• শিক্ষা

অতিথী পাখিদের বিচরণে মুখরিত জাবি’র ক্যাম্পাস

  • শিক্ষা
  • ১৬ জানুয়ারী, ২০২১ ১৩:০৮:৫৮

ছবিঃ সিএনআই

আশুলিয়া প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসে প্রায় ১০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আশুলিয়ার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, নেই ক্লাস পরীক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোও রয়েছে তালাবদ্ধ। মানুষের এই কোলাহলমুক্ত এমন শান্ত পরিবেশে বিচরণের সুযোগ করে নিয়েছে শীতের অতিথী পাখি। মেতে উঠেছে তারা। প্রকৃতিও বরণ করে নিয়েছে তাদেরকে। পানিতে লাল শাপলার মাঝে জলকেলিতে মেতে আছে এই অতিথী পাখিরা। যেন বিহঙ্গের মেলা বসেছে। একঝাঁক নামছে পানিতে তো আরেক ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে অন্যত্র। মনে হবে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাবি ক্যাম্পাসই তাদের আপন নীড়।

পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৫লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এরমধ্যে শীতপ্রধান অঞ্চলের অনেক পাখি প্রতিবছর ২২হাজার মাইল পথ অনায়সে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। আমাদের দেশে অতিথী পাখিরা অতটা পাড়ি না দিলেও তারা অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকে বেশীর ভাগ অতিথীর আগমন এই বাংলায়।

তাই প্রতিবছরের তুলনায় এবারে অসংখ্য অতিথী পাখি ভিড় জমিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো। তাদের কিচির-মিচির ডাকে মুখরিত গোটা ক্যাম্পাস। পাখির বিচরণে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। এখানকার জলাশয়গুলোতে যেন আপন সা¤্রজ্য গড়ে তুলেছে তারা। ওড়াওড়ি ও খুঁনসুটিতে দিন কাটছে পাখিদের। বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে শীতপ্রধান দেশ সাইব্রেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ দেশে। এ সময় হাজার-হাজার পরিযায়ী পাখি নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে।

দেশের যেসব এলাকায় এসব পরিযায়ী পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ স‚ত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সাল থেকে এখানকার জলাশয়গুলোতে অতিথী পাখি আসছে। এখন পর্যন্ত দেশী- বিদেশী ২০৪ প্রজাতির বিহঙ্গের দেখা মিলেছে ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশী ও ৭৮টি বিদেশী প্রজাতির। অতিথী পাখির কোলাহলে মুখরিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, মনপুরা এলাকা, সুইমিংপুল এলাকা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেক ও ট্রান্সপোর্ট চত্বরের লেকে অসংখ্য পাখির দেখা মেলে। এদের মধ্যে বেশীরভাগ পাখিই হাঁস প্রজাতির। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতাটুটি ও লাল গুরগুটি প্রভৃতি।

তবে অনেক বছর পর এবার সুইমিংপুল সংলগ্ন জয়পাড়া লেকে আফ্রিকান কম্বডাক পাখির দেখা পাওয়া গেছে। তবে পাখিদের মধ্যে বেশিরভাগই সরালি। তাদের মধ্যে ছোট সরালির সংখ্যাই বেশী। এছাড়া বড় সরালি, গার্গেনি, জিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস ইত্যাদি পাখি এখন পর্যন্ত লেকগুলোতে বেশী বিচরণ করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ পরিযায়ী পাখি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবছর পাখিমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে এবারে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সেই আয়োজন অনেকটাই অনিশ্চিত। তিনি আরো বলেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার করোনায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা না থাকায় পাখির সংখ্যা এবারে বেশী দেখা গেছে। আশা করছি এই পাখির সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo