• অর্থনীতি

সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহ নেই মিল মালিকদের

  • অর্থনীতি
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:৫৫:৪১

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক: সরকার নির্ধারিত ধান-চাল সংগ্রহ মূল্যের তুলনায় বর্তমান বাজারমূল্য বেশি। ফলে মিলাররা বাজার থেকে এ দুটি পণ্য ক্রয় করে সরকারের কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে প্রত্যাশা অনুযায়ী চুক্তিও হচ্ছে না। তাই চলমান আমন মৌসুমে (৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি) ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

কারণ সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৮ লাখ টন। কিন্তু ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির আওতায় চাল ১১ হাজার ৩১১ টন এবং গম ২৫৭ টন সংগ্রহ হয়েছে।

এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে মিলারদের অসহযোগিতা করার বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবহিত করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থ সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চালের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে লক্ষ্যে বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তবে সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারিভাবে প্রয়োজনে আরও ১০ লাখ টন চাল আমদানির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরী বলেন, উৎপাদন তথ্য সঠিক হলে চালের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই।

এখন মূল্য অস্বাভাবিক। অভিযোগ রয়েছে-মিলাররা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে সেটি করছে। এখন চাল আমদানি করা হলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে।

এতে মিলারদের সিন্ডিকেট ভাঙবে। তবে এটি সাময়িক ব্যবস্থা। সরকারকে মিলাররা যাতে সিন্ডিকেট করতে না পারে সেজন্য টেকসই বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এতে কৃষক উপকৃত হবেন।

এদিকে রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার মিলারদের অসহযোগিতা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, সরকার কারও হুমকিতে মাথা নত করে না।

মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপীড়ি করিনি আমরা। তারা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজনে আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে ক্রয় করব। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কেনা হবে।

পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে।

খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো বিশেষ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারের সংরক্ষণে মজুদ বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে এক লাখ টন চাল আমদানির জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি হবে। পাশাপাশি ভারত থেকে সরকার টু সরকার (জি টু জি) চাল আমদানির জন্য ইতোমধ্যে একটি নেগোসিয়েশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে দেড় লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করা হয়েছে।

ধান-চাল সংগ্রহের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়-চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ টন গম এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল সরকারিভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেখানে ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২ লাখ টন ধান, চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে।

কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারিভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ সিদ্ধ এবং ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ আতপ চালের চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।

প্রতিবেদনে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘বাজারে চালের মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। এ পরিস্থিতিতে মিলার/ব্যবসায়ী/ আড়তদার কেউ যাতে অবৈধভাবে মজুদ করে মূল্য পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করার জন্য মাঠপর্যায়ে খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত মূল্যে খাদ্যশস্য বিক্রয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট খাদ্যপণ্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৪ টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৪ টন এবং গম ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টন। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে চাল ও গম মিলে ১১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬২ টন।

ফলে অর্থবছর শেষ হতে অর্থাৎ আগামী জুন পর্যন্ত খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য প্রয়োজন চাল ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৪২ টন। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের মজুদ আছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৭ টন।

এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫১ টন এবং গম ২ লাখ ৭ হাজার ৯৮৬ টন। নীতিমালা অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে খাদ্যের নিট চাহিদা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫০ টন। এর মধ্যে চাল প্রয়োজন হবে ৮ লাখ টন এবং গম ২ লাখ টন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে আমনের ভরা মৌসুমেও চালের মূল্য কমছে না। প্রতিদিন বাড়ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে চাল আমদানি সহজ করতে শুল্কহার অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এতে মূল্য নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ৫ কোটি গরিব মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মিলাররাই ধান-চালের দাম বাড়াচ্ছেন। ৩২-৩৩ টাকার মোটা চাল ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে খুচরা বাজারে এদিন প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫১ টাকা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo