• শিক্ষা

ব্যায়ামাগারে ডেকে নিয়ে ২ ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগ

  • শিক্ষা
  • ১০ মার্চ, ২০২০ ১৬:৩১:০১

কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের সামনে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর এর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগেরই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশে তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। গত রবিবার রাত ৮ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের শিকার ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসাইন মাহী এবং একই বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন শুভ। মারধরের পর ওই দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা ইলাহীর বাড়িতে কুবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কিছু জুনিয়র শিক্ষার্থীকে নিয়ে যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন রেজার ভাইয়ের সাথে এলাকায় একটি ঝামেলা চলছে। জানা যায় ঝামেলাতে তারাও অংশগ্রহণ করেছিলো। তারা কয়েকটি বাড়িঘরেও হামলা চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে ওই দুই নেতাকে নিয়ে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারে বিচারে বসেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ অন্যান্য নেতারা। সেখানেই সভাপতি ও সম্পাদকের সামনে এলোপাথাড়ি মারধরের শিকার হন ওই দুই নেতা। মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতা মমিন শুভ মোবাইলে জানান, 'রেজা ভাইয়ের সাথে আমার আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক। সে সূত্রে তার বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি তার ভাইকে কে বা কারা মারধর করেছে। এসব শুনে আমরা চলে আসি। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর আমাকে পার্টি অফিসে (ব্যায়ামাগার) ডাকা হয়। আমি যাওয়ার সাথে সাথে আমার মাথায় পরপর কয়েকটি আঘাত করা হয়। আঘাতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।' কে বা কারা মারধর করেছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেখানে নজরুল হল সভাপতি ইমরান, একই হলের পলাশ, আশিক, দত্ত হলের সিফাত,সালমানসহ কয়েকজন ছিলো। তারাই চারদিক থেকে আমাকে মারধর করে।' তিনি আরো জানান, 'মারধরের পর আমাকে হল থেকে চলে যেতে বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অথচ আমি বঙ্গবন্ধু হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী।' মারধরের শিকার আরেক ছাত্রলীগ নেতা মাহীকে ফোন করা হলে তিনি জানান, 'আপনারা তো জানেনই সব। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাইনা।' এদিকে মারধরের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, 'তারা দুইজন ক্যাম্পাসের পাশেই এক গ্রামে গিয়ে প্রাক্তন সেক্রেটারির ভাইয়ের ঝামেলায় জড়িয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। এ কারণে জিমনেশিয়ামে বসে এটা নিয়ে আমরা সাংগঠনিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এক্ষেত্রে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।' সভাপতি-সম্পাদকের সামনে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, 'মূলত এই দুইজন এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের কিছু জুনিয়র শিক্ষার্থী রেজার গ্রাম বাতাইছড়ি এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে আমার কাছে খবর আসে। তাই তাদের ডেকেছিলাম। মানুষের বাড়িতে হামলা চালানো সংগঠন বহির্ভূত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ তাই তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেবো বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। এছাড়াও মমিনের কাছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাজারের ওপর স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে। এগুলো দেখে সব মিলিয়ে তার উপর ছেলেরা ক্ষিপ্ত ছিল। সেই জায়গা থেকে দু একজন হাত তুলছে গিয়েছে। আমরা তাদের নিবৃত করেছি। পাশাপাশি যেহেতু ছেলেরা তাদের উপর ক্ষিপ্ত তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের হলের বাইরে থাকতে বলেছি।' বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সাংগঠনিক কাজ নয়। এখানে শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ব্যায়াম করতে আসি৷ যেহেতু শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে পায় তাই শুধু ছাত্রলীগ নয় যে কোনো শিক্ষার্থী যে কোনো সমস্যায় আমাদের কাছে আসলে আমরা এখানে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সমাধানের চেষ্টা করি।' ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, 'আমরা এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি পেলে ব্যবস্থা নিবো।' ব্যায়ামাগারে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গতকাল কি হয়েছে আমি জানিনা। নির্দিষ্ট কোনো সংগঠনের ব্যাপারে বলছিনা। তবে সাধারণভাবে ছাত্র প্রতিনিধিরা যদি ব্যায়ামাগারে বসে শিক্ষার্থীদের ছোটোখাটো সমস্যার সমাধান করেন তবে তাতে আমি দোষের কিছু দেখিনা।'

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo