
নিউজ ডেস্কঃ মানিকগঞ্জের সিংগাইরে হত্যা মামলা এবং হরিরামপুরে হামলা, মারধর ও ভাঙচুরসহ দুই মামলায় মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর ও হরিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালত কার্যক্রম শেষে প্রিজনভ্যানে নেয়ার সময় বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীরা তাকে উদ্দেশ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল সাড়ে দশটায় মানিকগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল আদালত-১ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুন নূর সিংগাইর উপজেলার হত্যা মামলার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর বেলা ১১ টায় চীফ জুডিশিয়াল আদালত-৩ এর বিচারক আইভি আক্তার হরিরামপুর থানার হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের মামলায় ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এদিন সকাল সাড়ে আটটায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মামলার শুনানির জন্য মানিকগঞ্জ আদালতে আনা হয় মমতাজকে।
আসামি মমতাজকে আদালতে উঠানোর সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রিমান্ড শুনানি শেষে প্রিজনভ্যানে তুলার সময় আসামি মমতাজের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে।
কোর্ট ওসি আবুল খায়ের জানান, ২০১৩ সালে সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় মমতাজকে তিন নম্বর আসামি করে ২০২৪ সালে ২৫ অক্টোবর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের মো. মজনু মোল্লা বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর তার নির্বাচনী এলাকা হরিরামপুর থানায় হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা রয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মামলাটি দায়ের করেন।
ওসি আরও জানান, বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি আদালতে রিমান্ড শুনানি হয়। এতে একটি আদালতে দুই দিন ও অন্য আদালতে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। আসামিকে গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৩ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ফোক সম্রাজ্ঞীর সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন জানান। আর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে চারদিনের রিমান্ড দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা।
এর আগে গত ১২ মে দিবাগত পৌন ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মমতাজকে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভুক্তভোগী মো. সাগর অংশ নেন। সেদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এতে ভুক্তভোগী সাগরের বুকে গুলি লেগে তার শরীরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। পরে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহতের মা মোসা. বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। আর ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার ৪৯ নং এজাহারনামীয় আসামি মমতাজ।
প্রসঙ্গত, মমতাজ বেগম ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য হয়ে ওই বছরই সংরক্ষিত নারী আসনে নবম জাতীয় সংসদের সদস্য মনোনীত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর ও হরিরামপুর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে পরাজিত হন।
বর্তমানে তিনি সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার সৎ ছেলে সিংগাইর পৌরসভার মেয়র এবং ভাগনে শহিদুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মমতাজ বেগম সংসদে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অরুচিকর বক্তব্য এবং অধিবেশনে গান গেয়ে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন।
মন্তব্য (০)