• মুক্তমত

তবুও স্বপ্ন দেখি

  • মুক্তমত
  • ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:৩৫:৫৮

তানভীরুল আরেফিন লিংকন: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সবার মনেই একটা সংশয় ছিলো। কখন এটা শুরু হবে, কিভাবে শুরু হবে, কারা এর পক্ষে-বিপক্ষে থাকবে, কি ধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে, পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে কিনা এই নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিলো। এর বাইরে রাসায়নিক ও জীবানু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়েও বিশ্ববাসী শংকিত ছিলো। সর্বোপরি এই ধরনের যুদ্ধে মানব প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছিল। বড় বড় পরাশক্তিগুলো তাদের নিজেদের রক্ষার ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাল্লা দিয়ে শক্তিশালী করে। তাছাড়া জীবাণু অস্ত্রের হুমকি মোকাবিলার জন্য বিশেষ ধরনের পোষাক-আশাক প্রশিক্ষণ, সবদিক দিয়েই প্রস্তুতি চলে। দেশের মোট বাজেটের বেশির ভাগই সামরিক খাতে চলে যায়।   কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল কোন গুলি ছোঁড়াছুড়ি ছাড়াই। একটি ভাইরাস-ই পুরো পৃথিবীকে যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই যুদ্ধে কোন অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই, নেই কোন দৃশ্যমান শত্রুপক্ষ। সবার একটাই শত্রু- "করোনাভাইরাস"। উন্নত বিশ্ব এটা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো। ইতোমধ্যে হলিউডে Contagion কিংবা Pandemic এর মতো মুভি তৈরি হয়েছে এইধরনের ভাইরাসকে কেন্দ্র করে। তাছাড়া সার্স কিংবা মার্স ভাইরাস এর অভিজ্ঞতার পর বিশ্ব জেনেছিল আরো মারাত্মক ভাইরাস আঘাত হানতে পারে। ২০১৫ সালে বিল গেটস ও এই ব্যপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু পরাশক্তিগুলো উন্মত্ত ছিলো মারণাস্ত্র বানানো কিংবা সিরিয়ায় বোমা ফেলাবার জন্য। শুধু উন্নত বিশ্বের দেশ নয় আমাদের আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক খাতে ব্যায় বাড়িয়ে চলছিল। অথচ দেশের শিক্ষা ও মানুষের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের তেমন কোন চিন্তাই করা হলো না। যার ফলে একটু ভালো চিকিৎসার জন্য আমাদেরকে বাইরে যেতে হয়। যদি পরাশক্তি গুলোর দিকে নজর দেই দেখবো যে, তারা যে অস্ত্রের ভান্ডার মজুদ করলো সেগুলো এই মুহূর্তে কোনো কাজেই আসলো না। ( যদিও এখনো বলা যায়না যতক্ষণ আমেরিকা চীন আক্রমণ করে বসে জীবাণু অস্ত্রের হামলার অজুহাতে)। সৈন্যদের যেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল নিজেদের দেশকে রক্ষা করার জন্য সেখানে ডাক্তাররা হয়ে গেলো "Front line ওয়ৃওর" আজ সবাই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হয়ে বসে রইল।   যে শহরগুলো, যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো, যে উপাসনালয়গুলোর কোন বিশ্রাম ছিলোনা আজকে সব যেন থমকে দাঁড়ালো। যে গোলাপি ডলফিনগুলো মানুষের ভয়ে তটের দিকে আসতে পারতোনা তারাই আজ সৈকতের কাছে এসে খেলা করছে। প্রকৃতি যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে। যেখানে আশংকা ছিল গোলাবারুদের ধোঁয়ায় বাতাস ভারী হয়ে উঠবে কিন্তু হলো উল্টো, আমরা যারা বিরামহীন চলতে থাকতাম তারা আজ থমকে দাঁড়ালাম।   আজ সব জরুরী কাজ ফেলে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হয়ে বসে রইলাম নিজেকে বাঁচানোর জন্য। আজ যুদ্ধ ট্যাংকগুলোকে, পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার গুলোকে কেমন হাস্যকর মনে হচ্ছে। বড় বড় ইমারত, বিনোদনকেন্দ্র, দামী গাড়ি, গয়নাগাটি, দামী পোষাক-আশাক, জাতীয় দিবস উদযাপন, নববর্ষ, পেশিশক্তির প্রয়োগ সব যেন এক নিমিষেই অনেক গৌণ হয়ে গেছে। দিনের পর দিন লকডাউনের ফলে মানুষের আয় উপার্জন, চাকরি হারানো, স্বজন হারানোর আশংকায় উৎকন্ঠায় দিন কাটছে। তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখি নতুন যুগের, নতুন সূর্যের। যেখানে থাকবেনা অস্ত্র নিয়ে অশুভ প্রতিযোগিতা। নতুন বিশ্ব হবে সাম্যের, মর্যাদার। নতুন বিশ্বের বাজেট হবে শিক্ষা খাতে, স্বাস্থ্য খাতে ও খাদ্য উৎপাদনে। নতুন বিশ্ব হবে শ্রমের বিশ্বায়নের। নতুন বিশ্ব হবে বাহুল্য পরিহার করার, সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থার। নতুন বিশ্ব হবে জনগণের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার। নতুন বিশ্ব হবে কল্যাণের। তানভীরুল আরেফিন লিংকন

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo