
নিউজ ডেস্কঃ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রিভিউর করার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে তারা ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। বক্তারা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ডিআরইউ ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্নালিস্ট কমিউনিটির সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ভূঁইয়া (লোটন একরাম), ঢাকা মেইল ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল ও ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ।
আন্তর্জাতিক ফিনটেক কোম্পানি ‘নালা’র সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুম, মসিউর রহমান খান, ডিআরইউ’র সহসভাপতি গাজী আনোয়ার, মানি ট্রান্সফার অ্যাপ নালা’র হেড অব গ্রোথ মাহমুদুর হাসান, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দিদারুল আলম এবং সিনিয়র সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম।
মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক ভালো সুপারিশ রয়েছে। তবে যেসব জায়গায় অসংগতি আছে, সেগুলোর সমালোচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে ধারা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তা থাকা প্রয়োজন। ধর্মীয় কারণে অনেক ভায়োলেন্স তৈরি হয়, এসব ভায়োলেন্স বন্ধের জন্য শাস্তির বিধান থাকা জরুরি।
তিনি বলেন, ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতির সঙ্গে আমি একমত। এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। সম্পাদক ও প্রকাশকরা ইউনিয়নের পদে থাকলে তা নীতি-বিরুদ্ধ হবে, তাই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। সাংবাদিকদের অবশ্যই সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। কারণ অপসাংবাদিকতার কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও যোগ করেন, সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে এর দায়ভার মিডিয়া মালিককে নিতে হবে। প্রয়োজনে মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিবাদকে মব হিসেবে না দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনলাইন মিডিয়ার জন্য ১০–১৫ কোটি, পত্রিকার জন্য ২০ কোটি এবং টিভির জন্য ২০–২৫ কোটি টাকা সিকিউরিটি হিসেবে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে এই অর্থ সাংবাদিকদের বেতন–ভাতা প্রদানে ব্যবহার করা যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে আবু সালেহ আকন বলেন, আমাদের অধিকার আমাদেরকেই আদায় করতে হবে। বিপ্লবের পরেও মিডিয়ার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকরা এখনও মবের শিকার হচ্ছেন। ডিএফপির অনিয়মের কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে, অথচ সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ইউনিয়নের পাশাপাশি ডিআরইউ, প্রেস ক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে হবে। সারাদেশে ইউনিয়নের শাখা না থাকায় এসব সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রবীণ সাংবাদিকদের ভাতার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তাও তিনি উল্লেখ করেন।
ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, গণমাধ্যম কমিশন মূলত বিভিন্ন জেলায় পিকনিক করেছে। তাদের রিপোর্টে স্বচ্ছতা ও সত্যতার ঘাটতি রয়েছে। তাই রিপোর্ট রিভিউ হওয়া দরকার।
মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং পদধারী, তারা সাংবাদিক পরিচয় দিতে নৈতিকভাবে পারেন না।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনসহ সরকারের মিডিয়া বিষয়ক কমিটিতে ডিআরইউ’র প্রতিনিধি থাকতে হবে। নাহলে প্রকৃত সংস্কার হবে না। পাশাপাশি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন জরুরি।
রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ করা প্রয়োজন।
মসিউর রহমান খান বলেন, মিডিয়ার সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কোনো সরকার সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করেনি। মালিকরা বিনিয়োগ করছেন কেবল পুঁজির নিরাপত্তার জন্য।
লোটন একরাম বলেন, টিভি ও অনলাইনকে ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে হবে। টিভির টিআরপি এখন হাস্যকর, যেমনভাবে পত্রিকার সার্কুলেশন অযৌক্তিক।
হারুন জামিল বলেন, সাংবাদিকদের সপ্তাহে দুইদিন ছুটি দেওয়া জরুরি।
গাজী আনোয়ার বলেন, কমিশনের রিপোর্টে ‘আদিবাসী’ বা ‘উপজাতি’ শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। সবাই বাংলাদেশি। সাংবাদিক হত্যার বিচার ও নির্যাতন ঠেকাতে আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।
দিদারুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের আয়কর মালিকদের দেওয়া বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় রয়েছে, এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো সম্পর্কেও সুপারিশে বিস্তারিত উল্লেখ থাকা দরকার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাংবাদিকদের নিবন্ধন করে আইডি প্রদান, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন এবং ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ডিক্লারেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।
মন্তব্য (০)