
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ এখনো ৭২ এর সংবিধানে রয়ে গেছে। তাই ৭২ এর সংবিধানকে বাতিল করে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণ করতে হবে মন্তব্য করেছেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। একই সাথে তিনি বলেছেন সেই নতুন গঠন তন্ত্র হবে সাম্য মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার দাখিল করার জন্য। সাম্য, মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করা মানে হলো ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম বলেও জানান তিনি।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা কারিগরের আয়োজনে পঞ্চগড়র সরকারি অডিটোরিয়ামে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চোতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খা: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার আরো অনেক বলেন, সমাজ যখনি কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করে সেটা তখনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক উপলব্ধিকে সানিত করে। আর এটা যখনি সানিত হয় তখনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্য হিসেবে সেটা কাজ করে। এই দুটা করতে হলে মতবাদ থেকে আমাদের চিন্তা করতে শিখতে হবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে ভাবতে হবে।
দেশে বাঙালি জাতিবাদ নাই? কিন্তু আরেকটা জাতিবাদ আসছে। সেটা হচ্ছে ইসলামী জাতিবাদ। যারা মনে করে মুসলিম জাতি ছাড়া সকলেই আমার শত্রু। তাই বলবো ইসলামী জাতিবাদের কোন স্থান নেই। এই জাতিবাদের মধ্যে ঢুকলে আমরা বাঙ্গালী ও ইসলামী জাতিবাদের মধ্যে আমরা একটা গৃহযুদ্ধে পড়ে যাবো। তাই আমি আপনাদেরকে সতর্ক হতে বলছি। এই বয়সে সবাইকে সাবধান করে যাচ্ছি। দেশকে বিভক্ত করবেন না। ভাববেন না যে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা এখন নাই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় নাই- চলে গেছে তাই আমাদের বাঙ্গালি জাতিবাদ চলে গেছে। এটা ভুল ধারণা। তাই আমাদেরকে কথা বলতে হবে, আমাদের মতবাদ পরিত্যাগ করতে হবে। মতবাদ পরিত্যাগ করে আমাদের বুঝতে হবে যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমরা লড়াই করেছি। এই বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি সেই লড়াইয়ে যেটা পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের শুনেনি। তারা আমাদেরকে ৭১ এ ঘৃণ একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। একটা হত্যাকান্ড করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ৭১ কে যদি আমরা মুছে দিতে চাই এটা মারাত্বক ভুল করবো। এবং যদি মুছে দিতে না চাই, তাহলে মনে রাখতে হবে যে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি এটা আমার সংস্কৃতি। তাই আপনি যে পন্থির লোক হননা কেন। ৭১ নিয়ে কোন দেনদরবার চলবে না। ৭১ আমার ইতিহাসের অংশ। আমি বাংলা ভাষি, বাংলা আমার সংস্কৃতি এবং একি সঙ্গে ইসলাম আমার ধর্ম। যেমন আমাকে ইসলাম থেকে আপনারা বঞ্চিত করতে পারবে না। আমার বাংলা ভাষা ও আমার সংস্কৃতি থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। দয়া করে এই বিভাজন আর রাখবেন না। এই বিভাজন যদি রাখেন আমরা আরেকবার গৃহযুদ্ধের মধ্যে চলে যাবো। এই যুদ্ধে যদি জড়াতে চাই, তাহলে আমাকে শিক্ষা লাগবে স্বাধীনতা লাগবে। যারা অতিতে ভুল করেছে, তাদের ভুলটা যদি তারা স্বীকার করে। তাদের যদি অনুশোচনা আসে। এই ভুল যদি কাটিয়ে উঠতে চাই তাহলে মনে রাখতে হবে ৭১ এ আমরা ভুল করি নাই।ছাত্ররা যখন একটি নতুন ঘোষণা দিতে চেয়েছে, সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেন নাই ড. ইউনুস। এটা তিনি ঠিক করেন নাই। দেরি হবার আগেই আপনি (ড. ইউনুস) অবশ্যই যে ঘোষণা দেবার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন সেই ঘোষণার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিতে হবে।
আগামী দিনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব রয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কাজ করলে বিরোধ আর বিভাজন দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। তাই অপূর্ণতা আর বিরোধ মিমাংসা করে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যেতে হবে।
পরে একক বক্তৃতা শেষে উপস্থিত দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক- শিক্ষার্থী, পরিবেশ প্রেমী ও সাংস্কৃতিক কর্মী সহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শেষে প্রাণ, প্রকৃতি বিষয়ক ও যুদ্ধ বিরোধী গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করে নাট্যদল ভূমিজ ও কারিগর।
মন্তব্য (০)