• শিক্ষা
  • লিড নিউজ

শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়ছে মোবাইল গেমসের আসক্তি

  • শিক্ষা
  • লিড নিউজ
  • ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১৫:১৮:২৬

প্রতীকী ছবি

আশুলিয়া  প্রতিনিধিঃ বর্তমানে পাবজি থেকে ফ্রি-ফায়ার প্লেয়ার্স সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইলন গেম হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। ফ্রি-ফায়ার এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে কয়েকগুণ। মোবাইল এবং কম্পিউটার দুটোতেই খেলা যায় এই গেম। ফ্রি-ফায়ার এবং পাবজির কম্পিউটার ভার্সনের থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
 

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০সালের ১৭ই মার্চ থেকে স্কুল কলেজসহ সকল ধরনের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এপর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। ধাপের পর ধাপ ছুঁটি বেড়ে তা দীর্ঘ মেয়াদি ছুঁটিতে পরিণত হয়েছে। তাই এই সুযোগে আশুলিয়ার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ মেয়াদিভাবে মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতেকরে একদিকে যেমনি সময়ের অপব্যবহার একঘেয়েমি মানুষিকতা সৃষ্টি, লেখাপড়ায় অমনোযোগী, সামাজিক কর্মকান্ড থেকে দূরে সরে যাওয়া ও অর্থের অপচয়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে তারা। অন্যদিকে এই গেমে আসক্ত হওয়ায় মূলধারার খেলাধূলা থেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এরফলে কেড়ে নিচ্ছে প্রকৃত শৈশব ও কৈশর।  
 
সরেজমিনে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সের যুবকেরা চার-পাঁচজন বা ততধিক একত্রিত হয়ে গ্রুপ ভিত্তিক কেউ রাস্তার মোড়ে, কেউ চায়ের স্টলে আবার কেউ খোলা জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে এই গেমস খেলছে। এসময়ে এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে সে জানায়, স্কুল ছুঁটির কারণে গেমস খেলে টাইম পাস করছি। স্কুল খুললে তখনতো লেখা-পড়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো।
 
করোনায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ মেয়াদিভাবে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে একটু গাইড লাইন দেয়া দরকার এবং তারা কি করছে, কোথায় যাচ্ছে এই বন্ধের মধ্যে এগুলো একটু বেশী নজরে রাখার আহবান জানান শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ মোহসিন বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ মেয়াদি ছুঁটি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এক প্রকার অলস হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য অভিভাবকদেরকে এই ছুঁটি কালিন সময়ে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে একটু গাইড লাইন দেয়া উচিত এবং সেই সাথে তারা কোথা যাচ্ছে ও কার সাথে চলাফেরা করছে এদিকেও একটু নজর দেয়া উচিত। অন্যথায় তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ক্যারিয়ারে এই মোবাইল গেমের প্রভাব পড়তে পারে বলেও তিনি ধারণা করেন। অন্যদিকে আল-ক্বলম প্রিপারেটরী মডেল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, এই আসক্তিটা মাদকাসক্তির মতোই মারাত্মক একটা আসক্তি। এরফলে বাচ্চাদের সৃজণশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খেলাধূলাসহ অন্যান্য সৃজণশীল বিনোদনের প্রতি আস্তে-আস্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যারফলে তারা ধীরে-ধীরে মানুষিক অসুস্থ বা বিকারগস্ত হয়ে পরছে যা জাতির জন্য খুবই উদ্বেগ এর বিষয়। তাই অভিভাবকদের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বাচ্চাদের সৃজণশীল কাজের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। তাদেরকে বেশী-বেশী সময় দিতে হবে ও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। বিদ্যালয় খোলা থাকলে বাচ্চারা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থেকে সময় কাটায় ফলে এই সময়টা অন্য দিকে আসক্তি হয়ে পরার প্রবণতা কমে যায়।

অন্যান্য গেমের মতোই ফ্রি-ফায়ার এবং পাবজিও অনেক বেশি হিংস্র গেম। এবং এর ভয়াবহতা এতই বেশি যে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষিপ্রতা সৃষ্টি করে এই গেম। অত্যাধিক মাত্রায় হিংস্রতা থাকায় ১৩বছরের কম বয়সীদের জন্য এই গেম দুটি নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এবং পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিংস্র করে তুলতে পারে এই গেমে বলে ধারণা করেন সুশীল সমাজ।
 
এ অনলাইন গেমের প্রতি এতইটা আশক্ত বেড়েছে তারা অনলাইনে লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোবাইলে গেমের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে এভাবে অনলাইন গেম খেললে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সচেতন নাগরিক আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি মোঃ ইমাম হোসেন বলেন, আমি অনেক শিক্ষার্থীকে দেখি তারা ফ্রি-ফায়ার খেলছে। একদিকে তারা অনলাইনে ক্লাস করছে অন্যদিকে পাশাপাশি ফ্রি-ফায়ার গেমসও খেলছে। যারফলে ধীরে-ধীরে লেখা-পড়ার দিকে তাদের মনোনিবেশ পর্যায়ক্রমে কমে যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে এই গেমে তারা চরম আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। এই খেলায় যেমন সময়ের অপব্যবহার হচ্ছে তেমন দেশের অর্থ নেটের পিছনে অপচয়ও হচ্ছে। তাই শিক্ষার মান ধরে রাখতে এই  গেমটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
 
এ ধরনের আসক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গেমে আসক্তির কারণে কিশোররা পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুৎ হয়ে যাচ্ছে। খেলার এক পর্যায়ে এসে তারা উগ্র প্রকৃতির হয়ে যেতে পারে। কেবল শারীরিক ক্ষতির কারণই নয় এই গেম দুটি। সেই সাথে মানসিক রোগের কারণও হতে পারে এই গেম। শারীরিক মানসিক রোগের সাথে-সাথে ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেম একজন শিশু কিংবা কিশোরের উপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই গেম দুটো যেহেতু একটি জায়গাতেই আটকে থেকে খেলতে হয় সেহেতু এই গেম খেলা মানুষটি সামাজিকভাবে খুব বেশী সংযুক্ত থাকতে পারে না। আর এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সমাজের আচার-ব্যবহার থেকেও ধীরে-ধীরে দূরে সরে যেতে হয় সেই মানুষটিকে। সর্বোপরি একটা সময় একাকীত্ব বরণ করতে হয় তাদেরকে।
 
এছাড়া এই গেমটি অতিরিক্ত খেলার কারণে চোখের সমস্যাও হতে পারে। কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে বেশী সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর চোখের সমস্যার সাথে-সাথে ঘুমেরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সার্জন ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আযাদ বলেন, মোবাইল ও কম্পিউটারের স্কিনে দীর্ঘ মেয়াদিভাবে কাজ করার অভ্যাস করলে তাতে প্রাথমিকভাবে চোখ ও মাথা ব্যাথা করবে। আর এই ব্যাথা দীর্ঘ মেয়াদি হলে তখন চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসবে। তখন চশমা ব্যবহার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।

আধুনিক যুব-সমাজ আজ বেশীর ভাগই কোন না কোন নেশায় আশক্ত। আর সেই নেশাতে সর্বনাশ হচ্ছে সমাজের কখনও তা মাদকের কখনও তা মোবাইল গেমসে। বিভিন্ন নেশায় চরম আসক্তি হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মোবাইল গেমের আসক্তি থেকে ফেরাতে অভিভাবক-শিক্ষক ও সচেতন মহলের ঐক্যবদ্ধ একান্তই প্রয়োজন বলে মনে করছেন সর্বমহল।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo