছি। আবার যদি দেশের ও দেশের মানুষের যৌক্তিক আন্দোলনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয় সেটার জন্যও দ্বিধা করবো না। জুলাই এ দেশের প্রত্যেকটি সংক্ষুব্ধ মানুষের, দেশপ্রেমিক জনতার, ক্ষেতমজুর, রেমিটেন্স যোদ্ধা, পোশাক-শ্রমিক, কল-কারখানা শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমিক, কৃষকের, ছাত্র-জনতার, পুলিশ, সরকারি চাকরিজীবীদের সবার। তাই, গণমানুষের লাল জুলাইকে কাটাছেঁড়া করা থেকে বিরত থাকুন, সকল স্টেককে প্রাপ্ত সন্মান দিন, জুলাই বেচাবিক্রি বন্ধ করুন, জুলাই হোক সম্মানের, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার।’

মন্তব্য (০)





image

জুলাই আমাদের চেতনা, জুলাই আমাদের প্রেরণা: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্কঃ জুলাই আমাদের চেতনা, জুলাই আমাদের প্রেরণা বলে মন্...

image

ভবিষ্যৎ সরকারকে ‘জুলাই সনদ’ মেনেই চলতে হবে: জামায়াত

নিউজ ডেস্ক :  জামায়াতে ইসলামী বলেছে, অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ&rsqu...

image

জুলাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিস্ফোরণ, প্রতিবাদের প্রবল ...

নিউজ ডেস্ক : সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, জুলাই বৈষম্য...

image

যুক্তরাষ্ট্র কোনো শর্ত দেয়নি, শুল্ক চুক্তি সফল: প্রেস সচিব

নিউজ ডেস্কঃ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন...

image

দেশের তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস

নিউজ ডেস্কঃ দেশের তিনটি বিভাগে রোববার (২ আগস্ট) ভারী বৃষ্টি ...

  • company_logo