
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ হাজার হাজার পাকিস্তানি ২০২৩ সালের ৯ মে রাস্তায় নেমে সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে বাদ যায়নি দেশটির সেনাবাহিনীর স্থাপনাও।
বিক্ষুব্ধ জনতা রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়াটার্স, লাহোরে থাকা শীর্ষ সেনা কমান্ডারের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর আরও একাধিক স্থাপনাতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
এই বিক্ষুব্ধ জনতা ছিল পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থক। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেতা ইমরান খানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে এমন কাজ করেন। দুর্নীতির মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল।
যদিও ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই বিক্ষোভ সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তাকে ব্যাপকভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিল। কারণ পাকিস্তানে ব্যাপক শক্তি ও প্রভাবশালী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সেনাবাহিনী।
ওই বিক্ষোভের ঠিক দুই বছর পর গত ১১ মে আবার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তবে এটি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছিল না। বরং বিজয় উল্লাস এবং সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারত সংঘাতে জড়ায়। এই সংঘাতে উভয়ই নিজেদের জয়ী দাবি করেছে। ১৯৭১ সালে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যেভাবে একে অপরের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। ঠিক গত সপ্তাহে একই চিত্র দেখা গেছে।
গত সপ্তাহের সংঘাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একটি ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পাল্টা জবাব দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তাদের সমর্থন বলা যেতে পারে পুনরুদ্ধার করেছে।
গালাপ পাকিস্তানের করা এক জরিপে বলা হয়েছে, ৫০০ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৬ শতাংশ মনে করেন ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের জয় হয়েছে। গত ১১ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়।
আল-জাজিরার সঙ্গে শেয়ার করা ওই জরিপে দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ মানুষ মনে করেন সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ছিল ‘খুবই ভাল’। আর ১ শতাংশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ৯২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের জয় হয়েছে।
গত ১১ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পাকিস্তানিরা রাস্তায় নেমে ঘোড়ার গাড়ি, মোটরসাইকেলে চড়ে হর্ণ বাড়িয়ে দেশাত্মবোধক গান গাইতে থাকেন। এছাড়া তারা জাতীয় পতাকা এবং সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বিভিন্ন পোস্টার হাতে নিয়ে বিজয় উল্লাস করেন। পোস্টার গুলোতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ছবি ছিল।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আসার পর পাকিস্তান সরকার ১০ মে কে ‘ন্যায় যুদ্ধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এটি ছিল ২০২৩ সালের ৯ মে-র সম্পূর্ণ বিপরীত এক বার্তা, যেদিন সরকার দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। কারণ সেদিন ইমরান খানের সমর্থকেরা সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার ওপর ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে ছিল।
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ছয় দিন পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে ‘সেনা ইতিহাসের এক স্বর্ণালী অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আরও পড়ুন:
এক বিবৃতিতে শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘এটি শুধু পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর বিজয় নয়, বরং স্বনির্ভর, গর্বিত এবং মর্যাদাসম্পন্ন পাকিস্তানি জাতিরও বিজয়। কারণ পুরো জাতি কাধে কাধ মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি জনগণের সমর্থনকে ভারতের বিরুদ্ধে চালানো বুনিয়ান মাসুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আরবিতে এর অর্থ সীসা গলিত দেয়াল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি, তিনিও তার আইনজীবীদের মাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সেনাবাহিনীর এখন সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন প্রয়োজন।
মন্তব্য (০)