• স্বাস্থ্য

করোনাভাইরাসের আতঙ্ক আমাদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে

  • স্বাস্থ্য
  • ২০ আগস্ট, ২০২০ ১৪:৫৫:৩৪

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ জ্বরটা হঠাৎ করেই এলো। একদিন আগেই গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরেছি। গ্রামে কয়েকজনেরই জ্বর ছিল- লক্ষণসহ। আমাদের নিজেদের বাড়িতে যদিও সব ঠিকঠাকই ছিল। ঢাকায় ফিরে আসার পরদিন দুপুর পর্যন্তও সব ঠিকঠাক। অফিসে আমার রুমে বসে দস্তুরমতো কাজ করছি।

দুপুরের পর থেকে খারাপ লাগা শুরু হল। বিকাল না হতেই জ্বর এলো। অফিসের মেডিসিন বক্স থেকে নাপা খেয়ে বাসায় চলে এলাম। সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত জ্বরে আচ্ছন্ন!

পরদিনও জ্বর চলছে। বিকালে টের পেলাম ঘ্রাণশক্তি পুরোপুরি উধাও! নাকের ওপর গাদাখানিক আমার প্রিয় CK পারফিউম স্প্রে করেও কিচ্ছু ঘ্রাণ পেলাম না! বুঝলাম তিনি ধরেছেন। মানে COVID-19। খামোখা টেস্টের জন্য সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করে দিলাম। আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি ও লেবুর চা খাচ্ছি গেল দু’মাস ধরেই। ভাপও আগে থেকেই নিচ্ছি। দুটোরই পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম। সঙ্গে ভিটামিন-সি আর দুধ খাওয়ার পরিমাণ।

অক্সিমিটার আছে ঘরে। অক্সিজেনের কোনো ঝামেলা ছিল না। ৪ দিনের দিন থেকে জ্বর কমা শুরু হল। তবে প্রচণ্ড দুর্বল। ঘ্রাণশক্তি তখনও ফিরে আসেনি। এর ভেতর Napa ছাড়া আর কিছুই খাইনি।

এর ভেতর খবর পেলাম, বাবা-মা দু’জনই জ্বরাক্রান্ত। টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ। আমি পুরো সুস্থ না হয়েও আবার চলে গেলাম তাদের কাছে ফরিদপুরে। দু’জনই বয়স্ক। সঙ্গে ডায়াবেটিসের লম্বা ইতিহাসসহ আমার মা ক্যান্সার সার্ভাইভার। সুতরাং আশঙ্কাজনক হতে পারে। তবে দু’জনের কারোরই জ্বর, ঘ্রাণশক্তি আর স্বাদ চলে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো জটিলতা নেই। বাসায় রেখেই চিকিৎসা শুরু করলাম। সঙ্গে আমার নিজের হাতে ফুল নার্সিং। ফোনে ডক্টর সাজেস্ট করলেন-

* Napa/Napa Extra দিনে ৩ থেকে ৪ বার

* অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিক ১২ ঘণ্টা পরপর ৫ দিন

* জিংক ২০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ২টা

* আইভারমেকটিন ৬ মিগ্রা খালি পেটে ৩টি ট্যাবলেট একসঙ্গে মাত্র একদিন (৬০ কেজির বেশি শারীরিক ওজনের জন্য)

* প্রচুর ওরস্যালাইন

* গরম ভাপ আর আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি ও লেবুর চা বারবার।

৭-৮ দিন পর থেকে বাবা-মা দুজনেরই অবস্থার উন্নতি হওয়া শুরু হল। জ্বর কমল। অতি ধীরে ধীরে ঘ্রাণ ফেরত এলো। স্বাদও। তবে দু’জনেই প্রচণ্ড দুর্বল। সঙ্গে বয়সজনিত অন্যান্য শারীরিক জটিলতা তো আছেই। তবে ডাক্তারের মতে, ফাড়া কেটে গেছে। আর ভয় নেই।

ঢাকা ফিরে এসেছি তবে আগামী এক সপ্তাহ কমপ্লিট আইসোলেশনে থাকব। এ সপ্তাহ আমার প্রচুর বই, নেটফ্লিক্স আর ইউটিউবের সঙ্গে কাটবে।

প্রথমবারের আক্রমণে আমার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। তাই গেল একসপ্তাহে দুই কোভিড রোগীর Closest কন্ট্যাক্টে থাকা সত্ত্বেও আর আক্রান্ত হবো না। আর হলে হবো। এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমার যখন প্রথমবার হল তখনও একবিন্দু ভয় পাইনি।

শুয়ে শুয়ে ‘তারাপদ’ আর ‘শিবরাম’-এর হাসির গল্পগুলো পড়েছি। টুকটাক লেখালেখি করেছি। কোভিড জিনিসটা প্রচণ্ড ছোঁয়াচে তবে এত ভয়ের কিছু না। অন্তত বাংলাদেশে যে জেনেটিক ভার্সনটা এসেছে তা খুব বেশি ভয়ংকর না। সায়েন্টিফিক জেনেটিক বিশ্লেষণও তাই বলে।

কোভিড হলে আসলে আতঙ্কটাই মানুষের বেশি ক্ষতি করছে। ভয় পেয়ে গেলে ব্যাটা আরও পেয়ে বসবে। সাহস রাখুন। আপনার ইমিউনিটিকে স্ট্রং করুন। তাকে ফাইট করতে দিন। জ্বর হলে বা লক্ষণ দেখা দিলে টেস্টের পেছনে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করে দিন। চিকিৎসাটা দ্রুত শুরু করাটা জরুরি, টেস্টের রেজাল্ট পরে জানলেও হবে।

ইনশাল্লাহ জিতে আসবেন। আর যদি আতঙ্কিত হয়ে পরেন তবে ভাইরাসকে পেয়ে বসার সুযোগ করে দিলেন। শুনতে ট্রাম্পের মতো শোনালেও কোভিড আসলে Seasonal Viral Flu'র মতো একটি ব্যাপার। ফুসফুসে সংক্রমণ না হলে খুব বেশি ভয়ের কিছু নেই।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo